355268

৮ম শ্রেণির কিশোরীকে ধর্ষণ: ৫ লাখ টাকায় এনজিও অফিসে ‘দফারফা’

নিউজ ডেস্ক।। পার্বত্য শহর রাঙামাটিতে ৮ম শ্রেণির এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর ‘৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ’ দিয়ে সেই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২৫ মার্চ মধ্যরাতে শহরের কেকে রায় সড়ক এলাকায় মেয়েটির ফুফুর বাসায় এই ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে।

চার দিন পর রবিবার (২৮ মার্চ) শহরের বনরূপার হ্যাপির মোড় এলাকায় অবস্থিত নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি এনজিও অফিসে ৫ লাখ টাকায় ঘটনাটি রফাদফা হয়। অভিযুক্ত জুয়েল চাকমা বিজিবি সদস্য বলে জানা গেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় কর্মরত জুয়েল ছুটিতে রাঙামাটি এসেছেন।

ভুক্তভোগী কিশোরী জানিয়েছে, বিজিবি সদস্য জুয়েল চাকমা সম্পর্কে ফুফা হয়। গত ২৫ মার্চ ছুটি কাটাতে চুয়াডাঙ্গা থেকে রাঙামাটির কেকে রায় সড়কের তার নিজ ভাড়া বাড়িতে আসে। ফুফু চাকরির কারণে সেদিন বিলাইছড়িতে অবস্থান করছিলেন। সেদিন রাত ১০টার দিকে রাতের খাবার শেষে ফুফা চুয়াডাঙ্গা থেকে আনা বেলের শরবত খাওয়ায়। আমি ও আমার ফুফাত বোন খাই। শরবত খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাথা ঘুরালে আমার রুমে যাই এবং ঘুমিয়ে পড়ি। রাত ২টার দিকে ঘুম ভেঙে গেলে নিজেকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় দেখতে পাই। লাইট জ্বালানোর পর ফুফাকে রুমে দেখি।

কিশোরী জানায়, পর দিন পাশের বাড়িতে তার স্কুল শিক্ষিকার নিকট গিয়ে বিষয়টি খুলে বলে এবং তার মা বাবাকে খবর দেয় ভুক্তভোগী কিশোরী। এ ঘটনার জন্য জুয়েলের শাস্তি দাবি করে ওই কিশোরী।

স্কুলশিক্ষিকা প্রতিষ্ঠা চাকমা বলেন, গত ২৬ তারিখ মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য খুব সকালে মাঠে চলে যাই। দুপুরে ঘরে ফিরে আমার মেয়ের কাছে ঘটনাটি শুনে তাকে ডেকে বিষয়গুলো জেনেছি। ভুক্তভোগী কিশোরী তার মেয়ের সহপাাঠি। পরে তাদের পারিবারিক সমঝোতা হয় বলে জেনেছি। আমাদের আর কোনো কিছু বলা হয়নি।’

অভিযুক্ত জুয়েল চাকমা বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এটি একটি পারিবারিক বিষয়, পারিবারিকভাবেই বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে।

ভুক্তভোগী কিশোরীর মা জানিয়েছেন, রবিবার রাতে রাঙামাটি শহরের চম্পক নগর মোড়ে একটি বেসরকারি এনজিও অফিসে সালিশি হয়। সালিশে জুয়েল তার দোষ স্বীকার করে সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং আমার মেয়ের পড়াশুনার খরচ চালানোর দায়িত্বভার নেয়। মেয়ের নামে একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলে প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা করে মোট ৫ লাখ টাকা দেবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। একদিকে আত্মীয় আর আমরাও গরিব মানুষ। তাই মেনে নিয়েছি। কি আর করব!

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর রাঙামাটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আইনজীবী অ্যাডভোকেট জুয়েল দেওয়ান এই সালিশের কাগজপত্র লেখালেখি করেছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীর মা।

তবে অ্যাডভোকেট জুয়েল দেওয়ান বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘যারা নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে, তারাই এটি করেছে, আমাকে বিষয়টি অবহিত করেছে মাত্র। ওখানে নারী নেত্রী সুগন্ধী চাকমা ও অনিতা দেব বর্মন ছিলেন বলে শুনেছি। আমি কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট নই।’

নারী নেত্রী সুগন্ধী চাকমা বলেন, মেয়ের পরিবার মামলা করতে রাজি হননি। যেহেতু তারা উভয়ে আত্মীয়। আমরা তো কোনো সমাধান দিতে পারি না। আমরা শুধু রাস্তা দেখিয়ে দিতে পারি মাত্র। ওখানে মেয়ের দাদু উপস্থিত ছিলেন, তিনিই সমাধান দিয়েছেন, যেটি হলো মেয়েটি অন্য কোথাও থাকবে আর মেয়েটির লেখাপড়ার জন্য প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা করে মোট ৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে।

যে এনজিও অফিসে সালিশ হয়েছে সেই এনজিও ‘প্রোগ্রেসিভ’র প্রধান নির্বাহী সুচরিতা চাকমা’র সঙ্গে বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

রাঙামাটি কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ কবির হোসেন জানিয়েছেন, ‘এ ধরনের ঘটনার কোনো অভিযোগ রবিবার রাত পর্যন্ত থানায় আসেনি।’ উৎস: কালের কণ্ঠ।

 

ad

পাঠকের মতামত