354820

অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণে দ্বিগুণ বেড়েছে গর্ভপাত

ডেস্ক রিপোর্ট।। যৌ’ন ও প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা গুটমাকার ইনস্টিটিউটের জরিপ বলছে, ‘বাংলাদেশে ২০১০ সালে ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৬০০টি গর্ভপাতের ঘটনা ঘটে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে সংখ্যাটি প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ১১ লাখ ৯৪ হাজার।

২০১০ সালে গর্ভবতীদের মধ্যে প্রতি হাজারে গর্ভপাত করান ১৮ দশমিক ২ জন, যাদের বয়স ১৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে। ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ১ হাজারে ২৯ জন।’

চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি। পরিচ্ছন্নতাকর্মী রেহানা বিমানবন্দর সড়কের বলাকা ভবন লাগোয়া ঝোপঝাড় পরিষ্কারে ব্যস্ত। হঠাৎ চোখে পড়ে, ঝোপের ভেতরে পড়ে আছে দু-তিন দিনের এক নবজাতক।

রেহানার কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরা ওই নবজাতককে উদ্ধার করে ভর্তি করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এখন তার ঠিকানা আজিমপুরের সরকারি দিবাযত্ন কেন্দ্র ছোটমণি নিবাস।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার হয়েছে পরিত্যক্ত ৩০ নবজাতক। আর অর্ধযুগের হিসাবে এই সংখ্যা ২১০। ফেলে দেয়া নবজাতকদের অনেককে উদ্ধার করা হয়েছে মৃত বা অর্ধমৃত অবস্থায়।

প্রায়ই খবরের শিরোনাম হওয়া নবজাতক উদ্ধারের পেছনের ঘটনা অনুসন্ধান করেছে। বিশেষজ্ঞরা এর জন্য দায়ী করেছেন অপরিকল্পিত অথবা অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণকে। তারা বলছেন, সামাজিক ও আইনগত জটিলতা এড়াতে অনেকেই গোপনে গর্ভপাত ঘটিয়ে ফেলে দেন নবজাতককে।

গত এক দশকের বিভিন্ন পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে আগের চেয়ে গোপন গর্ভপাতের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। শুধু গর্ভধারণ করা নারী নন, আইনি বিধিনিষেধের কারণে বিষয়টি গোপন রাখছেন গর্ভপাতসংশ্লিষ্ট চিকিৎসাকর্মীরাও। একই সঙ্গে অনিরাপদ গোপন গর্ভপাতে জীবনসংকটে পড়ছেন অসংখ্য নারী।

রাজধানীর গুলশানের এক নারী তানিয়া (ছদ্মনাম)। দেবরের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের একপর্যায়ে গর্ভবতী হন তানিয়া। পরে নিজেই বাসার পাশে এক বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে গর্ভপাত করান। তবে এর দুদিন পর জরায়ু থেকে রক্তপাত শুরু হয়।

অবস্থা খারাপ হলে এক বান্ধবীকে বিষয়টি জানান তানিয়া। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। চিকিৎসার এক পর্যায়ে মারা যান তিনি। এভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের পর হাতুড়ে চিকিৎসক, কবিরাজ, অদক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে গর্ভপাত করাতে গিয়ে তানিয়ার মতো অনেকেরই মৃত্যু হচ্ছে। কেউ কেউ আবার প্রাণে বেঁচে গেলেও ভুগছেন দীর্ঘ শারীরিক জটিলতায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জন্মনিরোধক ব্যবহার বা পদ্ধতিতে কোনো ত্রুটি থাকলেও গর্ভবতী হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এমন পরিস্থিতিতে গর্ভপাতকে বেছে নেন অনেকে।

এমআর-এর মোড়কে গর্ভপাত

দেশের আইনে ‘বিশেষ পরিস্থিতি’ ছাড়া গর্ভপাত পুরোপুরি নিষিদ্ধ।

ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩১২ ধারায় বলা হয়েছে: ‘কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী লোকের গর্ভপাত করায়, এবং যদি সে গর্ভপাত সরল বিশ্বাসে উক্ত স্ত্রী লোকের জীবন বাঁচাবার উদ্দেশ্যে না করা হয়ে থাকে, তবে সে ব্যক্তি তিন বছর পর্যন্ত যেকোনও মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে, অথবা অর্থ দণ্ডে, অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন এবং যদি স্ত্রী লোকটি শিশুর বিচরণ অনুভব করে, তবে সে ব্যক্তি সাত বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।’

দণ্ডবিধির ৩১৩ ধারায় বলা হয়েছে: ‘কোনো ব্যক্তি যদি পূর্ববর্তী ধারায় বর্ণিত অপরাধটি সংশ্লিষ্ট স্ত্রী লোকের সম্মতি ছাড়া সম্পাদন করে, স্ত্রী লোকটি আসন্ন প্রসবা হোক বা না হোক, তবে সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে অথবা ১০ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।’

৩১৪ ধারায় বলা হয়েছে: ‘কোনো ব্যক্তি যদি কোনো অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী লোকের গর্ভপাত করানোর উদ্দেশ্যে কৃত কোনো কাজের ফলে সেই স্ত্রী লোকটির মৃত্যু ঘটায়, তবে ওই ব্যক্তি ১০ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।’

৩১৫ ধারায় বলা হয়েছে: কোনো ব্যক্তি যদি কোনো শিশুর জন্মের পূর্বে এমন কোনো কাজ করেন, যাতে শিশুটি জীবিত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হতে না পারে বা জন্মের পরে তার মৃত্যু হয় এবং অনুরূপ কাজের ফলে শিশুটি জীবিত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ না হয় বা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার মৃত্যু হয় এবং যদি কাজটি মাতার জীবন রক্ষার জন্য সরল বিশ্বাসে কৃত না হয়, তবে ওই ব্যক্তি ১০ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন।’

এছাড়া, দণ্ডবিধির ৩১৬ ধারায় বলা হয়েছে: ‘যদি কোনো ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করেন, যা দ্বারা সে কোনো মৃত্যু ঘটালে তা হলে সে অপরাধজনক নরহত্যা অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হবেন এবং অনুরূপ কাজের সাহায্যে একটি জীবন্ত অজাত শিশুর মৃত্যু ঘটান, তবে ওই ব্যক্তি যে কোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে যার মেয়াদ ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে- দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।’

আইনে অন্তঃসত্ত্বার ‘জীবন বাঁচানোর’ মতো পরিস্থিতি ছাড়া অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে গর্ভপাতের উপর আইনি বিধিনিষেধ থাকলেও ১৯৭২ সাল থেকে সরকারস্বীকৃত এমআর (মিন্সট্রুয়াল রেগুলেশন) পদ্ধতি চালু আছে বাংলাদেশে।

এ বিষয়ে কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে এমআরকে বৈধতা দেয় সরকার৷ আগে এমআর করার সর্বোচ্চ সময়সীমা ছিল আট সপ্তাহ, কিন্তু এখন ১২ সপ্তাহ৷ প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেই এমআর-এর আলাদা বিভাগ আছে৷ প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোও বৈধভাবেই এমআর করছে৷’

তবে এই এমআর আর সাধারণ গর্ভপাতের মধ্যে একটি বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে দুস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের (ডিএসকে) যুগ্ম পরিচালক (স্বাস্থ্য) কল্লোল চৌধুরী বলেন, ‘এমআর মানে গর্ভপাত নয়। এটা এক ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি। কোনো নারী মিনস্ট্রেশন বন্ধ থাকলে বা গর্ভধারণের জটিলতার কারণ বের করতে আমরা ডায়াগনোস্টিক এমআর করে থাকি। এর মাধ্যমে জরায়ুতে কোনো জটিলতা বা অন্য কোনো সমস্যা আছে কি না সেটি বের করা হয়। আর থেরাপিউটিক এমআরের মাধ্যমে এই সমস্যা দূর করে মিনস্ট্রেশন স্বাভাবিক করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘আরলি প্রেগনেন্সিতে অ্যাবরশন করানোর জন্যও এমআর করা হয়। মায়ের জীবন বাঁচাতে এটা আইনগতভাবেই করা যেতে পারে। তবে আট সপ্তাহের বেশি গর্ভধারণের ক্ষেত্রে এমআর করা ঝুঁকিপূর্ণ। সেক্ষেত্রে প্রডাক্টের (ভ্রূণ) কিছু অংশ ভেতরে থেকে যেতে পারে। এর ফলে পরবর্তী সময়ে রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে।’

এসব ক্ষেত্রে এমআর-এর পরিবর্তে ডিঅ্যান্ডসি (ডাইলেটেশন অ্যান্ড কিউরেটেজ) এবং ডিঅ্যান্ডইঅ্যান্ডসি (ডাইলেটেশন অ্যান্ড ইভাকুয়েশন অ্যান্ড কিউরেটেজ) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় বলে জানান কল্লোল চৌধুরী।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আইনি জটিলতা এড়াতে অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ক্লিনিকে অনুমোদিত নির্ধারিত সময়ের বাইরের গর্ভপাতকেও ‘এমআর’ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। অনেক সময় ডিঅ্যান্ডসির প্রয়োজন হলেও এমআর-এর মাধ্যমেই ঘটানো হচ্ছে গর্ভপাত। ‘জীবন বাঁচানো’র শর্ত অনুসরণের বাধ্যবাধকতা ছাড়াই মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলছে গর্ভপাত।

দেশে বাড়ছে গর্ভপাত : যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা গুটমাকার ইনস্টিটিউটের করা একটি জরিপ দেখা গেছে, বাংলাদেশে ২০১০ থেকে ২০১৪, এই পাঁচ বছরে ‘এমআর’ কমলেও দ্বিগুণ বেড়েছে গর্ভপাত। ২০১০ সালে দেশে ৬ লাখ ৫৩ হাজার ১০০টি এমআর করা হয়েছে৷ ২০১৪ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার, যা ২০১০ সালের চেয়ে ৩৪ শতাংশ কম।

এর পাশাপাশি সংস্থাটি বলছে, ২০১০ সালে ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৬০০টি গর্ভপাতের ঘটনা ঘটে বাংলাদেশে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে সংখ্যাটি প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ১১ লাখ ৯৪ হাজার। ২০১০ সালে গর্ভবতীদের মধ্যে প্রতি হাজারে গর্ভপাত করান ১৮ দশমিক ২ জন, যাদের বয়স ১৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে। ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ১ হাজারে ২৯ জনে পৌঁছেছে।

গুটমাকার ইনস্টিটিউটের জরিপের এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালে। এতে দেখা যায়, সরকারি হাসপাতালে এমআর সেবা দেয়ার পরিমাণ কমছে। ২০১৪ সালে সারা দেশে মোট গর্ভপাতের ৫৩ শতাংশ হয়েছিল সরকারি প্রতিষ্ঠানে, যেখানে ২০১০ সালে এই পরিমাণ ছিল ৬৬ শতাংশ।

এমআর কমে আসা এবং গর্ভপাত বাড়ার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে গবেষকেরা বলছেন, দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বেশির ভাগে এমআর করানোর সুবিধা নেই। এ কারণে বেসরকারি পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে গর্ভপাতের প্রবণতা বাড়ছে।

নিরাপদ গর্ভপাত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন আইপাস। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. সাইদ রুবায়েত বলেন, ‘বর্তমানে দেশে যতসংখ্যক নারী গর্ভধারণ করছেন তার প্রায় অর্ধেকই অনিচ্ছাকৃত। এ অবস্থায় ইউনিয়ন পর্যায়ের সব স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিতকরণ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। সব কেন্দ্রেই ওষুধ ও যন্ত্রপাতির প্রয়োজনীয় সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। কুসংস্কার দূর করতেও আমাদের ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা উচিত।’

আইন এড়াতে বেআইনি পথ : রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ‘এমআর’ (মিন্সট্রুয়াল রেগুলেশন) সেবা দেয়ার নামে বেআইনিভাবে চলছে গর্ভপাত। বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। যারা সেবা নিচ্ছেন তারা বিষয়টি গোপন রাখতে চান৷ কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের অগোচরেই ঘটাচ্ছেন গর্ভপাত।

রাজধানীর ধানমন্ডির মেরী স্টোপসের প্রিমিয়াম ক্লিনিকে গিয়ে একজন সেবাগ্রহীতার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচয় দেন প্রতিবেদক। এরপর সেখানকার এক চিকিৎসক জানান, তাদের ক্লিনিকে তিনভাবে গর্ভপাত করানো হয়। নাম-পরিচয় গোপন করা হয় সেবাগ্রহীতার।

তিনি বলেন, ‘মাত্র সাড়ে ৫ হাজার টাকার মধ্যে ব্যথামুক্ত এমআর করানো হয়। সাড়ে ৩ হাজারের মধ্যে ওষুধের মাধ্যমেও গর্ভপাত করানো হয়। যদি ওষুধে কাজ না হয় কিছু বাড়তি টাকা নিয়ে গর্ভপাত করানো হয়।’

এ বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ৪২ দিন পর্যন্ত এমআর-এর সুযোগ দেই৷ কারণ, ওই সময় পর্যন্ত ঠিক নিশ্চিত হওয়া যায় না গর্ভে সন্তান আছে কি নেই৷ তবে এর বেশি সময় হলে আমরা কাউন্সেলিং করে মাকে এমআর থেকে বিরত রাখি৷’

তিনি জানান, অনেকেই দ্বিতীয় বা তৃতীয় সন্তান নিতে চান না৷ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ হলে তারা এমআর করাতে চান।

ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী বলেন, ‘অনেকে সরাসরি গর্ভপাত করাতেও আসেন, কিন্তু আমরা ফিরিয়ে দিই। কারণ, আইনে গর্ভপাতের সুযোগ নেই এবং আইনের চোখে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷’

বর্তমানে গর্ভপাত করাতে যারা আসছেন তাদের মধ্যে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণীর সংখ্যা বেশি বলেও জানান তিনি। ডা. বিলকিস বলেন, ‘লোকলজ্জার ভয়ে এ ধরনের তরুণীরা গোপনে বিভিন্ন ক্লিনিকে গিয়ে গর্ভের ভ্রুণ নষ্ট করেন।’

তিনি বলেন, ‘জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এমআর কমে আসবে৷ আমরা তাই এখন এমআর নিরুৎসাহিত করি৷ সঠিকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেই, উৎসাহিত করি৷’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় গাইনি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার নুসরার আরফিন নীলা বলেন, ‘বিবাহিতদের মধ্যে যারা আসছেন তাদের মধ্যে নতুন দম্পতির সংখ্যা বেশি। বিয়ের প্রথম বছরের মধ্যে অসতর্কতার কারণে গর্ভবতী হওয়ায় অনেকেই গর্ভপাতের পথ বেছে নিচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘একাধিক সন্তান থাকার পরেও অসতর্কতার কারণে যেসব নারী গর্ভবতী হয়ে পড়ছেন তারাও গর্ভপাত করাতে আসেন। এ ছাড়া সন্তাব প্রসবের জন্য যেসব মায়ের জীবন হুমকির মুখে থাকে, ডাক্তারের পরামর্শে তাদের গর্ভপাত করানো হচ্ছে।’

গর্ভপাত-সংক্রান্ত আইন নিয়ে রিট চলছে আদালতে : গর্ভপাত ঘটানোর শাস্তির বিষয়ে ফৌজদারি দণ্ডবিধির পাঁচটি (৩১২ থেকে ৩১৬ ধারা) ধারা বাতিল চেয়ে গত বছরের আগস্টে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা নাসরিন। এরপর আদালত ওই ধারাগুলো সংবিধানের মৌলিক অধিকার পরিপন্থি হিসেবে কেন বাতিল করা হবে না- জানতে চেয়ে রুল দেয়।

আইনজীবী সৈয়দা নাসরিন বলেন, ‘নিরাপদ গর্ভপাত ও ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং পছন্দ নিশ্চিত করার জন্য এই রিট করেছি। বাস্তবতা থেকে দেখলে মামলার ভয়ে অনেক ডাক্তার-নার্স গর্ভপাত করাতে চান না। তাই প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার-নার্সদের দিয়ে গর্ভপাত করানো সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে স্থানীয় ডাক্তার-নার্সদের বাসায় নিয়ে গর্ভপাত করান অনেকে। ফলে গর্ভপাতটি সঠিকভাবে করা সম্ভব হয় না এবং পরে তা অন্যান্য রোগের কারণ হয়ে ওঠে।’

সৈয়দা নাসরিন বলেন, ‘দণ্ডবিধির ওই ধারাগুলোতে ধর্ষণের শিকার নারীর গর্ভপাতের ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ সুযোগ রাখা হয়নি। এ ছাড়া সংসারজীবনে অপ্রত্যাশিতভাবে বাচ্চার জন্ম হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রস্তুতি না থাকা সত্ত্বেও আইনি বাধার কারণে নারীদের বাচ্চার জন্ম দিতে হচ্ছে। তাই আইনের ধারাগুলো চ্যালেঞ্জ করেছে।’

বিবাদী পক্ষ এখনও রুলের জবাব দেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারপরেও বিষয়টি শুনানির জন্য সময় সুযোগমতো আদালতে উপস্থাপন করা হবে।’

এ বিষয়ে কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী বলেন, ‘সরাসরি গর্ভপাতকে বৈধতা দেয়া যায় না, তবে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এড়াতে এর প্রয়োজন আছে।’

এই চিকিৎসক বলেন, ‘ধর্ষণ, শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক বা সামাজিক কারণ, ভ্রুণের বিকলাঙ্গতা এসব ক্ষেত্রেও গর্ভপাত আইনসিদ্ধ নয়। এটা এক ধরনের জটিলতা তৈরি করে।’ – নিউজ বাংলা

 

ad

পাঠকের মতামত