354965

কয়েকটি জরুরি কথা শিশুদের মানসিকতা উন্নয়নে

নিউজ ডেস্ক।। শিশুর মনোজগৎ এক বিষ্ময়কর জগৎ।এই মনোজগৎ জন্মের পর থেকে ধীরে ধীরে বিকশিত হয়। শিশুরা পরিবার ও সমাজের সদস্যদের সংস্পর্শে গড়ে ওঠে। তাই পরিবার ও সমাজের সদস্যদের আচারণগত প্রভাব শিশুদের উপর লক্ষণীয়।

শিশুদের মধ্যে যে সমস্ত গুণাবলী ছোটবেলা থেকেই তাদের মধ্যে অনুশীলন করাতে হবে তা হচ্ছে সৎ হওয়া, সত্যবাদীতা, প্রতারক না হওয়া, দেশপ্রেমিক হওয়া, আক্রমণাত্মক না হওয়া, সদয় হওয়া ও দানশীল হওয়া ইত্যাদি। আমরা প্রায়ই দেখি যে কিছু কিছু শিশু খুবই আক্রমণাত্মক।

আর এই সমস্ত শিশুরা পরবর্তীতে তাদের অধিকাংশই কিশোরগ্যাংদের সাথে জড়িত হয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে শিশুদের সাথে আমাদের আচারণগত দিক দিয়ে কি রকম সম্পর্ক হওয়া উচিত ? আমরা জানি শিশুরা অনুকরণীয়। তাই শিশুদের মধ্যে সুন্দর আচারণ ও সৎ চিন্তা চেতনা তৈরির ক্ষেত্রে নিম্নের পদক্ষেপগুলো নেওয়া যেতে পারে।

কোমল হওয়া: শিশুরা অনুকরণীয়।তারা পরিবারের সদস্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজের মধ্যে যে রকম আচার ব্যবহারের অভিঙ্গতা নিয়ে বড় হবে তাদের মধ্যে সেই রকমই প্রভাব পড়বে।যদি আমরা কোমল স্বরে কথা বলি, শিশুরাও এইভাবেই আমাদের সাথে কোমল স্বরে কথা বলবে।আর এই সুন্দর অভ্যাসটি শিশুর মনের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে মৃত্যু পর্যন্ত শিশুটি সকলের সাথে কোমল স্বরে কথা বলবে। আমরা যদি পৃথিবীর সকল নবী রাসূল ও শিশু মনোবিজ্ঞানীদের জীবনী লক্ষ্য করি তারা সকলেই শিশুদের প্রতি কোমল ছিলেন এবং শিশুদের প্রতি কোমল হওয়ার জন্য সাধারণ লোকজনের প্রতি তাগিদ দিতেন। তাই শিশুদের সাথে সব সময় আমাদের কোমল স্বরে কথা বলা উচিত।

অনুমতি অভ্যাসের চর্চা: আমরা মনে করি শিশুদের কাছ অনুমতি ছাড়া চলে যাওয়া, শিশুদের কাছ থেকে অনুমতি ছাড়া কিছু নেওয়া, অনুমতিক্রমে কোন শিশুর পাশে বসা,এই সমস্ত কাজ প্রয়োজন নেই। আসলে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কোন শিশুর অনুমতি নিয়ে কাজ করলে তার মধ্যেও কোন কাজ করার পূর্বে অভিভাবকদের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে।তাই শিশুরা যখন থেকে কথা বলতে পারবে,ঐ দিন থেকে কমপক্ষে ৬ বছর পর্যন্ত এই অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। তাহলে তাদের মনেও কোন কাজ করার পূর্বে বড়দের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে কাজ করার অভ্যাস গড়ে ওঠবে।

সৎ মানুষদের জীবনী আলোচনা : সৎভাবে জীবন পরিচালনা করা মানুষের সুন্দর মানবিক গুণাবলির মধ্যে অন্যতম একটি গুণ।সৎ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য হযরত মুহাম্মাদ (স), হযরত ওমর (রা) ও পৃথিবীর যত ভালো মানুষ আছে (যার যে ব্যক্তিদের পছন্দ) তাদের গল্প শোনাতে হবে। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের বাইরে যে সমস্ত সৎ ব্যক্তি আছে তাদের জীবনী শিশুদের পড়াতে হবে ও গল্প আকারে বলতে হবে। তাহলে তাদের জীবন সৎভাবে গড়ে উঠবে। শিশুরা সৎভাবে জীবন পরিচালনার জন্য অনুপ্রেরণা পাবে।

ভালো গুণাবলির অনুশীলন: শিশুদের মধ্যে মানুষের মানবিক গুণাবলি তৈরি করতে হলে ছোটবেলা থেকে শিশুদের মধ্যে মানবিক গুণাবলির চর্চা করাতে হবে। কথায় আছে কোন কিছু অনুশীলন ছাড়া অর্জন করা যায় না। অর্থাৎ ছোটবেলা থেকেই সৎ, ন্যায়পরায়ণতা, দেশপ্রেম, ইত্যাদি যত মানবিক গুণাবলি আছে ছোটবেলা থেকে এইগুলো শিশুর মনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে হবে। তাদের দ্বারা বিভিন্ন ভালো কাজ করার মাধ্যমে এই সমস্ত ভালো গুণাবলি শিশুদের মধ্যে চর্চা করাতে হবে।

প্রতারণা পরিহার: মানুষের সাথে প্রতারণা করা খুবই খারাপ ও নিন্দনীয় কাজ। তাই শিশুদের এই অভ্যাস যাতে গড়ে না ওঠে এই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তাই আমাদের শিশুদের সাথে প্রতারণা করা যাবে না এমনকি শিশুদের সামনে অন্যদের সাথেও কোন প্রতারণামূলক কাজ করা যাবে না। আর সমাজের সকল শিশুদের সৎভাবে গড়ে তোলার জন্য সমাজের সকল মানুষ প্রতারণামূলক আচারণ পরিত্যাগ করতে হবে।

সুস্থ্য বিনোদনের ব্যবস্থা: শিশুদের মনমানসিকতা চাঙ্গা রাখার জন্য তাদের সুস্থ্য বিনোদন প্রয়োজন। তবে যে সকল বিনোদন শিশুদের প্রতারণার শিক্ষা দিতে পারে, মেয়েদের ইভটিজিংয়ের করার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা যুগায়, সন্ত্রাসী মনোভাব তৈরি করে ,অনৈতিক ও অপসংস্কৃতির শিক্ষা দেয়, এই সমস্ত সকল বিনোদন থেকে শিশুদের বিরত রাখা উচিত। আরও সতর্ক থাকতে হবে যে শিশুদের সামনে এমন কোন বিনোদন আয়োজন না করা কিংবা এমন কোন বিনোদন না প্রদর্শন করা যা শিশুদের নৈতিক গুণাবলি থেকে তাদের সরিয়ে দেয় কিংবা প্রতারণার শিক্ষা দেয়।

ধর্মীয় অনুপ্রেরণা: প্রতিটি ধর্মই মানবিক গুণাবলি অর্জনের জন্য তাগিদ বহন করে। শিশুদের বুঝাতে হবে মানবিক গুণাবলি অর্জন না করতে পারলে পরকালে কঠিন শাস্তির আওতায় যেতে হবে।‌ তাই এই বিষয়ে পরিবারের সদস্যরা, সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষকেরা সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে যাতে নৈতিক গুণাবলি অর্জন করার জন্য শিশুদের সহজ হয়।

দেশপ্রেম: দেশপ্রেম মানুষের অন্যতম একটি বড় গুণ। একজন সত্যিকারের মানবিক গুণাবলির অধিকারী মানুষ হতে হলে দেশপ্রেম থাকতে হবে। তার কাছে দেশের স্বার্থ নিজের জীবনের চেয়ে অনেক বড় হবে। শিশুদের দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে পৃথিবীর সেরা দেশপ্রেমিক মানুষদের গল্প শুনাতে হবে। পাশাপাশি শিখাতে হবে কোন কাজগুলো দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ। পাশাপাশি দেশপ্রেম জাগ্ৰত হয় এমন কাজে শিশুদের অংশগ্রহণ করাতে হবে।পারিবারের সদস্যরাও দেশপ্রেমিক হতে হবে কারণ শিশুরা মানবিক গুণাবলি প্রথমত পরিবার থেকেই অর্জন করে থাকে।

ন্যায়পরায়ণ ও সুবিচারক: ভালো মানুষের আরেকটি অন্যতম গুণ হচ্ছে ন্যায়পরায়ণ ও সুবিচারক হওয়া। আর যদি আমরা শিশুদের এই শিক্ষাটা দিতে চাই তাহলে তাদের প্রতি আমাদের ন্যায়পরায়ণ ও সুবিচার করতে হবে। পরিবারের সকল সদস্য সমাজের লোকজনের সাথে সুবিচারকের ভূমিকা পালন করতে হবে। পরিবারের সকল সদস্য একে অন্যের প্রতি ন্যায়পরায়ণ হতে হবে। পরিবারের সদস্যদের মাঝে কোন ভালোগুণ দেখলে শিশুরা এটি আন্তরিকভাবে গ্ৰহণ করে। এর পাশাপাশি শিশুদেরকে ন্যায়পরায়ণ শিক্ষা দেওয়ার জন্য হযরত মুহাম্মাদ (স) এবং পৃথিবীর সকল ন্যায় ন্যায়পরায়ণ ও সুবিচারক মানুষদের গল্প শুনাতে হবে। এর ফলে শিশুরা ন্যায়পরায়ণ ও সুবিচারক হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা পাবে।

উপহারের সময় সতর্কতা: আমরা শিশুদের বিভিন্ন উপলক্ষে বিভিন্ন ধরণের উপহার দিয়ে থাকি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে শিশুদের পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন আছে কিনা? এর উত্তর হচ্ছে অবশ্যই শিশুদের উপহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। শিশু গবেষকেদের মতে, শিশুদের খেলনার উপকরণ শিশুদের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই উপহার এমন হওয়া উচিত যা তার মনোজগতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। বাজারজুড়ে যেসব আমরা প্লাস্টিকের তৈরি খেলনা পিস্তল,বন্দুক বা এ ধরণের অস্ত্র রয়েছে এইগুলো শিশুদের কিনে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

 

ad

পাঠকের মতামত