371678

বলিউডের তারকা থেকে সাধারণ নারী: দেরিতে গর্ভধারণ নিয়ে সচেতন বার্তা

ক্যাটরিনা কাইফের পর এবার ভারতী সিং দুজনেই চল্লিশের কোঠায় পা দিয়ে মাতৃত্বকে বরণ করছেন। বয়স বাড়ার পর সন্তান জন্মদানের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকেই আগ্রহ ও কৌতূহল প্রকাশ করছেন। তবে চিকিৎসকদের মতে, বয়সের শেষভাগে গর্ভধারণে যেমন বাড়তি যত্নের প্রয়োজন, তেমনই আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে অনেক নারীই এই বয়সেও সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারছেন। চিকিৎসকরা ৪১ বছর বয়সে এই গর্ভধারণকে “অ্যাডভান্সড ম্যাটারনাল এইজ” বা দেরিতে গর্ভধারণ হিসেবে দেখছেন।

দেরিতে গর্ভধারণ কতটা নিরাপদ: ভারতের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নীলম সুরি হিন্দুস্তান টাইমসে জানান, ৩৫ বছরের পর গর্ভধারণকে সাধারণত দেরিতে গর্ভধারণ বলা হয়। এই বয়সে মা ও সন্তানের জন্য কিছু বাড়তি ঝুঁকি থাকলেও, আজকের দিনে অনেক নারী সচেতন পরিকল্পনা ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সম্পূর্ণ সুস্থ গর্ভাবস্থা উপভোগ করছেন।

তিনি আরও বলেন, অনেক নারী ক্যারিয়ার, আর্থিক স্থিতি বা মানসিক প্রস্তুতির কারণে এখন দেরিতে সন্তান নেয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এটি একেবারেই অস্বাভাবিক কিছু নয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ও নিয়মিত চেকআপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেসব ঝুঁকি থাকতে পারে: ডা. সুরির মতে, ৩৫ বছরের পর গর্ভধারণে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও প্রি-এক্লাম্পসিয়া-এর ঝুঁকি কিছুটা বেড়ে যায়। এছাড়া, সিজারিয়ান ডেলিভারির প্রয়োজনও তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। তিনি বলেন, বয়সজনিত কারণে শিশুর ক্রোমোজোমজনিত সমস্যা যেমন ডাউন সিনড্রোম হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাছাড়া প্রিম্যাচিউর বার্থ বা কম ওজনের শিশুর জন্মও হতে পারে। তবে আধুনিক স্ক্রিনিং টেস্ট ও প্রি-নাটাল ডায়াগনস্টিকস এখন এসব ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে এনেছে।

দেরিতে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ

গর্ভধারণের আগে প্রস্তুতি : চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে শারীরিক অবস্থা ও পূর্ববর্তী রোগের ইতিহাস যাচাই করা উচিত।
নিয়মিত চেকআপ : গর্ভাবস্থার প্রতিটি ধাপে নিয়মিত পরীক্ষা করলে জটিলতা আগেই শনাক্ত করা সম্ভব।
সুস্থ জীবনযাপন : সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, হালকা ব্যায়াম, ও ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত জরুরি।
মানসিক সুস্থতা : পরিবার ও প্রিয়জনদের সহায়তা, মানসিক শান্তি ও ইতিবাচক মনোভাব গর্ভাবস্থাকে অনেক সহজ করে তোলে।
সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তির ভূমিকা

বলিউডের অনেক তারকারাই ৪০-এর পর মা হয়েছেন। এই তারকাদের অনেকেই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্য নেন। যেমন ফারাহ খান মা হয়েছেন এইভিএফ বা এআরটির মাধ্যমে। প্রসিদ্ধ আইভিএফ বিশেষজ্ঞ ডা. ইলা গুপ্তা জানিয়েছেন, ৩৫ বছরের পর প্রাকৃতিকভাবে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে যায়। তাই অনেকেই ডিম্বাণু সংরক্ষণ করে রাখছেন, যাতে পরবর্তীকালে বয়সজনিত ঝুঁকি এড়ানো যায়।

তিনি বলেন, দেরিতে গর্ভধারণে বাড়তি যত্ন, চিকিৎসকের ঘন ঘন ফলোআপ এবং মানসিক প্রস্তুতি খুবই দরকার। বিখ্যাত ব্যক্তিদের দেরিতে মাতৃত্ব গ্রহণের সিদ্ধান্ত সমাজে ইতিবাচক বার্তা দেয়, কারণ এতে দেরিতে মা হওয়ার বিষয়টি এখন অনেকেই ইতিবাচক ভাবে দেখেন। প্রত্যেক নারীর শরীর, হরমোন ও প্রজননক্ষমতা ভিন্ন। তাই গর্ভধারণের আগে নিজের স্বাস্থ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।

দেরিতে গর্ভধারণ করা সম্ভব নয় বিষয়টা একেবারেই কিন্তু এমন নয়। বরং এ জন্য সচেতনতা এবং চিকিৎসকের সঠিক পরামর্শ দরকার। সেই সঙ্গে মাকে মানসিকভাবেও শক্ত হতে হবে। জীবনযাত্রায় স্বাস্থ্যকর অভ্যাসও যুক্ত করতে হবে।

 

ad

পাঠকের মতামত