360763

সৌদিতে মারা যাওয়া লক্ষ্মীপুরের আলীর পরিবারের আর্তনাদ

ডেস্ক রিপোর্ট।। ‘আমার বাবারে যদি হারো (পার), আঁর (আমার) বুকে আনি দাও, আমি একটু চাইয়াম, আমার বাবারে…। আঁর বাবার লাশ হলেও আনি দে, বাবার লাশ চাইয়াম। মাইনসে বিদেশ যায় কামাই করতো, আঁর বাবা বিদেশ যায় মৃত্যু কামাইছে।

ও আল্লাহ, আঁর মরি যাইতে মন চাইরে’। এভাবে কেঁদে-কেঁদে ছেলের লাশ দেশে আনার জন্য আকুতি জানিয়েছেন সৌদি আরবে মারা যাওয়া বাংলাদেশী আলী আহমেদের (৪২) বৃদ্ধা মা আফিয়া খাতুন। আলীর বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদরে।

স্বামীর মৃত্যুর খবরে আলীর স্ত্রী সাফিয়া বেগমের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। তিনি দুইদিন ধরে থেমে থেমে কান্নায়-বিলাপে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বড় মেয়ে সুফিয়া আক্তারের চোখেও জল। কখনো ডুকরে-ডুকরে কাঁদছেন, কখনো মূর্ছা যাচ্ছেন। যেন তাকে (মেয়ে) ঘিরে বাবার স্বপ্ন দেখার কথা বারবার সামনে আসছে।-কে, কী বলে তাদের সান্তনা দিবেন-ভাষা জানা নেই স্বজনসহ প্রতিবেশীদের। ঘরে আরও তিন শিশু সন্তান রয়েছে। এরমধ্যে ১৫ মাস বয়সী মেয়েটি প্রতিবন্ধি।

শনিবার (১৭ জুলাই) দুপুরে আলীর লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নের রসুলগঞ্জ বাজার এলাকার কালা গাজী বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। মৃত আলী একই বাড়ির মৃত আনোয়ার উল্যার ছেলে।

পারিবারিক সূত্র জানায়, সংসারের অভাব ঘোচাতে ৪ লাখ টাকা ধার করে প্রায় তিন মাস আগে আলী সৌদি আরবে যায়। সেখানে তিনি ছাগল পালন করার কথা। তিনি আল হাবিব এলাকায় কাজে যোগ দেন। যাওয়ার দুই মাস পর্যন্ত স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে তাঁর কথা হয়।

সবশেষে ১ মাস দুই দিন আগে স্ত্রীর সঙ্গে আলীর কথা হয়। তখন দেশে জীবিত অবস্থায় ফিরতে পারবেন কীনা-এ শঙ্কায় স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চান। ওই সময় কারো কাছ থেকে টাকা ধার করে নিয়ে ছেলে-মেয়েদের জন্য খাবার ও চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেয়া হয়। এরপর থেকেই আর আলীর কথা হয়নি পরিবারের সঙ্গে। গত বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) রাতে আলীর মৃত্যুর বিষয়টি সৌদি আরব থেকে মুরাদ হোসেন ফোনে তাঁর পরিবারকে জানিয়েছেন। মুরাদের মাধ্যমে আলী সৌদিতে গেছেন। তিনি (মুরাদ) রসুলগঞ্জ বাজারের ফল ব্যবসায়ী আবু তাহেরের শ্যালক।

আলীর বরাত দিয়ে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, কর্মস্থলে তাঁর (আলী) খাবার ও পানির চরম সঙ্কট ছিল। তাঁকে সারা দিনে খেতে দুইটি রুটি দেওয়া হতো। বিষয়টি মুরাদকে জানানোর পরও কোন উদ্যোগ নেয়নি। খাওয়ার কষ্টে তিনি মারা গেছেন বলে দাবি পরিবারের।

আলীর স্ত্রী সাফিয়া বেগম জানান, তার স্বামীকে ঠিকমতো খাবার দেওয়া হতো না। ১ মাস আগে তার সঙ্গে কথা হয়। এরপর আর কথা হয়নি। হয়তো তখনই তিনি মারা গেছেন। বিষয়টি আবু তাহের ও তার শ্যালক মুরাদ আড়াল করেছে। এখন তার মরদেহ কোথায় আছে- তাও নিশ্চিতভাবে বলছে না। মরদেহটি দেশে আনতে তিনি সরকারের কার্যকরী হস্তক্ষেপ চান।

সৌদি থেকে মুঠোফোনে মুরাদ হোসেন দাবি করেন, ছাগল পালন করতে গিয়ে মাওথিয়া ভাইরাসে আলী আক্রান্ত হয়। এতে ২০ দিন তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। এজন্য পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। ৮ জুলাই তিনি কর্মস্থল আল হাবীব থেকে অন্যস্থান আল কাছিম পালিয়ে যান। সেখানে তিনি গত বৃহস্পতিবার মারা গেছেন। পরে স্থানীয় পুলিশ তার মালিককে বিষয়টি জানিয়েছে। খবর পেয়ে আমি দেশে তার পরিবারকে জানিয়েছি। মরদেহ দেশে পাঠাতে পরিবার থেকে স্থানীয় কাগজপত্র তৈরি করে পাঠাতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এব্যপারে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাসুম বলেন, ঘটনাটি কেউ জানায়নি। নোয়াখালী প্রবাসী কল্যাণ ব্যুরো বিষয়গুলো দেখভাল করেন। কোন সহযোগিতা প্রয়োজন হলে আমরা করবো।

 

ad

পাঠকের মতামত