358524

যেভাবে বুঝবেন কেউ এলএসডিতে আসক্ত কি না

নিউজ ডেস্ক।। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তের জের ধরে সামনে আসে তরুণদের মধ্যে এলএসডি বা লাইসার্জিক অ্যাসিড ডায়েথিলামাইড ব্যবহারের প্রবণতার খবর।

পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই শিক্ষার্থী বন্ধুদের সাথে মাদক এলএসডি সেবন করে একজন ডাব বিক্রেতার দা নিয়ে নিজেই নিজের গলায় আঘাত করেন।

এই ঘটনার তদন্তের জেরে পুলিশ আরো যেসব তথ্য দেয় তা হচ্ছে, বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি চক্র এই মাদক কেনাবেচার সাথে জড়িত। এছাড়া অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এই মাদক বিক্রির তথ্যও জানানো হয়।

এদিকে মাদক বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলএসডি গ্রহণ করে ভুল রাস্তা দেখে দুর্ঘটনার শিকার হওয়া, বাড়ির জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়া বা অহেতুক আতঙ্কিত হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার বেশ কিছু ঘটনা নথিবদ্ধ রয়েছে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার বলেন, ইয়াবা আ হেরোইনের মতো মাদক দ্রব্যের তুলনায় এলএসডি-তে আসক্তিকর উপাদান (অ্যাডিক্টিভ প্রোপার্টি) কম থাকে। তবে তার মানে এই না যে, এতে আসক্তি তৈরি হয় না। একাধিকবার বা দীর্ঘসময় ধরে ব্যবহার করতে থাকলে এলএসডির প্রতিও আসক্তি তৈরি হয়।

তবে ব্যক্তিভেদে এই আসক্তির মাত্রা বা এলএসডির প্রতিক্রিয়া আলাদা হয়।

ডা. মেখলা সরকার বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা মাদক হিসেবে এলএসডি গ্রহণ করেন তারা একক মাদক হিসেবে একে গ্রহণ করেন না। বরং অন্য মাদকের সাথে সাথে এলএসডিও গ্রহণ করে থাকেন। তাই অন্য মাদকদ্রব্যে আসক্তির কারণে যে ধরণের বৈশিষ্ট্য ব্যবহারকারীর মধ্যে দেখা যায় এলএসডির ক্ষেত্রেও বৈশিষ্ট্য অনেকটা একই রকম হয়।

তবে কেউ যদি অন্যান্য মাদকের পাশাপাশি এলএসডি’র আসক্তিতেও ভোগেন তাহলে তার মধ্যে নানা ধরনের লক্ষণ দিতে পারে।সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:

১. অস্বাভাবিক আচরণ: জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. অরুপরতন চৌধুরী বলেন, এলএসডি গ্রহণের পর এর কার্যকারিতা সাধারণত ৩-৪ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। তবে অনেক সময় এটি ২০ ঘণ্টা পর্যন্তও কার্যকর হতে পারে।

তিনি বলেন, এই সময়ে ব্যবহারকারীরা নানা ধরণের অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে। অনেক সময় মানুষ আত্মঘাতীও হয়ে উঠতে পারে। এ ধরণের বৈশিষ্ট্য যদি পরিবারের কারো মধ্যে দেখা যায় তাহলে সেক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২. ক্ষুধামন্দা: এলএসডিতে আসক্ত হলে তাদের মধ্যে ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।

৩. ঘুমের সমস্যা: ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন এর তথ্য অনুযায়ী, এলএসডিতে আসক্তদের মধ্যে ঘুম নিয়ে ব্যক্তিভেদে নানা ধরণের সমস্যা তৈরি হয়। অনেকের মধ্যে চরম মাত্রায় অনিদ্রা দেখা দেয়। অনেকের মধ্যে অতিরিক্ত ঘুমের বৈশিষ্ট্যও দেখা দেয়। কোন ধরনের কারণ ছাড়াই ঘুমাতে থাকেন অনেকে।

৪. শারীরিক পরিবর্তন: এলএসডি-তে আসক্তদের যেসব শারীরিক পরিবর্তন ঘটে তার মধ্যে রয়েছে, চোখের মণিতে পরিবর্তন বিশেষ করে বড় হয়ে যাওয়া, শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হওয়া, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার মতো বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।

৫. জীবনযাত্রায় পরিবর্তন: এলএসডি মাদকে আসক্তির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ব্যবহারকারীর জীবনযাত্রায় নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। তিনি হয়তো কারো সাথে মিশতে চাইছেন না বা বন্ধু বান্ধবের পরিমাণ কমে যেতে দেখা যায়।

অনেক সময় আবার এর বিপরীতও দেখা যায়। আগের বন্ধুদের সাথে না মিশলেও নতুন করে বন্ধুও তৈরি হতে পারে। আর্থিক চাহিদা আগের তুলনায় বেড়ে যেতে পারে। নিজের প্রতি যত্ন নেয়ার বিষয়ে উদাসীনতা দেখা দেয়া, ক্লাসে ফাঁকি দেয়ার মতো বৈশিষ্ট্য দেখা যেতে পারে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

 

ad

পাঠকের মতামত