কোন দেশে কেমন শা.স্তি ভিপিএন ব্যবহারে
তথ্য প্রযুক্তি ডেস্ক।। বিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে এসে ভিপিএনের আবির্ভাব ঘটে। প্রযুক্তিকেন্দ্রিক বৈশ্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় ইন্টারনেটের মতো উন্মুক্ত প্লাটফর্মে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখতে বিশ্বব্যাপী ভিপিএনের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলছে।
বর্তমানে আনুমানিক ৫০০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সঙ্গে ভিপিএনের বাজার পরিসংখ্যানও চমকে দেওয়ার মতো। বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী, অন্তত ১২০ কোটি ব্যবহারকারী ভিপিএন-এর মাধ্যমে তাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন।
অনেক দেশ সম্পূর্ণভাবেই ভিপিএন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে, অনেকে আবার ব্যবহার সীমিত করেছে। চলুন দেখে নেয়া যাক এই দেশগুলো সম্পর্কে-
উত্তর কোরিয়া: উত্তর কোরিয়ায় ভিপিএন ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। দেশটিতে অনুমোদন ছাড়া ভিপিএন ব্যবহারের ফলে কারাদণ্ড হতে পারে। তবে অল্প সময়ের জন্য সেখানে ভ্রমণ করতে যাওয়া ব্যক্তিরা, দেশটিতে কোনো আইনি সমস্যা ছাড়াই ভিপিএন ব্যবহার করতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে, উত্তর কোরিয়ানদের ইন্টারনেটেই নিয়মিত প্রবেশাধিকার নেই।
রাশিয়া: ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর রাশিয়ান সরকারের অবস্থান শক্ত। ২০১৭ সাল থেকে রাশিয়ান সরকার একের পর এক ভিপিএন প্রদানকারীদের নিষিদ্ধ করা শুরু করে। দেশটি এখন পর্যন্ত এক ডজনেরও বেশি ভিপিএন প্রদানকারীকে নিষিদ্ধ করেছে। এ ছাড়া টর ব্রাউজার ব্যবহারও দেশটি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে। যদিও করপোরেট ভিপিএনগুলো এখনো রাশিয়ায় বৈধ।
চীন: চীনের বাসিন্দারা শুধু সরকার অনুমোদিত ভিপিএন ব্যবহার করতে পারেন। সরকার চাইলে এই ধরনের ভিপিএন-এ যেকোনো সময় হস্তক্ষেপ করতে পারবে। যা ভিপিএন ব্যবহারের উদ্দেশ্যকেই সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে। আর আপনি যদি চীনে একটি অননুমোদিত ভিপিএন ব্যবহার করতে গিয়ে ধরা পড়েন, তাহলে আপনাকে জরিমানা বা কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হতে পারে। চীনে একটি অননুমোদিত ভিপিএন ব্যবহারের শাস্তি ৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত: ২০১৬ সালে সাইবার অপরাধ আইন সংশোধনের পর সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিপিএন ব্যবহার অবৈধ করা হয়। দেশটির সরকার এনক্রিপশনকে খুব ভালো চোখে দেখে না এবং ভিপিএন যেভাবে কাজ করে তা এখন সে দেশে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিপিএন ব্যবহার করে ধরা পড়লে জরিমানা কিংবা এমনকি জেলের সাজাও হতে পারে। আর সেই জরিমানার পরিমাণ অনেক বৃহৎ। ক্ষেত্রবিশেষে এটি ১ লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি হতে পারে। তবে সরকারের মতে, ভিপিএন একটি বৈধ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু এই ‘বৈধ’ বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট অস্পষ্টতা রয়েছে।
উগান্ডা: ২০১৮ সালে উগান্ডা সরকার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ওপর কর চালু আরোপ করে। তখন দেশটির বাসিন্দারা কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য ভিপিএন ব্যবহার শুরু করে। তবে ২০২১ সালে উগান্ডা সরকার এই আইন উঠিয়ে নেয়। কিন্তু দেশটির বাসিন্দারা এখনো অবরুদ্ধ ওয়েবসাইটগুলো প্রবেশ করতে, ব্যক্তিগত যোগাযোগ করতে এবং তাদের অনলাইন পরিচয় গোপন রাখতে ভিপিএন ব্যবহার করে। তবে উগান্ডা সরকার ভিপিএন ব্যবহারকারীদের গ্রেফতারের হুমকি দিয়েছে।
তুর্কমেনিস্তান: ২০২১ সালে তুর্কমেনিস্তান সরকার কর্তৃক নির্দেশ দেওয়া হয় যে, ইন্টারনেট সংযোগ নেয়ার আগে ব্যবহারকারীদের পবিত্র কোরআনে শপথ নিতে হবে যে তারা কখনো ভিপিএন ব্যবহার করবে না। কেউ তুর্কমেনিস্তানে ভিপিএন ব্যবহার করে ধরা পড়লে তাকে জরিমানা এবং গ্রেফতার করা হতে পারে।
তুরস্ক : ২০১৬ সালে তুর্কি সরকার ১০টি ভিপিএন প্রদানকারীর পাশাপাশি টর ব্রাউজার নিষিদ্ধ করে। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানানো হয়। তবে ভিপিএন তুরস্কে সম্পূর্ণরূপে অবৈধ নয়। নর্ডভিপিএন এবং এক্সপ্রেসভিপিএনের মতো বেশ কয়েকটি বড় বড় ভিপিএন এখনো দেশের মধ্যে বৈধভাবে ব্যবহার করা যায়। তথ্যসূত্র: এমইউও