
বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের ভিসা জটিলতার অভিযোগ, সমাধান যেভাবে
থাইল্যান্ডে পর্যটক ভিসার জন্য এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মোহাম্মদ রাহী। ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও ভিসা জটিলতায় তিনি এখন আর যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে পড়েছেন সংশয়ে।
সুইডেনের লিনিয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী তারিন সুলতানা। ১ সেপ্টেম্বর ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও ভিসা জটিলতায় আর যাওয়া হয়নি। তিন মাস ধরে বারবার সময় পিছিয়েও শেষমেশ ভর্তি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি বাবদ জমা দেওয়া আট লাখ টাকা এখন আর ফেরত পাবেন কি না, তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন তারিন।
ভারতে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন হান্নান শেখ। একই অবস্থায় আছেন তিনিও।
বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী, পর্যটক কিংবা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে কয়েকটি দেশে অল্পবিস্তর ভিসা পাওয়ার সুযোগ থাকলেও, কর্মী হিসেবে ভিসা পাওয়ার পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। নিয়মিত গন্তব্য হিসেবে পরিচিত মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ দেশেরই শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য এখন বন্ধ অথবা শর্তসাপেক্ষে সচল।
সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে যেতে ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা জটিলতার অভিযোগ উঠেছে। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশও বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা দেওয়া বন্ধ বা সীমিত করেছে বলেও দাবি খাত-সংশ্লিষ্টদের।
অনেক ক্ষেত্রেই ভিসা আবেদনের বা পাওয়ার সব যোগ্যতা থাকার পরও কেনো ভিসা মিলছে না, এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশে গিয়ে অবৈধভাবে থেকে যাওয়ার প্রবণতা, ভুয়া ডকুমেন্টেশনের মাধ্যমে আবেদন, অনেক দেশের নিজস্ব পরিকল্পনায় পরিবর্তনসহ নানা কারণে বাংলাদেশিদের ভিসা আবেদন বাতিল বা ভিসা রিজেকশন হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলছেন, ভিসা দেওয়া কিংবা না দেওয়ার সম্পূর্ণ এখতিয়ার সংশ্লিষ্ট দেশের। তবে একটি দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এবং সোর্স কান্ট্রির সঙ্গে সম্পর্কও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। যার ধরন কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই নির্ধারণ হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য বলছে, ভিসা ইস্যুতে বিভিন্ন দেশ তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বাংলাদেশের নাগরিকদের কর্মী, শিক্ষাসহ যেকোনো ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্র নিশ্চিত করতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ভিসা পেতে বেশি সমস্যায় শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বহু শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে অন্য দেশে পাড়ি জমান। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশই তাদের পছন্দের শীর্ষে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের পাশাপাশি জাপান ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও যান বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।
এই খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় প্রথম সারিতে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সম্প্রতি ভিসা জটিলতায় দেশটিতে শিক্ষার্থীদের যাওয়ার সুযোগ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
ইউরোপ ও আমেরিকায় শিক্ষা ভিসা নিয়ে কাজ করা একাধিক এজেন্সি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই দেশটিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের যাওয়ার সুযোগ কমেছে। এমনকি দেশটির অভ্যন্তরীণ পলিসিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসায় শিক্ষাজীবন শেষ করে কাজের সুযোগ নিয়ে শঙ্কা থাকায় দেশটিতে আবেদনের সংখ্যাও আগের তুলনায় কমেছে।
শিক্ষার্থী ভিসা নিয়ে কাজ করে, এমন বেসরকারি একটি এজেন্সির সিনিয়র কনসালট্যান্ট তাজফিয়া মেহজাবিন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আগে ১০০ জন আবেদন করলে ৩০টি ভিসা অন্তত নিশ্চিত হওয়া যেত। কিন্তু এখন শতকরা ৯৫ শতাংশ ভিসা ফাইলই রিজেক্ট হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে ভিসার জটিলতা বিভিন্ন রকম। যেসব দেশের দূতাবাস বাংলাদেশে আছে, সেসব দেশের ভিসা পাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ। তবে যেখানে ভিসার আবেদন করতে দ্বিতীয় কোনো দেশে যেতে হয়, সেখানে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে।’
বিশেষ করে ভারতের ভিসা পাওয়া কঠিন হওয়ায় দেশটিতে থাকা ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে আবেদন করা এখন আর খুব একটা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে ভিসা নিয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। এ ছাড়া পর্তুগাল ও মাল্টায় ভিসা পাওয়ার সংখ্যা ভালো থাকলেও সম্প্রতি এই হার বেশ খানিকটা কমেছে।
মেহজাবিন বলছেন, ‘অনেকে মাল্টা অথবা স্লোভেনিয়ার মতো দেশগুলোতে শিক্ষার উদ্দেশ্যে গিয়ে সেখানে না থেকে অন্য দেশে চলে গেছেন। ফলে ওই দেশগুলোও এখন বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী নেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন করে অনেক শর্ত আরোপ করেছে।’
তবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে সম্প্রতি শিক্ষা ভিসায় যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
ফাইল প্রসেসিং, ভুল ও জাল ডকুমেন্টেশন, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ নানা বিষয় ভিসা হওয়া বা না হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।
মেহজাবিন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীর পড়তে গিয়ে ওই দেশে থেকে যাওয়ার প্রবণতা আগের তুলনায় বেড়েছে, আর বৈশ্বিক পরিসরে প্রতিটি দেশই অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ খোঁজখবরও রাখে যে কারণে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দিকে বিভিন্ন দেশের বিশেষ নজর আছে।’
পর্যটক ও চিকিৎসা ভিসা নিয়েও জটিলতা রয়েছে
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অর্থনৈতিক কারণে পর্যটন কিংবা চিকিৎসার জন্য ভিসা দিতে বেশ আগ্রহী। তবে পর্যটক হিসেবে গিয়ে সেখান থেকে আর না ফেরার মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি বাংলাদেশিদের জন্য পর্যটক বা চিকিৎসা ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বেশ কিছু দেশ।
কঠোর ভিসা-প্রক্রিয়া ও আর্থিক সক্ষমতাসহ নানা কারণে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউরোপের দেশগুলোতে পর্যটন এবং চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যাওয়ার প্রবণতা খানিকটা কম। এ ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত বাংলাদেশের জন্য সবচে পছন্দের গন্তব্য। এ ছাড়া মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও যান বাংলাদেশি নাগরিকরা।
সম্প্রতি রাজনৈতিক কারণে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন দেশটিতে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বেশ জটিল হয়ে গেছে। গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পর কয়েক মাস সব ধরনের ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছিল দুই দেশই।
সম্প্রতি চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারত কিছু ভিসা দিলেও পর্যটন ভিসা নিয়ে জটিলতা কাটেনি। আর এ কারণেই পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। তবে সেখানেও শুরু হয়েছে জটিলতা।
বেশ কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামসহ আশপাশের দেশগুলোয় পর্যটন ভিসা দেওয়ার প্রবণতা সম্প্রতি বেশ কমেছে। এ ছাড়া কয়েকটি দেশে বাংলাদেশিদের জন্য অতীতে অন অ্যারাইভাল ভিসা থাকলেও তা বাতিল করা হয়েছে।
একটি ট্রাভেল এজেন্সির হেড অব মার্কেটিং মোহাম্মদ নূর ই আলম খান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, বাংলাদেশ থেকে অনেকেই এই দেশগুলোতে টুরিস্ট ভিসায় গিয়ে আর ফেরেননি। যে কারণে দেশগুলো ভিসা দেয়ার প্রক্রিয়া বেশ জটিল ও সময় সাপেক্ষ করেছে।
তিনি দাবি করেন, ‘থাইল্যান্ডে গিয়ে অনেকে লাওস, কম্বোডিয়া চলে গেছে। যে কারণে তারাও ভিসা কন্ট্রোল করছে। তবে চীনের ভিসা সম্প্রতি কিছুটা ওপেন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আগে দুই সপ্তাহের মধ্যে ভিসা হচ্ছে কি হচ্ছে না একটা ফিডব্যাক আমরা পেতাম, কিন্তু এখন একজন ব্যক্তির অতীতে যতই ট্রাভেল হিস্ট্রি থাকুক না কেনো দেশটি থেকে ফিডব্যাক পেতেই দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগছে।’
ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে অতীতে অন-অ্যারাইভাল ভিসা থাকলেও, সম্প্রতি তারা আগে থেকে ভিসা নেওয়ার প্রক্রিয়া চালু করেছে জানিয়ে মোহাম্মদ নূর ই আলম বলেন, ‘৫ আগস্টের পর এই দেশগুলোতে গিয়েও এত মানুষ থেকে গেছেন যে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক।’
বাংলাদেশ থেকে কম খরচে ঘুরতে যেতে এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভূটান, নেপাল ছাড়া অন্য দেশগুলোর ভিসা পাওয়া আগের তুলনায় কঠিন হওয়ায় দেশের ট্রাভেল এজেন্সিগুলো সংকটে পড়েছে বলে জানান একটি ট্রাভেল এজেন্সির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ শাহদাত রশিদ।
তিনি বলেন, ‘উজবেকিস্তান সম্প্রতি ভিসা বন্ধ করেছে, কারণ ওই দেশে গিয়ে বাংলাদেশের অনেকে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে ঢুকে থেকে গেছে। দুবাই, কাতার ও কুয়েতের ভিসা বন্ধ, সৌদি আরব ওমরা ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ দিয়েছে, জর্ডান-মিশর-তুরস্ক কঠিন শর্তে ভিসা না দেওয়ার প্রবণতাই বেশি।’
শ্রমবাজারেও ভিসা নিয়ে অস্বস্তি
অন্য দেশে কর্মী পাঠানোর বিষয়টি মূলত নির্ভর করে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক বা চুক্তির ওপর। চাহিদা ও জোগান এই হিসেবে চলে লেনদেন। কিন্তু সম্প্রতি এখানেও বেশ জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশের শ্রমবাজার হিসেবে বৃহৎ গন্তব্য মালয়েশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। এছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশেও চুক্তির মাধ্যমে কম বেশি কর্মী পাঠায় বাংলাদেশ।
তবে খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেবল সৌদি আরব ছাড়া আর কোনো দেশেই বাংলাদেশি কর্মীরা এই মুহূর্তে খুব একটা যেতে পারছেন না।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি বা বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘মালয়েশিয়া বন্ধ, দুবাই বন্ধ, বাহরাইন বন্ধ, ওমান বন্ধ, কাতারও অলমোস্ট বন্ধ অর্থাৎ আমাদের জন্য যেসব ট্র্যাডিশনাল শ্রমবাজারগুলো আছে তার সবই অলমোস্ট বন্ধ কেবল সৌদি আরব ছাড়া।’
ইউরোপের শ্রমবাজারেও নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলেও জানান ফখরুল ইসলাম। রোমানিয়া, পোল্যান্ড ও চেকোস্লোভাকিয়ায় কিছু মানুষ যাওয়ার সুযোগ পেলেও, এসব দেশের দূতাবাস বাংলাদেশে না থাকায় খুব একটা কাজে আসছে না।
তিনি বলেন, ‘থার্ড কান্ট্রিতে গিয়ে ভিসা আনতে হয়, যা আমাদের ওয়ার্কারদের জন্য সুবিধাজনক নয়। এ ছাড়া ইউরোপের এক দেশে গিয়ে আমাদের শ্রমিকরা অন্য দেশে চলে যাচ্ছে, যে কারণে পরে আর ওই দেশ বাংলাদেশি লোক নিচ্ছে না।’
এ ছাড়া কিছু দেশে কাজের অনুমতি পাওয়ার পরও সম্প্রতি অনেক বাংলাদেশি ভিসা পেতে সমস্যায় পড়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ ক্ষেত্রে সরকারিভাবে উদ্যোগ না নিয়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে মনে করেন এই খাত-সংশ্লিষ্টরা।
ভিসা জটিলতার সমাধান যেভাবে
ভিসা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার কারণে নানা সমস্যায় পড়ছে বাংলাদেশ। একদিকে অবৈধ অভিবাসীদের কারণে দেশের সুনাম যেমন ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তেমনি শ্রমবাজার হারিয়ে রেমিট্যান্সের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা লাভের পথও বন্ধ হচ্ছে।
বাংলাদেশিদের জন্য অন্য দেশের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতার যে অভিযোগ উঠেছে তার সমাধান হবে কীভাবে, এটিই এখন প্রশ্ন।
বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, অন্য দেশের নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি দেশ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশিলতাসহ নানা বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করে। এরপরই আসে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও লেনদেনের বিষয়।
এ ছাড়া মাইগ্রেশনের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করাও সমস্যা তৈরির কারণ।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলছেন, ‘অবৈধ অভিবাসনই ভিসা না পাওয়া বা জটিল প্রক্রিয়ার পথে প্রধান বাঁধা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে এ নিয়ে নানা আলোচনা হলেও তেমন কাজ হচ্ছেনা।’
তিনি বলছেন, ‘বেআইনি পথে যারা দেশের বাইরে যাচ্ছেন, তাদের জন্য পরবর্তী ধাপে যারা বৈধভাবে যেতে চান তারা আর যেতে পারছেন না।’
এক্ষেত্রে কূটনীতির পাশাপাশি দক্ষ কর্মী তৈরি ও অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকেও সরকারকে আরও মনোযোগ দেয়ার কথা বলছেন অনেকে।
বিভিন্ন দেশের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতার কথা স্বীকার করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নিজেও। এই সমস্যা সৃষ্টির পেছনে নিজেরাই দায়ী বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা নিজেরাই আমাদেরকে এই অবস্থানে নিয়ে গিয়েছি। আমাদের কোনো কাগজ বিশ্বাসযোগ্য না পৃথিবীতে, কারণ এমন পারফেক্ট নকল আর কেউ করতে পারে না।’
ভিসা নিয়ে জটিলতা দূর করার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলছে, সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। বিশেষ করে নতুন শ্রমবাজার খোঁজার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও জানানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তাদের মতো করে ভিসা দেয়ার রেশিও কম-বেশি করে। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে টার্গেট করে কেউ ব্যবস্থা নিয়েছে, এটি সঠিক নয়।’
সূত্র : বিবিসি বাংলা