371373

লাদাখে উত্তেজনা, রাজ্য মর্যাদা আন্দোলনের নেতা সোনম ওয়াংচুক গ্রেপ্তার

লাদাখের রাজ্য মর্যাদা দাবির আন্দোলনের মুখপাত্র পরিবেশবাদী অধিকারকর্মী সোনম ওয়াংচুককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ‘উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে জনতাকে সহিংসতায় প্ররোচিত করার’ অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তারের এক দিন আগে তিনি বলেছিলেন, এই আন্দোলনের জন্য তাঁকে যদি গ্রেপ্তার করা হয়, তাতেও তিনি খুশি হবেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে—এর আগে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওয়াংচুকের প্রতিষ্ঠিত অলাভজনক সংগঠন ‘স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অব লাদাখ’ বা সেকমলের বৈদেশিক অনুদান গ্রহণের লাইসেন্স বাতিল করে। ২০১০ সালের বৈদেশিক অনুদান (নিয়ন্ত্রণ) আইন বা এফসিআরএ অনুযায়ী লাইসেন্স বাতিলের ফলে বিদেশি অর্থ গ্রহণের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

পাহাড়ি অঞ্চলের এই কর্মী ২০১৮ সালে র‍্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার জেতেন। তিনি ভারতের কেন্দ্র সরকার ও লাদাখের কেন্দ্রশাসিত প্রশাসনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। দুই দিন আগে সহিংসতায় চারজন নিহত ও ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে নিরাপত্তাকর্মীও ছিলেন।

এনডিটিভিকে গতকাল বৃহস্পতিবার ওয়াংচুক বলেন, তাঁর সংগঠন কোনো বিদেশি অনুদান নেয়নি। তবে জাতিসংঘ, সুইস ও ইতালীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন করেছে এবং সব কর পরিশোধ করেছে। তিনি বলেন, ‘ওরা এটাকে বিদেশি অনুদান ভেবে ভুল করেছে। আমি এটাকে সরকারের ভুল বলেই মনে করি। তাই তেমন কিছু মনে করি না। তবে এটি অনুদান নয়, ব্যবসায়িক লেনদেন।’

এর আগে, ২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে জম্মু-কাশ্মীরকে ভাগ করে লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করলে সেখানকার মানুষ প্রথমে উচ্ছ্বসিত হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে রাজনৈতিক শূন্যতার অভিযোগ উঠতে শুরু করে। এতে রাজধানী লেহ—এর বৌদ্ধ ও কারগিলের মুসলিম সমাজ একত্রিত হয়ে রাজ্যের মর্যাদা ও দাবি বাস্তবায়নে আন্দোলনে নামেন। এই প্রেক্ষাপটে বিদেশি হাত ও স্বার্থান্বেষী মহলের সম্পৃক্ততা নিয়ে জল্পনাও শুরু হয়।

কেন্দ্র সরকারের দাবি, ওয়াংচুক অনশন না ভেঙে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন, অথচ অ্যাপেক্স বডি লেহ (এবিএল) ও কারগিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (কেডিএ) সঙ্গে সরকার ধারাবাহিক আলোচনায় বসে সমাধানের চেষ্টা করছিল।

বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, আলোচনার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হচ্ছিল। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যক্তি এ প্রক্রিয়া ভন্ডুল করার চেষ্টা করছিলেন। সহিংসতার দিন ওয়াংচুক অনশন ভেঙে অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামে ফিরে যান। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কোনো চেষ্টা করেননি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, ওয়াংচুক উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে জনতাকে সহিংসতায় নামিয়েছিলেন।

রাজ্যের মর্যাদার পাশাপাশি ওয়াংচুক লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় আনার দাবি করছেন। এর ফলে উপজাতি অঞ্চলের জন্য স্বশাসিত ব্যবস্থা চালুর সুযোগ তৈরি হবে। বৃহস্পতিবার এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এই দাবির জন্য আমাকে যদি গ্রেপ্তার করা হয়, আমি তাতেও খুশি হব।’

তিনি আরও সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, ‘আমি এর জন্য তৈরি আছি। গ্রেপ্তার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। তবে বলতে চাই, জেলে থাকা সোনম ওয়াংচুকও সমান শক্তিশালী, যদি না আরও বেশি সমস্যাজনক হয় সরকারের জন্য। কারণ এতে মানুষ আরও সচেতন হবে যে দেশ কীভাবে চলছে।’

 

ad

পাঠকের মতামত