361812

২২ বছর পর দেশে ফিরলেন ‘মৃত’ আমেনা

নিউজ ডেস্ক।। বগুড়ার আমেনা খাতুন (৮০) নামে এক নারী নিখোঁজ হওয়ার ২২ বছর পর নেপাল থেকে দেশে ফিরেছেন। আজ সোমবার দুপুর ১টার দিকে তিনি নেপালের একটি বিশেষ বিমানে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন। সরকারি সহযোগিতায় বিনা খরচে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আমেনার নাতি আদিলুর রহমান আদিল। দীর্ঘ কয়েক বছর তার কোনো খোঁজ না পাওয়ায় তার সন্তানদের ভোটার আইডিতে মায়ের নামের আগে মৃত উল্লেখ করেছেন।

আমেনার নাতি আদিল বলেন, ‘আমেনা খাতুন প্রায় ৪০ বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন। তবে তার আগে তিনি আমজাদ হোসেন, ফটিক মিয়া ও ফরিদ মিয়া নামে তিন ছেলের জন্ম দেন। এরপর তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। পরে আম্বিয়া নামে তার আরেক মেয়ের জন্ম হয়। ১৯৯৮ সালে ফটিক মিয়া সৌদি আরবে যাওয়ার উদ্দেশে ঢাকায় আসেন। এই সময়ে আমেনা খাতুনও বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এরপর আর তার কোনো খোঁজ মেলেনি। তখন থেকে আমরা ধরেই নিয়েছিলাম হয়তো তিনি মারা গেছেন।’

তবে গত রোজার ঈদের আগে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) লোকজন আমেনা খাতুনের সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, আমেনা নেপালে রয়েছেন। এরপর তার ছবি দেখান তারা। ছবি দেখে আমেনা খাতুনের সন্তানেরা তার পরিচয় নিশ্চিত করেন। এরপর গত শুক্রবার নেপালে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর মাসুদ আলম আমেনার সন্তানদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেন। ভিডিও কলে আমেনা তার সন্তান ও স্বজনদের চিনতে পারেন।

এ বিষয়ে মাসুদ আলম গত শনিবার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘নেপালে ২২ বছর পর মায়ের সন্ধান পেলেন বগুড়ার আমজাদ হোসেন প্রমাণিক। ২২ বছর আগে বগুড়ার ধুনটের আমেনা খাতুন বাড়ি থেকে অভিমান করে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। তার তিন ছেলে এক কন্যা সন্তানেরা তাকে খুঁজে না পেয়ে ধরে নিয়েছিলেন যে তাদের মা আর বেঁচে নেই। তাদের ভোটার আইডিতে মায়ের নাম পূর্বে মৃত উল্লেখ করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত আমেনা বয়স এখন প্রায় ৮০ বছর। তার বড় ছেলে আমজাদ হোসেনের বয়স এখন ৬০ বছর।’

আজ ৬ সেপ্টেম্বর সম্পূর্ণ সরকারি খরচে নেপালে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে একটি বিশেষ বিমানে নেপাল থেকে ঢাকায় তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে স্ট্যাটাসে লিখেন তিনি।

মাসুদ রানা ফেসবুকে আরও বলেন, ‘আমি নিজেও একই বিমানে ঢাকায় আসব। ৩০ মে নেপালে সুনসারি জেলার ‘জি মুক মেহতা’ তার ফেসবুকে ইনারোয়া পৌরসভার ডেপুটি মেয়র যমুনা গৌতম পোখরেলের তত্ত্বাবধানে উদ্ধারকৃত একজন বাংলাদেশের নারী রয়েছে উল্লেখ করে একটি পোস্ট করেন। এরপর মাসুদ রানা ফোনে আমিনা খাতুনের সঙ্গে কথা বলে ঠিকানা জানার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। পরবর্তীতে রাষ্ট্রদূতের পরামর্শে ১ জুন কাঠমুন্ডু থেকে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার দূরে সুনসারিতে গিয়ে আমেনা খাতুনের সঙ্গে কথা বলে তার ঠিকানা উদ্ধার করে বগুড়া জেলা অফিসের প্রচেষ্টায় তার ঠিকানা ও পরিবারের পরিচয় নিশ্চিত হই। এসময় ইনারোয়াতে মাসুদ রানাতে সহায়তা করেন সুনসারি বাঙালি সমাজের সভাপতি বিপ্লব ঘোষ।’

তিনি আর বলেন, ‘সম্পূর্ণ সরকারি খরচে নেপাল থেকে এই বৃদ্ধ অসহায় নারীকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে পাঠানোর বিষয়টি বর্তমান সরকারের তার দেশের নাগরিক ও প্রবাসে অসহায় মানুষে প্রতি দ্বায়িত্ব ও এবং কর্তব্য পালনের একটি উজ্বল দৃষ্টান্ত।’ আমেনার নাতি আদিল বলেন, আজ সোমবার দুপুরে দাদিকে বিমানবন্দর থেকে নিয়ে বগুড়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছি আমরা।

এ বিষয়ে বগুড়া এনএসআইয়ের উপপরিচালক মুজাহারুল ইসলাম মামুন বলেন, ‘নেপালে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসের কাউন্সিলর মাসুদ আলমের তথ্য পেয়ে আমরা ওই নারীর ঠিকানা খুঁজে বের করি। এবং মাসুদ আলমের দক্ষতা ও বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতার কারণে ওই নারীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।’

 

ad

পাঠকের মতামত