362187

কুমিল্লার ঘটনায় সেই যুবক কক্সবাজারে গ্রেপ্তার: সামনে ইকবাল পেছনে কে

নিউজ ডেস্ক।। কুমিল্লা শহরের নানুয়া দীঘির পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনায় ইকবাল হোসেন নামে সেই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইকবালকে কক্সবাজারের সুগন্ধা সৈকত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম।

তাকে রাতেই কুমিল্লা জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এর আগে নানুয়া দীঘির সেই পূজামণ্ডপের আশপাশে বিভিন্ন ভবনে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ইকবালকে শনাক্ত করা হয়।

পুলিশের ভাষ্য, এই ইকবালই মণ্ডপে পবিত্র কোরআন রেখেছিলেন। বারবার অবস্থান পাল্টানোয় গত কিছুদিন চেষ্টা করেও ইকবালকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছিল না। ইকবাল গ্রেপ্তার হলেও ঠিক কার মদদে তিনি মণ্ডপে পবিত্র কোরআন রেখে এসেছিলেন তা এখনো জানা যায়নি।

ইকবালের মা আমেনা বিবি জানান, গত ১৩ অক্টোবর পূজামণ্ডপে কোরআন উদ্ধারের পর থেকে তার ছেলে বাড়ি ফেরেনি। এর মধ্যে ইকবালের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগও ছিল না। ঘটনার জন্য ইকবাল দায়ী হলে তার বিচার হোক। কয়েক বছর ধরে ইকবাল মানসিক ভারসাম্যহীন বলেও দাবি করেন তিনি।

এর আগে গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘কুমিল্লার ঘটনাটি যে লোকটি করেছেন, তাকে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি মাজার লাগোয়া মসজিদে রাত ৩টার দিকে গিয়েছিলেন। একবার বা দুবার নয়, তিনবার গিয়েছিলেন। ওই মসজিদের দুজন খাদেম ছিলেন, তাদের সঙ্গে ইকবাল কথা বলেছেন।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞ টিম দীর্ঘ সময় এটা বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয়েছে যে এই ব্যক্তি (ইকবাল) মসজিদ থেকে পবিত্র কোরআন শরিফ এনে সেখানে রেখেছেন। এরপর তিনি প্রতিমার গদাটি কাঁধে করে নিয়ে গেছেন। কাজটি পরিকল্পনামাফিক করা হয়েছে। দুই থেকে তিনবার যাওয়া-আসার মধ্য দিয়ে তিনি এই কাজটি করেছেন। কারও প্ররোচনা ছাড়া তিনি এটি করেছেন বলে তদন্তকারীরা মনে করেন না। ইকবাল হোসেন মোবাইল ব্যবহার করছেন না। যারা তাকে পাঠিয়েছিলেন, তারাও তাকে লুকিয়ে রাখতে পারেন। তবে বের করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

ওই পূজামণ্ডপে কোনো সিসি ক্যামেরা ছিল না। তবে পার্শ্ববর্তী দারোগাবাড়ী শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরীর (রহ.) মাজার এবং দীঘির পাড়ের একটি বাড়ির সিসি ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহ করে পুলিশ। এর মধ্যে একটি ফুটেজে দেখা যায়, এক যুবক রাত ২টার পর মাজার থেকে বেরিয়ে মণ্ডপের দিকে যাচ্ছেন। তার হাতে বই জাতীয় কিছু ছিল। এরপর ৩টা ১২ মিনিটের দিকে তাকে মণ্ডপ থেকে ফিরে আসতে দেখা যায়। আরেক ফুটেজে দেখা যায়, ফেরার সময় তার হাতে একটি গদা ছিল।

কুমিল্লা জেলা পুলিশ বলেছে, ইকবালের বাড়ি কুমিল্লা নগরীর উত্তর-পূর্ব দিকের সুজানগরে। তিনি ওই মহল্লার নূর আহমদের ছেলে। মাজারে মাজারে ঘোরেন। তিনি একজন ভবঘুরে প্রকৃতির মানুষ। তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় মেলেনি। পেশায় রং মিস্ত্রি। গ্রেপ্তারের আগে ইকবাল ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করেন। বেশিরভাগ সময় তার অবস্থান সীমান্ত এলাকায় দেখা গেছে।

ইকবাল হোসেন সম্পর্কে স্থানীয়রা জানান, তিনি বেশিরভাগ সময় মাজারেই পড়ে থাকেন। মাজারের ভক্তদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তাদের সঙ্গে ইকবালকে প্রায়ই দেখা যায়। পরিবারে মা-বাবা ছাড়াও দুই ভাই রয়েছে ইকবালের। ওই দুই ভাইও ভবঘুরে প্রকৃতির।

রায়হান নামের এক ভাইকে স্থানীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে দেখা যায়। ৩৫ বছর বয়সী ইকবাল দুটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রীর বাড়ি বরুড়ার কচুয়ায়। ওই ঘরে ইকবালের একটি ছেলে রয়েছে। প্রথম স্ত্রী চলে যাওয়ার পরে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজী এলাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন ইকবাল। এই ঘরে তার একটি মেয়ে রয়েছে। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় দ্বিতীয় স্ত্রীও বাবার বাড়ি চলে গেছেন। তিনি ইকবালের নামে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলাও করেছেন।

এদিকে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত গতকাল চট্টগ্রামে বলেছেন, ‘কুমিল্লার ঘটনায় ইকবাল হোসেন নামে যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার নামের আগে একটা শব্দ জুড়ে দিল। সেটা হলো ভবঘুরে। কখনো কখনো এমন ব্যক্তিদের ধরা হয়, কখনো বলে পাগল, না হলে বলে ভবঘুরে।’

পুলিশের এই বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘এই ভবঘুরে কী করে পবিত্র কোরআন শরিফ চিনল? যদি সে ভবঘুরে হয়ে থাকে, রাস্তার লোক হয়, তাহলে নতুন বই কোত্থেকে আনল, কে দিল? আর হনুমানের গদাটা এমনভাবে সরাল, যাতে হাতের কিছু না হয়, আবার সেখানে পবিত্র কোরআন শরিফ দিয়ে দিল, এটি কোনো ভবঘুরের কাজ হতে পারে না। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। চক্রান্তকারীরা পেছনে আছে। তাদের বের করে আনার দায়িত্ব রাষ্ট্র, প্রশাসন ও সরকারকে নিতে হবে।’

দেবিদ্বারে আরেকটি মামলা: সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলার ঘটনায় কুমিল্লার দেবিদ্বারে আরেকটি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় ৯টি মামলা হলো। এর মধ্যে আট মামলায় ৭৯১ জনকে আসামি করা হলেও নতুন মামলায় আসামির সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। দেবিদ্বার থানার এসআই সালাউদ্দিন শামীম জানান, উপজেলার মহিনপুর ইউনিয়নের বিহারমণ্ডল গ্রামে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে নারায়ণ পাল নামে এক ব্যক্তি মামলাটি করেছেন। এর আগে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় পাঁচটি, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় দুটি ও দাউদকান্দি থানায় একটি মামলা হয়।

 

ad

পাঠকের মতামত