354813

দীর্ঘ ৫ বছর ধরে শিকলে বাঁধা ভাইবোন

নিউজ ডেস্ক।। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে শিকলে বাঁধা অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সহদোর। এরা হলেন আছমা খাতুন (২৪) ও জাহাঙ্গীর মিয়া (১৯)। ভাঙা ঘরের একটি খুঁটিতে লোহার শিকলে তালাবন্দী আসমার পা। একটু দূরেই গাছের সঙ্গে হাত বাঁধা জাহাঙ্গীরের। পাশ দিয়ে যাওয়া লোকজনকে আকার-ইঙ্গিতে শিকল খুলে দেওয়ার আকুতি জানাচ্ছেন মানসিক ভারসম্যহীন এই ভাইবোন।

এমন দৃশ্য কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের গণেরগাঁও গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর ফজলু মিয়ার বাড়ির। মানসিক ভারস্যহীন দুই সন্তানকে নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে জীবন পার করছেন এই অশীতিপর এই বৃদ্ধ। সাথে শয্যাসায়ী তার বৃদ্ধা স্ত্রীও। দিন কাটাচ্ছেন খেয়ে না খেয়ে। এমন অবস্থায় দুই সন্তানের চিকিৎসা করানো তাদের পক্ষে অসম্ভব। তাই ছেলেমেয়ে যাতে হারিয়ে না যায় কিংবা কারও ক্ষতি করতে না পারে-এ জন্য শিকলে বন্দী করে রেখেছেন তাদের। মেয়েকে পাঁচ বছর এবং ছেলেকে দুই বছর ধরে এভাবেই বেঁধে রেখেছেন তারা।

তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শিকল বন্দী আছমা খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। লোকজনের ভিড় দেখে তিনি উত্তেজিত হয়ে উঠছেন। খানিক দূরে গাছের সঙ্গে শিকল বাঁধা জাহাঙ্গীর মাটিতে শুয়ে আছেন। এ সময় সুফিয়া কামালের ‘তুলি দুই হাত, করি মোনাজাত’ কবিতাটি পড়ে শোনান আছমা। তার আকুতি, তাকে মশা কামড়ায়। চিকিৎসা দিলে সে ভালো হয়ে যাবে।

তাদের মা ফজিলা খাতুন জানান, চার মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে। পরিবারে কিছুটা সচ্ছলতার আশায় মাত্র ১৪ বছর বয়সে গার্মেন্টসে কাজ নেন আছমা। কিছু টাকা জমা রাখেন স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে। কিন্তু ওই ব্যক্তি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেলে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি। এভাবেই তার ১০ বছর কাটে। ৫ বছর ধরে তাকে শিকলে আটকে রাখা হয়।

এরই মধ্যে বোনের মতো ভাগ্যবরণ করতে হয় ভাই জাহাঙ্গীরকেও। লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোটখাটো ব্যবসা করেছিলেন জাহাঙ্গির। প্রেমে পড়ে তিনিও মানসিক ভারসাম্য হারান। তাকেও শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে দুই বছর ধরে। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছে না পরিবারটি।

চিকিৎসা আর সেবা পেয়ে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। এলাকার সমাজকর্মী রাজিব কুমার জানান, জাহাঙ্গীর ও আছমার এ অবস্থা দেখে দুদিন আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দেন।

তিনি জানান, বাবা ফজলু মিয়া দিনমজুর। বয়সের ভারে এখন আর কাজ করতে পারেন না। মা চোখে দেখেন না। তাদের কোনো জমিজমা নেই। একটি ছোট্ট ঘর। এতে কোনো আসবাবপত্র নেই। এমনিতেই কঠিন দারিদ্র্যতার মধ্যে তাদের দিন কাটছে। তার ওপর মানসিক ভারসাম্যহীন দুই সন্তানকে নিয়ে বিপাকে তারা।

এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন ধরে এভাবে লোহার শিকল পরিয়ে তাদের আটকে রাখা হয়েছে। দিন-রাত এখানেই রোদ বৃষ্টিতে ভিজে দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন ভাইবোন।

বিষয়টিকে অমানবিক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন উল্লেখ করেছেন কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. মোহাম্মদ মুশতাকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি গতকালই বিষয়টি জেনেছি। তাদের যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’

কিশোরগঞ্জ জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, কোনো অবস্থায়ই মানসিক প্রতিবন্ধীকে শিকলে বেঁধে রাখা যাবে না। আমরা খোঁজ নিচ্ছি। তাদের চিকিৎসাসহ যাবতীয় বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে।পরিবারকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়াসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

 

ad

পাঠকের মতামত