
অনলাইন জুয়া, পর্নোগ্রাফি ও অনৈতিক বিজ্ঞাপনে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা
অনলাইন জুয়া, পর্নোগ্রাফি ও অনৈতিক বিজ্ঞাপন প্রচার প্রতিরোধে সরকারের কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের জন্য জরুরি নির্দেশনাও জারি করা হয়েছে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মাদ জসিম উদ্দিন সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকার দেশের সাইবার স্পেসকে নিরাপদ, নৈতিক ও প্রজন্মবান্ধব রাখতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং কিছু ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় জুয়া, বেটিং ও পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন ও প্রোমোশনাল কনটেন্ট প্রচার করা হচ্ছে। এই ধরনের কার্যক্রম বাংলাদেশের সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২-এর পরিপন্থি।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর ধারা ২০(১) অনুযায়ী, সাইবার স্পেসে জুয়া বা বেটিং সম্পর্কিত পোর্টাল, অ্যাপস বা কনটেন্ট তৈরি, পরিচালনা, প্রচার, বিজ্ঞাপন প্রকাশ বা উৎসাহ প্রদান করা দণ্ডনীয় অপরাধ। একইভাবে, ধারা ২৫(১) অনুযায়ী, পর্নোগ্রাফি বা অনৈতিক কনটেন্ট প্রচার, প্রচারে সহায়তা বা প্রচারের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপন প্রকাশও অধ্যাদেশ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই ধরনের কার্যকলাপ তরুণ সমাজের নৈতিক বিকাশ, সামাজিক মূল্যবোধ ও পারিবারিক বন্ধনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং রাষ্ট্রীয় নৈতিক কাঠামোর জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। উপরোক্ত আইনি ভিত্তির আলোকে, সরকার ও জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি (এনসিএসএ) অনলাইন জুয়া, পর্নোগ্রাফি ও অনৈতিক বিজ্ঞাপন প্রচার প্রতিরোধে নিম্নলিখিত জরুরি নির্দেশনা প্রদান করছে।’
নির্দেশনাগুলো হলো-
দেশের সব পত্রিকা, অনলাইন পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার জন্য নির্দেশনা: বাংলাদেশের সকল পত্রিকা অনলাইন সংবাদপত্র, নিউজ পোর্টালসহ যেকোনও স্থানীয় এবং আঞ্চলিক মিডিয়া প্রতিষ্ঠান, ডিজিটাল বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্তৃপক্ষকে জানানো যাচ্ছে যে, তাদের ডিফল্ট সাইট/অ্যাপ্লিকেশন, ব্রাউজার-ভিত্তিক বিজ্ঞাপনের অংশবিশেষ (Ad Part) বা গুগল অ্যাডসেন্স ও অন্যান্য বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্মে বা কাস্টমাইজ করা বিজ্ঞাপন অংশে কোনোভাবেই পর্নোগ্রাফি, জুয়া বা গ্যাম্বলিং সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবেন না। এটি সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন, যা শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আওতায় পড়বে।
মিডিয়া সেলিব্রিটি, ইনফ্লুয়েন্সার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য নির্দেশনা: দেশের সকল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সেলিব্রিটি, ইনফ্লুয়েন্সার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের প্রতি আহ্বান জানানো যাচ্ছে যে, তারা যেন জুয়া, বেটিং, পর্নোগ্রাফি বা অনৈতিক কোনো পণ্য, সেবা বা ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন বা প্রোমোশনাল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। এ ধরণের বিজ্ঞাপন দেওয়া বা প্রচারে সহায়তা করা সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। জনস্বার্থে নৈতিক ও দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে একটি সুস্থ ডিজিটাল সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
দেশি ও বিদেশি ওয়েবসাইট/অ্যাপ্লিকেশনের জন্য নির্দেশনা: বাংলাদেশে পরিচালিত বা বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য কোনও দেশি বা বিদেশি ওয়েবসাইট, অ্যাপ্লিকেশন বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে জুয়া, বেটিং বা পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত কোনও কনটেন্ট, অ্যাড বা লিংক প্রচার বা প্রচারে সহায়তা করা যাবে না। জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি এ ধরনের কনটেন্ট মনিটরিং কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে এবং প্রয়োজনবোধে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট বা প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে ব্লকিং, জরিমানা বা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
মোবাইল কোম্পানি, আইএসপি, গুগল অ্যাডসেন্স, মেটা অ্যাড সহ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্মের জন্য নির্দেশনা: মোবাইল কোম্পানি, আইএসপি, গুগল অ্যাডসেন্স, মেটা অ্যাড সহ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্মগুলোকেও বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও নৈতিকতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্থানীয় আইন, পপ-আপ ব্লকিং ও ফিল্টারিং নীতি কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রতিষ্ঠানগুলোকে ওয়েবসাইট, পত্রিকা ও নিউজ পোর্টাল, অ্যাপ ইত্যাদি ডিফল্ড অ্যাডসেন্স-এ না চালিয়ে বরং কাস্টমাইজড করতে হবে যাতে জুয়া, পর্ণ, গ্যাম্বলিং এবং এতদসংক্রান্ত গেইমিং বিজ্ঞাপন বা পপ-আপ না আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলবে এবং প্রচলিত আইন ভঙ্গ করলে জনমত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট ব্লক করার বিষয় সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে এবং এব্যাপারে পাবলিক কমিউনিকেশন করা হবে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘সরকার মনে করে, একটি নৈতিক, নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে সরকারি সংস্থা, মিডিয়া, প্রযুক্তি কোম্পানি ও নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। কোনও নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান যদি অনলাইনে জুয়া, বেটিং বা পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন বা কনটেন্ট দেখতে পান, তাহলে অনুগ্রহপূর্বক [email protected] ঠিকানায় রিপোর্ট করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
বাংলাদেশ সরকার দেশের সাইবার স্পেসকে নিরাপদ, নৈতিক ও প্রজন্ম বান্ধব রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে এবিষয়ে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি (এনসিএসএ), জাতীয় টেলিযোগাযোগ পযবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) এবং বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যৌথভাবে কাজ করছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।