364933

‘আমার কলিজার ধনরে গু.লি কইরা মারল ক্যান’

নিউজ ডেস্ক।। ‘অভাবের লাইগা পোলাডা পড়ালেহা ছাইড়া গার্মেন্টসে চাকরি করত। মাসে মাসে ট্যাহা পাঠাইতো। আমার পুলাডারে কেন মারল, পুলা হারানোর যন্ত্রণা ক্যামনে সইমু’ কথাগুলো বলছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে গু.লিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া গার্মেন্টসকর্মী আসিফের বাবা আমজাদ হোসেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার পুলার মাথায় গুলি কইরা মাইরা ফেলছে।

বাপজান বাঁচবার লাইগা আমার কাছে কতই না আকুতি করল। আমি তো তাকে বাঁচাইতে পারলাম না। আমার পোলা তো কোনো রাজনীতি করত না। তার পরেও নিরপরাধ পুলাডারে মাইরা ফেলল।
আল্লাহ এর বিচার করবে।’
আসিফ শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের কেরেঙ্গাপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেনের ছেলে। তিনি জানান, গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন আসিফ। ওই দিনই রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

পরদিন আসিফের মরদেহ শেরপুরে আনা হয়। পরে নিজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আফিফের বাবা বলেন, ‘ওই দিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে আসিফ ফোন দিয়ে আমাকে কয় অ্যাক্সিডেন্ট করছি। তুমি তাড়াতাড়ি আসো। আমি গিয়া দেখি মাথার ডান পাশে গুলি লেগেছে।

মিরপুরের আলোক হাসপাতালে পইড়া আছে। বাইরে তহনও গোলাগুলি চলছে। রাস্তায় রিকশাও নাই। যে কয়ডা আছে গুলির ভয়ে তারা যাইবার চায় না।

পরে একটা রিকশা নিয়া সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যাই। সেখানের ডাক্তারা মাথায় ব্যান্ডেজ কইরা রেফার কইরা দেয় নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে। রিকশায় কইরা যখন নিউরোসায়েন্সে যাইতাছি, তখন বাপে ব্যথায় কাতরাইয়া কয়, আমার ওপর থেকে দাবি ছাইড়া দিও আব্বা। আমি তোমার স্বপ্নপূরণ করবার পারলাম না। আমি আর বাঁচব না। তহন আমার বুকটা ফাইটা যাইতেছিল। নিউরোসায়েন্সের ডাক্তাররা কইলো আসিফ আর নাই।’

বাড়ির ভেতর থেকে ভেসে আসছে মমতাময়ী মা ফজিলা খাতুনের কান্না। তার দুই চোখ বেয়ে অঝোরে ঝড়ছে জল। কথা বলতেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন মা ফজিলা খাতুন। ছেলের ছবি বুকে কাতরাচ্ছেন, এক পর্যায়ে মাটিতে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। পরে জ্ঞান ফিরে এলে বাড়ির সবাই সান্ত্বনা দেয়। তবু ছেলে হারানোর ব্যথায় ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠেন। তার কান্নায় ভারী ওঠে বাড়ির পরিবেশ।

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার পুলাতো বড় চাকরিও চায় নাই, রাজনীতিও করে নাই। পেটের দায়ে গার্মেন্টসে চাকরি করত। তাও পুলাডারে গুলি কইরা মারল ক্যান? আমার কলিজার ধনরে এভাবে মাথা ফুটা কইরা মারল। যারা আমার বাপেরে মারছে, আল্লাহ যেন তাদের বিচার করে।’

এলাকাবাসী জানায়, আসিফের বাবা ২০ বছর ধরে ঢাকার মিরপুর এলাকায় ব্যবসা করেন। ব্যবসার সুবাদে অধিকাংশ সময় ঢাকাতেই থাকতেন। ছয় সন্তানসহ ৮ সদস্যের পরিবার তাদের। ৬ সন্তানের মধ্যে আসিফ দ্বিতীয়। আসিফের বড় বোনের বিয়ে হয়েছে ঢাকায়। অন্য ভাই-বোনদের নিয়ে তার মা গ্রামের বাড়িতেই থাকেন।

আসিফ বছরখানেক আগে মিরপুরের একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেন। তিনি তার বাবার সঙ্গেই থাকতেন। টানাপড়েন সংসারে তার বেতনের টাকায় সংসারের অভাব অনেকটাই মিটত। এমন নিষ্ঠুর ঘটনায় আসিফের বাবা, মা ও ভাই-বোন এখন অনেকটাই নির্বিকার। উৎস: কালের কণ্ঠ

 

ad

পাঠকের মতামত