359569

পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্কুল (ভিডিও)

নিউজ ডেস্ক।। সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত এই স্কুল টি দেশটির প্রাচীনতম বোর্ডিং স্কুল। জুডিথ ক্র্যান্টজের প্রিন্সেস ডেইজি (১৯৮০) এবং টিল উই মেট অ্যাগেইন (১৯৮৮) উপন্যাসগুলো যারা পড়েছে তাদেরকে ‘ইন্সটিটিউট লি রোজি’ কে নতুন করে চেনানোর কিছু নেই।

এছাড়াও ক্যারেন রবার্ডস এর বেশ কয়েকটি রোম্যান্স উপন্যাসেও উল্লেখ আছে বিশ্ববিখ্যাত এই স্কুল টির নাম।

‘এ স্কুল ফর লাইফ’ আদর্শে উজ্জীবিত আলোচিত এই ‘ইন্সটিটিউট লি রোজি’ (Institute Le Rosey) বিশ্বের সবেচেয়ে ব্যয়বহুল স্কুল। যে স্কুল টি কে বলা হয় ‘স্কুল অফ কিংস” অর্থাৎ রাজাদের স্কুল।

এমন নামের পেছনে কারণ খুঁজতে হলে তাকাতে হবে এর প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দিকে। এই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের তালিকায় চোখ বুলালেই খুঁজে পাওয়া যায় বিভিন্ন দেশের রাজপুত্র-রাজকন্যাদের নাম। এ ছাড়াও বিশ্বের সর্বাধিক ব্যয়বহুল স্কুল এটি। এই স্কুলের বার্ষিক টিউশন ফি এতটাই বেশি যা বহন করা অনেক বিত্তবানের পক্ষেও অসম্ভব, বাংলাদেশের হিসেবে বছরে যার পরিমাণ প্রায় ৯৬ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা!

যদিও লি রোজি এই গ্রহের সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্কুল, তবে বিশ্বখ্যাতির জন্য এটিই একমাত্র কারণ নয়। এই স্কুলের শিক্ষাপদ্ধতি থেকে শুরু করে ক্যাম্পাস, ভর্তি প্রক্রিয়াসহ সকল কার্যক্রমেই রয়েছে স্ব-তন্ত্র্য, যার ফলে লি রোজি যেমন স্বনামধন্য, তেমনই বেশ আলোচিতও বটে।

লি রোজির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু থেকেই ছিল ভিন্ন। গতানুগতিক চাপ প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য বাধ্য করা হতো না। পড়াশোনার সাথে খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, শীতকালীন ক্যাম্পাসে তিন মাস শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন, পর্বতারোহন, হাইকিং, স্নোবোর্ডিং, আইস-হকি, কার্লিং, ব্যাডমিন্টন, ড্রয়িং, ওয়াটার স্কিইং, গলফ, হকি, রোয়িং, অশ্বচালনা, সাঁতার, বাস্কেটবল, ভলিবল, ফুটবলসহ বিভিন্ন কার্যক্রম লি রোজিকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করে তোলে।

এর শিক্ষা-কার্যক্রম এতটাই মানসম্মত যে, এখান থেকে ডিপ্লোমা শেষে শতকরা ৩০ ভাগ রোজেন আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিংয়ে সেরা ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়।

২০১৪ সালে, এখানে নির্মাণ করা হয় ‘পল এন্ড হেনরি কার্নাল হল’। যেটি লি রোজির জ্ঞানচর্চা ও আভিজাত্যের নিদর্শন বহন করে।

এই হলে মোট ৩টি অংশ রয়েছে। একটি অংশ শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের জন্য, যার নাম কালচার। এখানে ৯০০-১,০০০ আসনের একটি কনসার্ট হল রয়েছে, যেখানে প্রতিবছর বিভিন্ন কনফারেন্সের আয়োজন করা হয় এবং শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে পারফর্ম করে থাকে। সেই সাথে বিশ্বের নামি-দামি মিউজিক আর্টিস্ট ও এখানে আসেন, পারফর্ম করেন।

দ্বিতীয় অংশটির নাম আর্টস। যেটি শিল্পকলার জন্য ব্যবহার করা হয়। এখানে রয়েছে একটি বৃহৎ মিউজিক্যাল স্টুডিও, যেখানে সঙ্গীতচর্চার করার প্রচুর সরঞ্জাম রয়েছে।

হলটির সর্বশেষ অংশকে বলা হয় কমিউনিকেশন সেক্টর, যেখানে যথাযথ নিয়মানুবর্তিতার মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকে। এতে করে ভিন্ন দেশ, ভিন্ন সংস্কৃতির শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক বন্ধন গড়ে তোলে, একে অন্যের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা, শদ্ধা করা শিখে, যা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দিক থেকে সমৃদ্ধ করে তোলে।

‘লি রোজি’ এর প্রতিষ্ঠাতা পল কার্নাল উত্তর সুইজারল্যান্ডে জুরা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। সেখান থেকে চলে আসেন সুইজারল্যান্ডের ই আরেক শহর ‘রোলে’ তে। জেনেভা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সুইজারল্যান্ডের এই শহরে রয়েছে চতুর্দশ শতকে নির্মিত ‘শ্যাতিও দ্যো রোজি’ নামের একটি ঐতিহাসিক দুর্গ। পল কার্নাল ১৮৮০ সালে, শ্যাতিও দ্যো রোজির একটি অংশে গড়ে তোলেন, সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে পুরোনো প্রাইভেট স্কুল ‘ইন্সটিটিউট লি রোজি’। তাই কয়েক বছর পরেই পল কার্নাল ‘শ্যাতিও দ্যো রোজি’ সহ প্রায় ২০ হেক্টর জমি কিনে নেন স্কুলের জন্য। ১৯১২ সালে, পল কার্নালের ছেলে হেনরি কার্নাল স্কুলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। হেনরির অসাধারণ দক্ষতা ও বৈচিত্র্যময় চিন্তাধারা ‘লি রোজি’কে বিখ্যাত করে তোলে। সুইজারল্যান্ড ছাড়িয়ে পাশের দেশগুলোতেও এর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।

১৯১৬ সালে, হেনরি কার্নাল লি রোজির জন্য সুইজারল্যান্ডের আরেক শহর জিস্টাডে নতুন একটি ক্যাম্পাস গড়ে তোলেন। জিস্টাড ক্যাম্পাসটি তৈরি করা হয় শুধুমাত্র শীতকালের জন্য। বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের সময়টায় স্কুলের প্রয়োজনীয় সবকিছু শীতকালীন ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হয়। শুরুর দিকে বছরে ৩ মাসের জন্য রিসোর্ট ভাড়া নিয়ে শীতকালীন ক্যাম্পাসটি করা হলেও বর্তমানে লি রোজির নিজস্ব মালিকানায় স্থায়ীভাবেই শীতকালীন ক্যাম্পাস রয়েছে।

 

ad

পাঠকের মতামত