362994

লতার জীবনে পরকীয়ার অভিযোগ ছাড়াও যা ঘটেছিল

বিনোদন ডেস্ক।। সঙ্গীত জগতের এক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘঠলো। চলে গেলেন ভারতীয় গায়িকা লতা মঙ্গেশকর। তার এই দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে নানা ঘটনা রয়েছে। পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালনে বিয়ে না করলেও লতার বিরুদ্ধে রয়েছে পরকীয়ার অভিযোগ।

এক সময়ের জনপ্রিয় গায়ক-অভিনেতা ভুপেন হাজারিকার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে অভিযোগ করেন ভুপেনের স্ত্রী।
এক সাক্ষাৎকারে ভুপেনের স্ত্রী জানান, লতার সাথে ভুপেনের প্রেমের সম্পর্ক আছে, এমনকি তারা একসাথে রাত্রীযাপন করেছেন বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি। এনিয়ে লতা বেশ ক্ষুব্ধ হন। পরবর্তীতে রাজ সিং দুঙ্গাপুরের সাথে তার প্রায় একদশক ধরে সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আসে। এছাড়াও লতার জীবনে ঘটে নানা ঘটনা। আসুন জেনে নেওয়া যাক কেমন ছিল লতার জীবন।

১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মারাঠি মঙ্গেশকর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন লতা মঙ্গেশকর। তবে লতা তার আসল নাম নয়। গায়িকার প্রকৃত নাম ছিল হেমা। তবে পরে তার বাবা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকরের নাটক ‘ভাও বন্ধন’ এর বিখ্যাত চরিত্র লতিকা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি তার নাম পরিবর্তন করে লতা রাখেন।

জানা যায়, লতা তার জীবনে মাত্র একদিন স্কুলে গিয়েছিলেন। একদিন স্কুলে ছোট বোন আশা ভোসলেকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন লতা। তারপর ক্লাসের মধ্যেই নিজের সহপাঠীদের গান শেখানো শুরু করেন তিনি। স্কুলের শিক্ষকরা এ কারণে তাকে শাসন করলে অভিমান করে স্কুলে যাওয়াই ছেড়ে দেন লতা। প্রথাগত বিদ্যা কখনও শেখেননি তিনি। একজন গৃহকর্মী তাকে মারাঠি বর্ণপরিচয় শিখিয়েছেন এবং স্থানীয় একজন পুরোহিত তাকে সংস্কৃত শেখান। আত্মীয়স্বজন এবং শিক্ষকরা তাদের বাড়িতে এসে তাকে অন্যান্য বিষয় শেখাতেন।

ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে কন্ঠশিল্পী নুর জাহানের অনুকরণ করতেন লতা। নুর জাহানের খুব ভক্ত ছিলেন তিনি। তবে ধীরে ধীরে নিজের গানে একটি নিজস্ব শৈলী নিয়ে আসেন কোকিলকণ্ঠী লতা মঙ্গেশকর। তবে তার ক্যারিয়ারের শুরুটা কেবল গান দিয়েই শুরু হয়নি। তিনি প্রায় আটটি হিন্দি ও মারাঠি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তবে তিনি লাইট-ক্যামেরার সামনে পরিচালক বা অন্য কারোর নির্দেশে কাজ করা পছন্দ করতেন না। পরে ১৯৪৯ সালে মহল চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার পর থেকে তিনি সবার নজরে চলে আসেন।

তবে প্রথম দিকে সময়ের বিবেচনায় তার কণ্ঠস্বর বেশি ‘সরু’ হওয়ায় বাঙালি সঙ্গীত পরিচালক শশধর মুখার্জি তাকে ফিরিয়ে দেন। এই লতাই পরে নিজের কণ্ঠে ১৯৬৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর সামনে ভারত-চীন সীমান্তে চলা যুদ্ধের কিছুদিন পর এক অনুষ্ঠানে ‘এ মেরে ওয়াতান কে লোগো’ গানটি গান। এরপরই নেহেরু সেখানেই অশ্রুশিক্ত হয়ে পড়েন।

ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে বর্তমানে যে সেরা সঙ্গীত শিল্পীদের সম্মাননা দেওয়া এর প্রচলনও হয় লতার হাত ধরে। ১৯৫৬ সালে লতার গাওয়া ‘রাসিক বালমা’ গানটি ফিল্মফেয়ারে সেরা গানের পুরস্কার পায়। লতাকে ফিল্মফেয়ারের অনুষ্ঠানে গানটি পরিবেশন করার জন্য ডাকা হয়। কিন্তু তখনো ফিল্মফেয়ারে গায়ক-গায়িকাদের জন্য আলাদা কোনো পুরস্কারের ব্যবস্থা না থাকার প্রতিবাদে লতা অনুষ্ঠানে গান করতে অস্বীকৃতি জানান। ৩ বছর পর ১৯৫৯ সালে ফিল্মফেয়ারে সেরা সঙ্গীত শিল্পীদের জন্য পুরস্কারের প্রচলন শুরু হয় এবং প্রথম বছরেই তিনি পুরস্কারটি লাভ করেন। তার কিছু বছর পর গায়ক ও গায়িকাদের জন্য পৃথক পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়।

নিজের লম্বা এই ক্যারিয়ারে বহুবার নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হন লতা। তবে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঘটনাটি ঘটে ১৯৬২ সালে। ‘স্লো পয়জন’ প্রয়োগে কে বা কারা লতাকে হত্যা চেষ্টা করে। এতে মৃতপ্রায় লতার প্রাণরক্ষা পায় ১০দিন হাসপাতালে চিকিৎসার পর। সেবার পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে তার সময় লাগে তিনমাস। যদিও এর পেছনে কে ছিল তা এখনো রহস্য। তবে এ ঘটনার পর লতা রাঁধুনি কাউকে কিছু না বলে এবং নিজের বেতন না নিয়েই হঠাৎ উধাও হয়ে যায়।

লতার মৃত্যু একটি অপূরণীয় ক্ষতি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার মিলিয়ে লতার অর্জনের ঝুলিতে আছে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। তার এ প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও।

 

ad

পাঠকের মতামত