354838

বিদেশে যাচ্ছে কচুরীপানা দিয়ে তৈরি নানা সামগ্রী!

নিউজ ডেস্ক।। কচুরিপানা দেখলেই অনেকে গেয়ে ওঠেন সেই বিখ্যাত গান ‘থাকিলে ডোবা খানা হবে কচুরিপানা’। যারা খাল-বিল ও পুকুর নদীতে জন্ম নেওযা কচুরীপানাকে অপ্রয়োজনীয়, পচনশীল উদ্ভিদ এবং মশক উৎপাদন কেন্দ্র বলে মনে করেন তারা নিশ্চিত অবাক হবেন যদি শোনেন ৫০ টাকা কেজি দামে গাইবান্ধায় প্রতি কেজি কচুরিপানা বিক্রি হয়।

শুকনো কচুরিপানার ডাটা দিয়ে তৈরি নানা সামগ্রী রপ্তানি হয় বিদেশে। এই খবরটিও তাদের কাছে হবে একবারে নতুন। অথচ বাস্তবে তাই ঘটেছে। গাইবান্ধা সদর উপজেলার গিদারী ইউনিযনের মদনের পাডা গ্রামের যুবক সুভাষ চন্দ্র বর্মন এই নতুন খবরের রূপকার।

তার কীর্তি এখন লোকের মুখে মুখে। ইতিমধ্যে জেলাপ্রশাসক মো. আবদুল মতিন বিসিকের মাধ্যমে তারে জন্য জামানত বিহীন ঋণের ব্যবস্থা করেছেন।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সুভাষের বিশাল কর্মযজ্ঞ। তিনি অপ্রয়োজনীয় কচুরিপানার ব্যতিক্রমী ব্যবহার শুরু করেছেন। নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন কচুরিপানা কেন্দ্রিক চারটি কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠান। তিনি প্রতিমাসে স্থানীয়ভাবে কচুরিপানা কিনে থাকেন। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকা থেকেও আসে বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করা শুকনো কচুরীপানা।

তার প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে গ্রামের আড়াই শতাধিক নারী ও কিশোরী কাজ করেন। যাদের হাতে তৈরি হয় দৃষ্টি নন্দন ফুলের টব, ব্যাগ বালতিসহ নানা ধরণের সামগ্রী। দেশীয় বাজারে এসব পণ্যের চাহিদা কম থাকলেও রপ্তানি হয় ইন্দোনেশিয়া, আমেরিকা, কানাডা, নেদারল্যান্ডসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে। তবে পুঁজির অভাবে এখন পর্যন্ত লাভের অংক তেমন বড় না। তবে সুভাষ থেমে নেই। তার সাথে থাকা কিশোরী ,তরুণী, গৃহবধূরা প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। মাস গেলে তাদের হাতে আসছে বেশ কিছু টাকা। এ জন্য সুভাষ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা চান।

দৃশ্যটি আসলেই অবাক করার মতো। গ্রামের নারী ও কিশোরীরা একসাথে বসে কচুরিপানার ডাটা দিয়ে তৈরি করছেন নানা ধরনের সৌখিন পণ্য। সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে বাড়ির কাজের পাশাপাশি নারীরা নেমে পড়ছেন এই কাজে। তৈরি করছেন কচুরীপানার ব্যাগ, বালতি, ফুলের টবসহ নিত্য নতুন সৌখিন পণ্য। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় অবসর সময়টা এভাবেই কাটছে শিক্ষার্থীদের। এতে করে পড়ালেখার ব্যায়, পাশাপাশি নিজের খরচ ছাড়াও মাস শেষে আট থেকে দশ হাজার টাকা আয় করছেন তারা।

এলাকার তরুণী উম্মে কায়সারা জানালেন, বছরখানেক আগে সুভাষ স্যার ও তার স্ত্রী তাদের সাথে কাজ করার প্রস্তাব দেন। অনেক যত্ন করে শেখান নানা ধরণের সামগ্রী তৈরির কাজ। প্রথম দিকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার বিষয়টি মাথায় ছিল না। করোনার প্রথমদিকে সারাদিন কাজ করে ১০০-১৫০ যা পাওয়া যেত তাই পরিবারের জন্য মূল্যবান ছিল। তারপর তৈরি জিনিস বাইরে নিয়মিত যাওয়া শুরুর পর এখন পারিশ্রমিকের অংক বেড়েছে। কাজ করতে ভালোই লাগে।

গৃহবধূ সালমা বেগম বলেন, আড়াই শ নারী একসাথে বসে কাজ শিখি। জিনিসপত্র বানাই, সেগুলো বিদেশ যায়। আমাদের মন ভরে যায়। সুভাষদা আমাদের যোগ্য পারিশ্রমিকও দেন।

সুভাষের সার্বক্ষণিক সঙ্গী তার স্ত্রী বললেন, তার স্বামী ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ শিখে নিজের গ্রামে এসে দরিদ্র নারীদের কাজ শেখান। তবে তার নিজের কোন জায়গা নেই, শ্বশুর বাড়িতেই তাকে থাকতে হচ্ছে। তাদের বানানো জিনিস ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে তৈরি সামগ্রী পাঠালে তারা নিজেদের অংশ কেটে নিয়ে লাভের টাকা পাঠায়। কখনো কখনো স্থানীয়ভাবেও পানা কিনতে হয়। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরো বেশী সংখ্যক নারীদের স্বাবলম্বী করে তোলা সম্ভব।

কচুরিপানা কেন্দ্রীক কুটির শিল্পের উদ্যোক্তা সুভাষ চন্দ্র বর্মণ বললেন, ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ছয় বছর ঢাকার একটি কুটিরশিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ শিখে স্ত্রীকে নিয়ে ২০১৬ সালে বাড়ি ফিরে কাজটি শুরু করি। প্রথমে ছোট পরিসরে শুরু করলেও এখন জেলার চারটি এলাকায় আড়াই শতাধিক নারী ও কিশোরী এই কাজের সাথে যুক্ত হয়েছেন। আমার নদীভাঙ্গণ কবলিত এলাকার নারীদের জন্য আরো বড় পরিসরে কাজ করতে চাই। মানবিক জেলা প্রশাসক সেই সুযোগটি করেদিলেন।

এদিকে জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন সোমবার ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু রায়হান দোলন, বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রবীনচন্দ্র রায়সহ অন্যকর্মকর্তাদের নিয়ে সুভাষের বাড়িতে যান। সেখানে তিনি কচুরীপানার এই কুটির শিল্পটিকে বিকশিত হতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। বিসিক কর্মকর্তার মাধ্যমে তিনি এই সপ্তাহের মধ্যে সুভাষের জন্য বিনা জামানতে তাৎক্ষণিকভাবে দুই লক্ষ টাকা লোনের ব্যবস্থা করেন। ডিসি বলেন, সুভাষ তার শিল্পকে বিকশিত করতে পারলে তার এই লোনটিকে ৫ লাখ টাকায় উন্নীত করার ব্যবস্থা করা হবে। উৎস: কালের কণ্ঠ।

 

ad

পাঠকের মতামত