364635

সহপাঠীদের সঙ্গে আর ক্লাসে ফিরবে না রুদ্র

নিউজ ডেস্ক।। প্রকৃতির সান্নিধ্য খুব ভালো লাগত রুদ্র সেনের। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) এ শিক্ষার্থী সুযোগ পেলেই ছুটে যেতেন পাহাড়ে, ঝরনায়। সিলেটের উতমা ছড়ায় পানিতে ডোবা পাথরে বসে কয়েকটি ছবি গত ১০ জুলাই ফেসবুকে পোস্ট করেন তিনি।

ক্যাপশনে লিখেছিলেন, ‘আবারও কিছু মেমোরি সিলেটের ডায়েরিতে জমালাম’। রুদ্রের এই ছবিগুলোই এখন বন্ধু-সহপাঠীরা বারবার দেখছেন। তারা বলছেন, পরিস্থিতি শান্ত হলে ক্যাম্পাস খুলবে। ক্লাসে ফিরবে সবাই। কিন্তু রুদ্র আর ফিরবে না।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ১৮ জুলাই পুলিশের ধাওয়ায় নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে কয়েক বন্ধুর সঙ্গে খাল পার হতে গিয়ে ডুবে মারা যান তিনি। রুদ্র শাবিপ্রবির কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। দিনাজপুর সদর উপজেলার সুবীর সেন ও শিখা বণিকের ছেলে তিনি। দুই ভাইবোনের মধ্যে রুদ্র ছোট। তাঁর বড় বোন সুস্মিতা সেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বদ্যিালয়ের ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রুদ্রের বন্ধু ইমতিয়াজ ও সিয়াম সমকালকে বলেন, ‘রুদ্র প্রথম থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছিল। ১৮ জুলাই পুলিশের হামলায় সে পড়ে গিয়ে একটু আঘাত পায়। পরে আমরা মেসে ফিরে যাই। বিকেলে ছাত্রলীগ মহড়া দেয় এবং সন্ধ্যার আগ থেকে পুলিশের সঙ্গে আবারও সংঘর্ষ হলে আমরা একসঙ্গে অনেকে মেসে থাকা অনিরাপদ মনে করি। মেসের পেছন দিয়ে বাগবাড়ীর দিকে যাচ্ছিলাম। ভেলায় করে খাল পার হওয়ার সময় আমরা পড়ে যাই। সবাই সাঁতরে তীরে উঠলেও রুদ্র ডুবে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে পাই। পরে হাসপাতালে নিলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।’

গতকাল রুদ্রের পরিবারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তাঁর বোন সুস্মিতা সেন বলেন, ‘অনেক সাংবাদিক এলো; অনেক পত্রিকায় খবর এলো, কিন্তু রুদ্র তো আর আসবে না। ছোট থেকেই খুব শান্ত প্রকৃতির ছিল। কখনও মিছিল-মিটিংয়ে যায়নি। কিন্তু কোটা আন্দোলনে তো সবাই যাচ্ছে। সেও মনে করেছে, তার যাওয়া উচিত। তার পর এই তো রুদ্র গেল…।’

বাক্য শেষ না করেই থামলেন সুস্মিতা। মা-বাবার কথা জানতে চাইলে ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘৬০ বছর বয়সী মা আর ৭০ বছর বয়সী বাবার সন্তান হারানোর এই শোকের কথা কী শব্দে বলি! মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ আমরা। আমাদের বড় করার মাঝে মা-বাবা অনেক স্বপ্ন দেখেছে। আমরাও পারছিলাম হয়তো; আবার পারলামও না…।’ উৎস: সমকাল।

 

ad

পাঠকের মতামত