356112

করোনা টেস্ট; ইট, পাথর আর বোতলের সিরিয়াল বিক্রি হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়

ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই মাকে নিয়ে হাসপাতালের সামনে অপেক্ষা রফিকুল ইসলামের। সকাল ৮ টায় মানুষের ভিড়ে রেজিস্ট্রেশন করতে ব্যর্থ হলে আশ্বাস পেলেন দালালের হাত ধরে। জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা বলছেন, রাত ১২ টা থেকে এখানে সিরিয়াল দেওয়া হয় ইট, পাথর আর বোতল দিয়ে। সকালে সিয়িয়াল বিক্রি হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়।

কোভিড ডেডিকেটিড ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-২ এর সামনের চিত্র আরো ভয়াবহ। রাজধানীর বকশিবাজারের বাসিন্দা তৈয়ব হোসেন বলেন, গেটে ঢোকার সময় কয় হাসপাতালে বেড তো খালি নাই, কারো লগে কি কথা কইছেন? আমাগো লগে কন্ট্রাক্ট করেন, বেডের ব্যবস্থা কইরা দিমু।

পুরান ঢাকা থেকে আসা মাহবুব আলম নামে এক রোগীর স্বজন জানান, সকাল ১১ টা থেকে চার ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তারা বেড পাননি। চিকিৎসকরা নাম-টেলিফোন নাম্বার রেখে বলেছেন, বেড খালি হলে ফোন করে ডেকে ভর্তি করাবেন। এটা কি সান্ত্বনা নাকি সত্যি, কে জানে?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা ডেডিকেটেড রাজধানীর ১০টি সরকারি হাসপাতালের প্রায় প্রতিটিতেই এক শ্রেণির দালাল এই মহামারির মধ্যেও রোগী ভর্তি করিয়ে অবৈধ ব্যবসায় নেমেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে এ দালালচক্রের সদস্যরা করোনা আক্রান্ত রোগীর স্বজনদের কাছে গিয়ে বেড পাইয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয়।

হাসপাতালগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কোভিড রোগীদের ভর্তির নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৪ শতাংশের কম এবং ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যাজমা, কিডনি ও রোগ প্রতিরোধ কম এমন রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৬ শতাংশের কম হলে ভর্তিযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল’র পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ফেব্রুয়ারি ও মার্চের মাসের তুলনায় এখন কয়েকগুণ রোগীর চাপ বেড়েছে। সকাল ৮ থেকে ৯ টার মধ্যে ফাকা শয্যা গুলো ভরে যায়। ক্রিটিকাল রোগী ছাড়া এ মুহূর্তে কোনো রোগী ভর্তি সম্ভব হচ্ছে না। রোগী ভর্তি নিয়ে কেউ বাণিজ্য করে থাকলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী মোশতাক হুসেইনকে হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে দালালের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে বলেন, দয়া করে আগামীকাল আমাকে কল করে জানতে চাইবেন। এ দালালদের বিষয়ে কি ব্যবস্থা নিয়েছি।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ বলেন, আগে আমরা মৃদু ও মাঝারি লক্ষনের রোগী ভর্তি করতাম। এখন আমরা এ ধরনের রোগীদের বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিচ্ছি এবং বলে দিচ্ছি যতক্ষণ পর্যন্ত অক্সিজেনের চাহিদা তৈরি না হয় ততক্ষণ বাসাতেই চিকিৎসা চালিয়ে যাবেন।

 

ad

পাঠকের মতামত