365774

বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় পার্লামেন্টে জয়শঙ্করের বিবৃতি

নিউজ ডেস্ক।। বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চ-কক্ষ রাজ্যসভায় বিবৃতি দিয়েছেন দেশটির বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর।
বিবিসি রিপোর্ট মতে সেই বিবৃতিতে মন্ত্রী বলেন, জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর থেকেই বাংলাদেশে যথেষ্ট উত্তেজনা, মতভেদ গভীর হচ্ছিলো। ক্রমাগত রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটছিলো। এ অবস্থায় জুন মাস থেকে বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। যান ও রেল চলাচল, সরকারি ভবন ও অবকাঠামোর ওপরে আক্রমণসহ বিভিন্ন সহিংসতা শুরু হয়।
সেইসব হিংসাত্মক ঘটনা জুলাই মাস ধরে চলতে থাকে। আন্দোলনের পুরো সময়জুড়ে ভারত সরকার দফায় দফায় বাংলাদেশে বার্তা দিয়েছে সংযম প্রদর্শনের জন্য। সেই সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত করার তাগিদ ছিলো। দিল্লির বিদেশমন্ত্রী বলেন, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এরকম সব রাজনৈতিক শক্তির কাছেই ভারতের অভিন্ন আর্জি ছিলো। সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের ২১শে জুলাইয়ের রায়ের পরেও গণবিক্ষোভ থামেনি। সেইসময়ের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত এবং কর্মকাণ্ড পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে। এক পর্যায়ে ‘শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে’ এমন একদফা দাবি তুলে ধরা হয়। ঘটনাক্রম খুবই গুরুতর মোড় নেয় ৪ঠা আগস্ট। পুলিশকর্মী, থানা ও গার্মেন্টস কারখানাগুলির ওপরে আক্রমণের তীব্রতা বেড়ে যায়, অন্যদিকে সহিংসতার ঘটনাও খুব বেড়ে যায়। ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগ করা হয় সারাদেশেই। বেশ কিছু জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপরে, তাদের ব্যবসাগুলির ওপরে এবং মন্দিরে হামলা বিশেষভাবে উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠে। এর পুরো খতিয়ান এখনও স্পষ্ট নয়। কারফিউ থাকা সত্ত্বেও ৫ই আগস্ট বিক্ষোভকারীরা ঢাকায় জড়ো হন।

আমাদের জানা মতে নিরাপত্তা বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। খুব কম সময়ের নোটিশে তিনি সাময়িকভাবে ভারতে আসার অনুমতি চান। একই সঙ্গে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ‘ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্সের’ জন্যও অনুরোধ আসে আমাদের কাছে। তিনি গতকাল সন্ধ্যায় দিল্লি পৌঁছেছেন। বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনও বদলাচ্ছে। সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন ৫ই আগস্ট।

তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করার ও অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। বাংলাদেশের বসবাসরত ভারতীয়দের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক মিশনগুলির মাধ্যমে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রয়েছে। প্রায় ১৯ হাজার ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে রয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় নয় হাজার ছাত্রছাত্রী। শিক্ষার্থীদের সিংহভাগই জুলাই মাসেই হাইকমিশনের পরামর্শে ভারতে ফিরেছেন। ঢাকায় আমাদের হাইকমিশন ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটে উপ-হাইকমিশন রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করব ওই ভবনগুলিতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে সেদেশের সরকার। পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে স্বাভাবিক কাজকর্ম আবারও শুরু করা যাবে বলে আশা করছি।

সংখ্যালঘুদের অবস্থার দিকে আমরা সবসময়ে নজর রাখছি। তাদের সুরক্ষা দিতে বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সংগঠন নানা কর্মসূচী নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এটিকে আমরা স্বাগত জানাই। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দৃশ্যত পুন:স্থাপিত না হওয়া পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই আমাদের উদ্বেগ থাকবে। এই জটিল পরিস্থিতিতে আমাদের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীগুলিকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিগত ২৪ ঘণ্টায় আমরা ঢাকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি। এটাই এখনকার মতো পরিস্থিতি। দিল্লির বিদেশমন্ত্রী তার বক্তৃতার সমাপনীতে বলেন, যে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীর ব্যাপারে সবসময়েই কঠোর জাতীয় ঐক্যমত্য দেখা গেছে, তাদের অত্যন্ত সংবেদনশীল ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আমি এই আইনসভার সমর্থন প্রত্যাশা করি।

ad

পাঠকের মতামত