371199

ছাত্রদলের দাবির মুখে পেছালো রাকসু নির্বাচন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল ছাত্র সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন পিছিয়ে ১৬ অক্টোবর নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের ঠিক তিন দিন আগে রাকসু নির্বাচন পূজার পর চেয়ে বসে ছাত্রদল। শেষ পর্যন্ত তাদের চাওয়াই পূরণ হলো। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাকসু নির্বাচন কমিশনের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। রাত পৌনে ৮টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তথ্যটি জানানো হয়েছে।

তিন দশকেরও বেশি সময় পর রাকসু নির্বাচন ঘিরে শিক্ষাঙ্গনে তৈরি হয়েছে আমেজ। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ৩৫ বছর পর ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন শিক্ষার্থীরাও। ক্যাম্পাসজুড়ে বইছে নির্বাচনি উৎসব। হলে, বিভিন্ন চত্বরে, ক্যাম্পাস সংলগ্ন মেসগুলোতে এবং অনলাইনে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। তবে এ আমেজে সংকট সৃষ্টি করেছে পুনর্বহাল হওয়া পোষ্য কোটা।

সবশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজমান পরিস্থিতিতে রাকসু, হল ছাত্র সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন নিয়ে সোমবার পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেয় ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল। ছাত্রদলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন বলছেন, চলমান পরিস্থিতিতে দুর্গাপূজার পরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। আর ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান বলছেন, তারা ২৫ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন চান। সোমবার দুপুরে এক বিফ্রিংয়ে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন তাদের প্যানেলের এই অবস্থান সাংবাদিকদের জানান। বিকাল ৩টার দিকে রাকসুর কোষাধ্যক্ষ কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের কাছে নিজেদের অবস্থান জানান ছাত্রশিবিরের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান।

শেখ নূর উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছাত্রদল সব সময় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। ক্যাম্পাসে যে উৎসবমুখর পরিবেশ ও ভোটারদের আনাগোনা ছিল, সেটা অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। ভোটার নেই বললেই চলে, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বাড়িতে চলে গেছেন। আমরা চাই, সর্বোচ্চ ভোটারের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশে একটি নির্বাচন। আমরা নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করবো, আপনারা বিষয়টি বিবেচনা করেন, শিক্ষার্থীদের পালস বোঝার চেষ্টা করেন। আমাদের চাওয়া, নির্বাচনটা ছুটির (দুর্গাপূজার ছুটি) পরে হোক।’

তবে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান বলেছেন, ‘অনেক রাকসু বানচালকারী গোষ্ঠী নির্বাচন পেছানোর অপরাজনীতি করছে। সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে কিছু বোল্ড স্টেটমেন্ট দিয়েছি। আমাদের প্রথম মতামত হচ্ছে, যথাসময়েই নির্বাচন হতে হবে। এটা কোনোভাবেই পেছানো যাবে না। দ্বিতীয় দাবি হচ্ছে, নির্বাচনের দিন বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে। তৃতীয় দাবি হচ্ছে, ভোট গণনা সুষ্ঠুভাবে হতে হবে। চতুর্থ দাবি, ভোটের দিনই ফলাফল ঘোষণা করতে হবে।’ যারা জয়ী হবে না, তারা নির্বাচন পেছানোর কথা বলছে উল্লেখ করে তিনি এই অপরাজনীতি থেকে তাদের বিরত থাকার আহ্বান জানান।

সংকট সৃষ্টি করেছে পোষ্য কোটা: শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের গত ২ জানুয়ারি পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। এরপর থেকেই শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পোষ্য কোটাকে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দাবি করে একের পর এক আন্দোলন শুরু করেন। এরই প্রেক্ষিতে ১৮ সেপ্টেম্বর বিকালে এক জরুরি একাডেমিক কমিটির সভায় পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর থেকেই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদে বিক্ষোভ, আমরণ অনশন, অবস্থান কর্মসূচি করাসহ শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধ্বস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটেছে। শনিবার বিকাল থেকে রাতভর এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে রাত পৌনে ২টায় পোষ্য কোটার ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করেন রাবি উপাচার্য। রবিবার জরুরি সিন্ডিকেট সভায় তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আশ্বাস দেন তিনি। এরপরই থেকে কর্মসূচি থেকে ধীরে ধীরে সরে আসেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার রাত সাড়ে ৩টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।

রবিবার বিকাল সোয়া ৫টায় জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ বলেন, ‌‘শনিবার পোষ্য কোটাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের ধ্বস্তাধস্তির ঘটনায় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট আভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি এবং একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় (পোষ্য কোটা) ভর্তি  আপাতত স্থগিত থাকবে। এ বিষয়ে সিন্ডিকেটে রিপোর্ট করা হয়েছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা শেষে অচিরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এছাড়া সিন্ডিকেট থেকে যথাসময়ে রাকসু নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে।’ এরপরও রাকসু নির্বাচন নিয়ে যেন সংশয় কাটছে না শিক্ষার্থীদের। দুই দিন সময় পোষ্য কোটা ইস্যুতে ব্যয় করায় প্রার্থীরা পড়েছেন বিপাকে। বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচন কী ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে, নাকি পোষ্য কোটার জটিলতায় আবারও পিছিয়ে যাবে- প্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের এই শঙ্কা ছিল।

কমপ্লিট শাটডাউন: এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ শিক্ষকদের ‘লাঞ্ছিত’ করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম ও অফিসার্স সমিতি। রবিবার সন্ধ্যায় শিক্ষক ফোরাম এক বিজ্ঞপ্তিতে ও অফিসার্স সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেয়।

এরই মধ্যে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি (কমপ্লিট শাটডাউন) ঘোষণা করায় আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। যদিও রাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে তারা যথাসময়ে নির্বাচন করতে চান। এরপরও তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রার্থীরাও নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। শেষ পর্যন্ত শঙ্কাটাই সত্যি হলো।

 

ad

পাঠকের মতামত