ছেলের প্রাণের বিনিময়ে এদেশ শান্ত থাকুক
নিউজ ডেস্ক।। খাটের পাশে ট্রাঙ্কের ওপর পড়ে আছে বই-খাতা। ফাঁকা চেয়ার-বিছানাও। আদরের বিড়ালটাও খুঁজছে তাকে। সবকিছুই আছে আগের মতোই, শুধু নেই সাগর।
বছরখানেক আগে ময়মনসিংহ নগরীর চৌরঙ্গীর মোড় এলাকায় নতুন একটি দালান তুলেছেন বাবা আসাদুজ্জামান। এখানেই ছেলের বাকি জীবন কাটবে- এমন ভাবনাই ছিল তার। ছেলেকে নিয়ে দেখেছিলেন অনেক বড় স্বপ্নও। সবকিছুই যেন এখন শূন্য।
একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে এখনও শোকে কাতর পুরো পরিবার। আট বছর ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত মা রহিমা খাতুনের কান্না থামছেই না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রহিমা খাতুন বলেন, ‘গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর আমি তাকে খাবার দেই। খাবার খেয়ে চরপাড়ায় হাসপাতালে যাবে বলে বের হয় সাগর। সেদিন গণ্ডগোলের খবরে বাড়ি থেকে ফোন করা হলে অন্য একজন কল রিসিভ করে জানায় সাগর গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পরে রাতে তার লাশ বাড়ি আনা হয়। আমার ছেলের জন্য দোয়া চাওয়া ছাড়া এখন আর কিছুই বলার নাই আমার।’
ছেলের মৃতুতে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়নি রেদওয়ানের পরিবার। বাবা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ছেলে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করছে। আরও কত স্বপ্ন ছিল আমার একমাত্র ছেলেকে ঘিরে। ছেলের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে সব শেষ হয়ে গেছে। তারপরও আমার ছেলের রক্তের বিনিময়ে এদেশ শান্ত থাকুক। এমন পরিস্থিতি আর কখনো তৈরি না হোক।’
সদা হাস্যোজ্জল, পরোপকারী ছিলেন রেদোয়ান হাসান সাগর। তার মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসীও।
স্থানীয়রা বলেন, খুবই অমায়িক ব্যবহার ছিলো সাগরের। সবার সাথেই মিশতো সে। কেউ বিপদে পড়লে কিংবা রক্তের প্রয়োজন হলেই হাসপাতালে ছুটে যেত সে।
কোটা আন্দোলনকে ঘিরে, গত ১৯ জুলাই ময়মনসিংহ নগরীর মিন্টু কলেজ এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয় প্রাণ যায় রেদোয়ান হাসান সাগরের। দুই ভাই-বোনের মধ্যে বড় সাগর ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষে, চতুর্থ বর্ষে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হিসাববিজ্ঞানে পড়লেও তথ্যপ্রযুক্তিতে বেশ দক্ষ ছিলেন সাগর। পড়াশোনার পাশাপাশি ময়মনসিংহ নগরে এমএম কম্পিউটার নামে একটি প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন চাকরিও করতেন। উৎস: সময়টিভি।










