355301

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত গণপরিবহনে, দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া

নিউজ ডেস্ক।। করোনা মহামারি কারণে দেশে আবারও দ্রুত সংক্রমণ বাড়ায় সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে গণপরিবহনকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নতুন নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। আজ বুধবার (৩১ মার্চ) থেকে এ নতুন নিয়ম কার্যকর হলেও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ করছেন যাত্রীরা।

আবার কেউ কেউ স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চালাতে দেখা গেছে। এছাড়া সাধারণ ছুটি ছাড়া সড়কে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। গাড়িতে না উঠতে পেরে শতশত যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। গাড়ি না পেয়ে অনেককে হেঁটে অফিসে যেতেও দেখা গেছে।

এদিকে, সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগের নিয়মে ফিরে যেতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

আজ বুধবার সকাল ৮টার পর থেকে রাজধানীর মহাখালী, ফার্মগেট, বনানী ও কাওরানবাজার সরেজমিনে ঘুরে গণপরিবহণের এমন চিত্র জানা গেছে।

মিরপুর থেকে বিআরটিসি একটি বাস স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই এক সিট ফাঁকা না রেখেই গুলিস্তানের দিকে যাচ্ছিলেন ফার্মগেট এসে থামলে দেখা যায়, ঘেঁষাঘেঁষি করে যাত্রীরা দাঁড়িয়ে আছেন। নিয়ম না মেনে কেন চলছেন, জানতে চাইলে গাড়িটির সহকারি রসূল মিয়া বলেন, বারবার মানা করার পরও যাত্রীরা ঠেলাঠেলি করে গাড়িতে উঠছেন। আমরা কোনোভাবেই মানাতে পারছিন তাদেরকে। স্বাস্থ্যবিধি নেই আবার ভাড়াও বেশি নিচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, যাত্রীর চাপ বেশি হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানা অনেকক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না। ভাড়া নতুন নিয়মেই নিচ্ছি।

আব্দুল্লাহপুর থেকে ছেড়ে আসা মতিঝিলগামী আরেকটি বিআরটিসি বাসের একই চিত্র দেখা গেছে। মহাখালী বাস উঠে গিয়ে দেখা যায়, সিট ছাড়াও অনেকই ঝুলে দাঁড়িয়ে আছেন। আবার কেউ কেউ গাড়ির দরজার আশেপাশে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ কেউ মাস্ক পড়ছেন আবার কারো মুখে মাস্ক নেই। যাত্রী শফিকুল বলেন, হঠাৎ করে গণপরিবহনে ৬০ শতাংশ যাত্রী নেওয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য অনেক অসুবিধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি সকাল ৮টায় এসে নীলক্ষেতে ১০টা পেরিয়ে গেলেও কোনো বাসে উঠতে পারিনি। পরে এক পুলিশের সহায়তায় বিআরটিসি বাসে উঠলাম। গাড়িতে বসা দূরের কথা দাঁড়ানোর জায়গাও নেই। আজকে আমার মতো হাজার যাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা নীলক্ষেতে দাঁড়িয়ে আছেন। কোনো ছুটি ছাড়া এমন নিয়ম আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে।

খিলগাঁও পুলিশ ফাঁড়ি থেকে লাব্বাইক বাসে করে কাওরানবাজারে আসলেন আরেক যাত্রী কাউছার। বাস থামলেই এ যাত্রীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে দিলে আমার আসে ১৬ টাকা। স্বাভাবিক ভাড়া ১০ টাকা। তবে, তারা নিয়েছে ২৫ টাকা, যা দিগুণের চেয়ে বেশি। কোনো নিয়ম নেই গণপরিবহন।

৬৫ বছরের এক বৃদ্ধা আক্তার হোসেন অন্যান্য যাত্রীর মতো ঝুলে গুলিস্তান যাচ্ছেন। তিনি বলেন, মিরপুর-১০ নম্বরে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেছি। কোনো গাড়ি পায়নি, শেষে ভিড়ের মধ্যে বিআরটিসিতে উঠেছি সিড়ির পাশে দাঁড়িয়ে যাছি। কী করবো! মিরপুর হাজার হাজার যাত্রী গাড়ি পাচ্ছে না!

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী উদ্বেগ জানিয়ে দৈনিক ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, সাধারণ ছুটি ঘোষণা না করে গণপরিবহনে এমন সিদ্ধান্ত যাত্রীদের ভোগান্তি ছাড়া আর কিছু নয়। ৫০ শতাংশ যাত্রী বাসে গেলে বাকি ৫০ শতাংশ যাত্রী কীভাবে যাতায়াত করবে? গাড়ি সংখ্যা কী বেড়েছে? সবারই তো অফিসে যেতে হবে, কাজে যেতে হবে। এ বিষয়ে গতকালও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি।

সরকারের ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া ছাড়াও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ আছে এমন প্রশ্নের উত্তরে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, ভাড়া তো আগে থেকে বাড়িয়ে নিচ্ছে অনেক গাড়ি। ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া নানাভাবে নিয়েছে প্রতিনিয়ত। এখন সরকার যে নতুন ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সেটা আরও বেশি পড়বে।

সাধারণ ছুটি না দিয়ে গণপরিবহণে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলাচল করার সিদ্ধান্তকে প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পড়ছে যাত্রীরা। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১০০ ভাগ যাত্রী নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

দেশে করোনার সংক্রমণ আবার বেড়ে যাওয়ায় বাস-মিনিবাসে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সরকারি নির্দেশনার পর বাস মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ালো। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গতকাল মঙ্গলবার গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলার নির্দেশনা জারি করে সরকার। এরপর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে বৈঠকে বাসমালিকেরা এ দাবি জানান। উৎস: ইত্তেফাক

 

ad

পাঠকের মতামত