কোটা বিরোধী আন্দোলন: স্বপ্ন পূরণ হলো না তুরাবের
নিউজ ডেস্ক।। লন্ডনি কইন্যা বিয়ে করেছিলেন সিলেটের ফটোসাংবাদিক এটিএম তুরাব। তিন মাস আগে বিয়ে করেছিলেন তিনি। লন্ডন যাওয়ার সব প্রক্রিয়া এগিয়েও রেখেছিলেন। দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে তার লন্ডন পাড়ি দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই গু.লিতে ঝাঁঝরা হয়ে মৃ.ত্যুকে আলিঙ্গন করলেন তিনি। এমন ঘটনায় হতবাক তার পরিবার। লন্ডনে থাকা সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী তানিয়া ইসলামও বিয়ের তিন মাসের মধ্যে হয়ে গেলেন বিধবা। কাঁদছেন তিনিও। স্বজনদের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সিলেটের ফটো সাংবাদিক এটিএম তুরাব।
কাজ করতেন দৈনিক জালালাবাদ ও নয়াদিগন্ত পত্রিকায়।
এর আগে বিয়ানীবাজারে সাংবাদিকতায় সক্রিয় ছিলেন। কয়েক বছর আগে এসে সিলেটের সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। নগরের যতরপুরে পরিবার সহ বসবাস করতেন তুরাব। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে; এটিএম তুরাব চলতি বছরের ১৩ই মে বিয়ে করেছিলেন। কনে লন্ডনি কইন্যা তানিয়া ইসলাম। তাদের বাড়ি জগন্নাথপুরে। পারিবারিক ভাবে তাদের বিয়ে হয়। অনেকের কাছে বড় আদরের ছিলেন তুরাব। এ কারণে বিয়েতে সিলেটের সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ ছিল বেশি। বিয়ের পর কনে তানিয়া ইসলামের সঙ্গে ১৮ দিনের সংসার। এরপর কনে চলে যান লন্ডনে। গিয়ে এটিএম তুরাবকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সাংবাদিক তুরাবের বড় ভাই আবুল হাসান মো. আজরফ গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন; তুরাবকে লন্ডনে নিয়ে যেতে ওখান থেকে তার স্ত্রী তার প্রক্রিয়া এগিয়ে রেখেছিলেন। আগামী দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে সে লন্ডনে চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই গুলিতে নির্মমভাবে খুন হতে হলো তাকে। এ ঘটনায় তাদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তুরাবের জন্য লন্ডনে থাকা স্ত্রীও আর্তনাদ করছেন। এমন ঘটনায় তাদের পরিবার পুরোপুরি বিপর্যস্ত। আমেরিকায় থাকা বড় বোন ও ফ্রান্সে থাকা বড় ভাইও কাঁদছেন। সান্ত্বনার কোনো ভাষা নেই বলে জানিয়েছেন ভাই আবুল হাসান। ঘটনার দিন ছিল শুক্রবার, ১৯শে জুলাই। নগরের কোর্ট পয়েন্টে জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ হবে। খবর পেয়ে তুরাব বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যান। ছিলেন নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায়। সহকর্মীরা জানিয়েছেন; বিক্ষোভ শুরুর পরপরই ফটোসাংবাদিকরা ছবি তুলছিলেন। এমন সময় গু.লিবর্ষণ, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও টিয়ারশেল ছোড়া শুরু হয়। এতে গু.লিবিদ্ধ হন তুরাব। এ দৃশ্য দেখে এগিয়ে যান ফটোসাংবাদিকরা। তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করেন। এদিকে তুরাব নি.হত হওয়ার ঘটনায় সিলেটের সাংবাদিকদের নিয়ে কোতোয়ালি থানায় মা.মলার এজাহার দাখিল করেছেন বড় ভাই আবুল হাসান মো. আজরফ। পুলিশ এ অভিযোগটিকে সাধারণ ডায়েরি হিসেবে গ্রহণ করেছে। লিখিত এজাহারে আবুল হাসান উল্লেখ করেন- ‘১৯শে জুলাই বেলা ১টা ৫৫ মিনিটে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য কোর্টপয়েন্টে অবস্থান করেন তুরাব। এক পর্যায়ে জুমার নামাজের পর বিএনপি’র মিছিল শুরু করলে তুরাব মিছিলের পেছনে অন্যান্য সহকর্মীসহ অবস্থান নেন। মিছিলটি পুরান লেন গলির মুখে পৌঁছলে সশস্ত্র পুলিশ বিপরীত দিক থেকে অবস্থান নেয়। ওই মুহূর্তে হঠাৎ লাগাতার গুলিবর্ষণের শব্দ শুনে আমার ভাই তুরাব বলে আমাকে বাঁচাও; আমাকে মেরে ফেলছে। আমার চোখে মুখে গুলি লেগেছে। একথা বলেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে প্রায় অজ্ঞান হয়ে যায়। তখন সাক্ষী ও পথচারীরা একটি সিএনজিতে (অটোরিকশায়) তোলে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
কিন্তু সেখানে কর্তব্যরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোবহানীঘাট ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’ এজাহারে তিনি আরও উল্লেখ করেন; ‘হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি কিন্তু অত্যধিক গু.লির কারণে ডাক্তাররা আপ্রাণ চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারেননি। এমতাবস্থায় চিকিৎসারত অবস্থায় ওইদিন সন্ধ্যা ৬টা ৪৪ মিনিটের সময় সে মৃ.ত্যুবরণ করে। গোলাগুলির স্থিরচিত্র ও ভিডিওচিত্র কর্তব্যরত সাংবাদিকদের কাছে রয়েছে। তদন্তকালে আমরা তা উপস্থাপন করবো। আমি আমার ভাইয়ের দাফন কাফনসহ অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকায় এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পরামর্শ করে এজাহার দায়ের করিতে কিছুটা বিলম্ব হয়। এজাহারে উদীয়মান সাংবাদিক আবু তাহের মো. তুরাবের খু.নিদের বি.রুদ্ধে তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক আইনানুগ শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।’ এদিকে- সাংবাদিক এটিএম তুরাবের মৃ.ত্যুর ঘটনাটি তদন্ত করছে পুলিশ।
সিলেটের পুলিশ কমিশনার মো. জাকির হোসেন খান বুধবার নগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেন। তিনি বলেন- কী কারণে সাংবাদিক তুরাব নিহত হয়েছেন তার তদন্ত চলছে। লাশের পোটমর্টেমও হয়েছে। পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট ও তদন্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কোতোয়ালি থানার ওসি মঈন উদ্দিন শিপন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- এ ঘটনায় আগেই একটি মামলা করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে যে এজাহার দেয়া হয়েছে সেটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। আগের মামলার সঙ্গে সংযুক্ত করে এ অভিযোগটিরও তদন্ত করা হবে। উৎস: মানবজমিন।