
চাকরি ছেড়ে রিকশাওয়ালা, এবার কি হইবো?
নিউজ ডেস্ক।। চৈত্রের কাঠফাটা ঠা ঠা রোদে রাজধানীর ধানমন্ডি কলাবাগান মাঠের পাশে রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মো. শাহাবুদ্দিন।
সোমবারের তীর্যক সূর্যের দহনে পুড়ে যাচ্ছে যেন তার দেহ। মাথার ঘাম গা বেয়ে মাটিতে পরছে অনবরত।
তারপরও ‘খ্যাপের’ আশায় সরছেন না সেখান থেকে। জিজ্ঞেস করলে তার উত্তর, ‘শরীর দিয়া কি হইবো। কাইলকা থেইক্কা তো আর রিকশা লইয়া বের হইতো পারবো না। হেরপর (তারপর) সংসার কেমবা চালাইবো হেই চিন্তায় রইদ-টইদের (রোদ) খিয়াল নাই, ভাই।’
শাহাবুদ্দিন শহরের শেখেরটেক এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের শফিপুর থানায়। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। বড় মেয়ে এবার নবম শ্রেণি ও বড় ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।
করোনাকালের আগে শাহাবুদ্দিন রাজধানীর আদাবরের ডাইনামিক ফ্যাশনের সহকারী কাটিং মাস্টার ছিলেন। গত বছর করোনায় তার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে তিনি দুর্দশায় পড়েন। কোন উপায় না পেয়ে রিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
তারপর থেকে ১০০ টাকায় রিকশা ভাড়া নিয়ে অতিরিক্ত পরিশ্রম করে টানাটানির মধ্যেই সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বুধবার থেকে সরকারের কঠোর লকডাউন শুরু হওয়া নিয়ে দুচিন্তায় পড়েছেন তিনি।
শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘সকাল থেইক্কা অনেক রাইত পর্যন্ত রিকশা চালাই। ৬০০/৭০০ টাকা কামাই করি। হেই দিয়া পুলাপান লইয়া কোনোমত বাঁইচা আছি। এইবার কি হইবো হেইডাই ভাইবা পাচ্ছি না।’
শুধু শাহাবুদ্দিনই নন, রাজধানীতে বেশ কয়েকজন রিকশাওয়ালার সঙ্গে কথা বলে কঠোর লকডাউন নিয়ে এমন দুচিন্তার কথা জানা যায়। ঢাকায় অনিশ্চিত জীবন নিয়ে অনেকে জানালেন গ্রামে চলে যাওয়ার কথা। আবার অনেকে ভেবে পাচ্ছেন না কি করবেন।
এমন মানুষদের মধ্যে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে ভাড়া নিয়ে রিকশা চালান মোহাম্মদ শহিদ। চল্লিশউর্ধ্ব বয়সী এই রিকশাওয়ালার গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার গাবতলী এলাকায়। করোনা কালের আগে তিনি হাজারীবাগ এলাকার একটি লেদার কারখানায় চাকরি করতেন।
ঢাকায় তিনি ২৫ বছর ধরে আছেন। গত বছর করোনায় তার প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন রিকশা চালান। তিনিও মা, স্ত্রী, দুই মেয়ের সংসার চালানো নিয়ে মহা দুচিন্তায় রয়েছেন।
বাংলাদেশ জার্নালকে শহিদ বলেন, ‘করোনায় কারখানা বন্ধ হওয়ার পর কি যে সমস্যা পড়ছিলাম। আল্লাহই জানেন। মানুষের সহযোগীতায় কোনো মত বাঁইচা আছিলাম। আবার সেই দুর্যোগ আইলো আমাগোর। এইবার আর ঢাকা থাহুন যাইবো না। কাইল (কাল) দেশে (গ্রামে) যামুগা। দেশে যাইয়া ধান কাটুম। এহানে থাকলে এইবার আর বাঁছুম না।’
প্রায় একই রকম অবস্থা রিকশা চালাক খালেদ মিয়ার। তিনি সিটি কলেজের সামনে খ্যাপের আশায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। কথা হলে করোনায় হতাশাগ্রস্ত এই রিকশাওয়ালা জানান, আজ রাতেই ট্রাকে করে ময়মনসিংহ গফরগাঁও চলে যাবেন। উৎস: বিডি-জার্নাল।