কোটা আন্দোলন: ‘আমি এখন কোথায় যাব ছোট্ট এই বাচ্চাদের নিয়ে’
নিউজ ডেস্ক।। ‘ছোট্ট এই বাচ্চাদের নিয়ে আমি এখন কোথায় যাব, কী করব, কিছুই জানি না।’ এভাবেই বিলাপ করতে থাকেন ঢাকায় গুলিতে মারা যাওয়া অটোমোবাইলস দোকানের ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দীনের স্ত্রী সুমী আক্তার। স্বামীর মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই মুখে দানাপানি নিচ্ছেন না সুমী। পরিবারের সবাই জোর করায় দুই দিন ধরে সামান্য খাবার মুখে তুলে দিতে পারলেও কারও সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না। মায়ের মতোই চুপসে গেছে তার ১০ বছরের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস। দেড় বছর বয়সী ছেলে সাইফ মায়ের কোলে ঘুমিয়ে আছে।
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সালিকাবাঁকপুর গ্রামের বাসিন্দা জসিম উদ্দীন। ঢাকার উত্তরায় একটি অটোমোবাইলসের দোকানে বেশ কয়েক বছর ধরে চাকরি করতেন তিনি। থাকতেন ওই দোকানের গ্যারেজেই। গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) মালিকের নির্দেশে তিনি ও অপর এক সহকর্মী উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে যান গাড়ির কিছু যন্ত্রাংশ কিনতে। ফিরে আসার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান জসিম। তার বুকে একটি বুলেট বিদ্ধ হয়েছিল। মুখমণ্ডল ও সারা শরীরে ছিল অসংখ্য রাবার বুলেটের ক্ষত। আজ শুক্রবার ভোরে গ্রামের বাড়িতে লাশ পৌঁছেছে জসিমের। সেখানেই জানাজার পর দাফন হয়।
নি.হত জসিমের ভাই নিজাম উদ্দীন গণমাধ্যমকে জানান, চার ভাইয়ের মধ্যে জসিম ছিলেন মেজ। জীবিকার তাগিদে তিনি ঢাকায় যান বেশ কয়েক বছর আগে। বাবার বাড়ির জমিটুকু ছাড়া আর কোনো জমি নেই। চার ভাই বাড়ির বাইরে থাকেন, বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানিতে ছোট চাকরি করেন। গ্রামের বাড়িতেই তাদের স্ত্রী-সন্তানেরা থাকেন। চার ভাই অল্প বেতন পাই, তা দিয়ে কোনোরকমে সংসারটা টেনেটুনে নিচ্ছিলেন। কিন্তু বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো এক ভাই চলে গেলেন।
জসিমের ১০ বছরের মেয়ে জান্নাতুল বলেন, ‘যেদিন বাবা মারা গেছে, সেদিন দুপুর ১২টায় আমাকে ফোন দিয়ে বলেছিল, “স্কুল থেকে যাওয়ার সময় তোমার কাকার দোকান (এলাকার পরিচিত দোকানি) থেকে দাদির জন্য ফল নিয়ে যেয়ো। আমি পরে টাকা শোধ করে দেব।” এই ছিল বাবার সঙ্গে শেষ কথা।’ ফোঁপাতে ফোঁপাতে ছোট্ট জান্নাতুল আরও বলে ‘মা আমার লগে রাগারাগি করলে বাবারে ফোন দিতাম। বাবা বলত, “তোমার আম্মুকে এবার বাড়িতে এসে অনেক বকে দেব।” এখন আমি কার কাছে নালিশ দেব, বাবা…!’ উৎস: ইত্তেফাক।