357313

মাগফিরাত অর্জনের মাস রমজান

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান: আল্লাহ তায়ালা নিজেই ক্ষমার এক বিশাল আধার। মানুষ যখন ভুল করে অনুতপ্ত হয়। তাঁর দিকে ফিরে আসে, তিনি সেই বান্দার দিকে ক্ষমার হাত প্রসারিত করে দেন। তিনি বান্দার যাবতীয় পাপরাজি ক্ষমা করেন বলেই তার নাম গফুরুর রহিম। রমজান রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস।

এই মাসের মধ্য দশকে তিনি অগণিত মানুষকে ক্ষমা করে দেন। কোরআন নাজিলের এই মাস অত্যন্ত বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ। যেহেতু ভুল করা মানুষের স্বভাব। পৃথিবীর আদি মানব হজরত আদম আ:-ও ভুল করেছিলেন। সুতরাং কোনো মানুষই ভুলের উর্ধ্বে নয়। কিন্তু আফসোস তাদের জন্য যারা ভুল করেও সেই ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় না। সুতরাং ঐ সমস্ত গুনাহগার বান্দার জন্য এটাই অত্যন্ত লজ্জার বিষয় যে, জীবনে রমজান পেল অথচ নিজের গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারল না।

তাই রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্য তাদের জন্য, যারা রমজান মাস পেয়েও নিজেদের গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারল না।’ (বুখারি)। মানুষ মানুষের প্রতি অন্যায়-অবিচার করে। আর যখন এই জালেম মাজলুমের কাছে ক্ষমা চাইতে যায় সে বিরক্ত হয়। গোস্বা করে। ক্ষমা করতে চায় না। কখনো কখনো এমন হয় সে প্রতিশোধ না নিয়ে ছাড়ে না। অথচ বিশ^ জাহানের মালিক মহান আল্লাহর সাথে কখনো আমরা জেনে আবার কখনো না বুঝে শত অন্যায় করে থাকি। অথচ এরপরেও বহু নেয়ামত দিয়ে তিনি আমাদের ধন্য করেছেন। তার সাথে এমন গুনাহ করা আমাদের উচিত ছিল না। তবুও আমরা গুনাহ করি। জুলুম করি নিজেদের উপর। আবার আমরা যখন নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তাঁর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি খালি হাতে আমাদের ফিরিয়ে দেন না। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় হাবিবকে লক্ষ করে বলেন,‘হে নবি, তুমি আমার বান্দাদের বলে দাও, আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আল হেজর, আয়াত : ৪৯)।

নবি করিম সা: ছিলেন নিষ্পাপ। তবুও তিনি প্রতিদিন সত্তর বারের অধিক বা একশো বার তাওবা এস্তেগফার করতেন। হাদিসে কুদসিতে বলা হয়েছে,‘বান্দা যদি দৈনিক সত্তর বার অপরাধ করে আর সত্তর বার ক্ষমা চায়, আমি আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেব।’ তাই মাগফিরাতের এই মাসে নিজের গুনাহ থেকে নাজাতের জন্য অধিক পরিমাণে তাওবা-এস্তেগফার করতে হবে। আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা তাঁর মহিমান্বিত গফুর ও গফফার নামের অছিলায় আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।

রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘শেষ রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ডেকে ডেকে বলতে থাকেন,‘কে আছো আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার? ক্ষমা চাও, আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো।’ (মুসলিম)। অন্য এক হাদিসে হজরত সাদ্দাদ ইবনে আউস রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন,‘যদি কেউ সকাল-সন্ধ্যায় একিনের সাথে সাইয়েদুল এস্তেগফার পড়ে, সে যদি ওই দিন রাতে বা দিনে ইন্তেকাল করে, তাহলে সে জান্নাতি।’ (বুখারি)।

গুনাহ মাফের উদ্দেশে আমাদের এস্তেগফার করতে হবে। আর এটা অভ্যাসে পরিণত করা অতি উত্তম কাজ। কারণ হাদিসে এর তিনটি পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে। এক. আল্লাহর তার জীবনের কঠিন অবস্থা থেকে তাকে বাঁচিয়ে দেবেন। দুই. তাকে পেরেশানি থেকে মুক্ত রাখবেন। তিন. তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করবেন যা সে কল্পনাও করতে পারেনি।

সুতরাং এই মাগফিরাতের দশকে গুনাহ মুক্তির নিয়তে বেশি বেশি তাওবা-এস্তেগফার করতে হবে। আর পাপ থেকেও ফিরে থাকতে হবে। এ মাসে যেমন একটি ফরজ ইবাদতে সওয়াব অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ ইবাদতের সমান। আর একটি নফল ইবাদতের সওয়াব অন্য মাসের ফরজের সমান হয়। তেমনি এ মাসের গুনাহগুলোও কঠিন। তাই সব ধরণের খারাপ কাজ থেকে বিরত থেকে মুক্তি লাভের আশায় বেশি বেশি ভালো কাজ করতে হবে। তাহলে এই মাগফিরাতের দশকের ফজিলত হাসিল করা যাবে। এই অভ্যাস শুধু মাগফিরাতের মাস রমজানে নয়, অন্যান্য মাসগুলোতেও অব্যাহত রাখতে হবে।

 

ad

পাঠকের মতামত