354686

তিন পুত্রসন্তানের পর আবার ছেলে হওয়ায় নবজাতককে মেরে ফেললো বাবা

নিউজ ডেস্ক।। তিন ছেলের পর চতুর্থ ছেলের জন্ম দেন বদরগঞ্জের ফরিদা বেগম। ফরিদার স্বামী হামিদুরের প্রত্যাশা ছিল এবার তার কন্যা সন্তান হবে। হাসপাতালে হামিদুরের স্ত্রী ফরিদা বেগম ছেলে সন্তানের জন্ম দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হন হামিদুর রহমান।

জন্মের ৪৮ দিনের মাথায় ঘুমন্ত অবস্থায় শিশুটিকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায় হামিদুর। পরে শিশুটিকে হত্যা করে বাড়ির পাশের একটি ডোবায় ফেলে দেন। পরে এলাকায় প্রচার করেন জীন বা ভূতে তার শিশু সন্তানকে তুলে নিয়ে হত্যা করেছে।

মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে গত সোমবার (৮মার্চ) রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপিনাথপুর ইউপির আরাজি দিলালপুর বানিয়াপাড়া নামক গ্রামে। পরে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে বাবা ও মাকে আটক করে।

গত মঙ্গলবার রংপুরের বদরগঞ্জ আমলী আদালতের বিজ্ঞ বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় শিশুটির বাবা হামিদুর রহমান। এ সময় তিনি নিজের সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় শিশুটির দাদা নুরুল ইসলাম বদরগঞ্জ থানায় ছেলে হামিদুরের বিরুদ্ধে নাতিকে হত্যা করার ঘটনায় মামলা দায়ের করেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, শিশুটির মা ফরিদা বেগম গত রবিবার সন্ধ্যায় ঘুমন্ত শিশু সুয়িম বাবুকে ঘরে রেখে বাইরে বাইরে যান। ফিরে এসে দেখেন ঘর অন্ধকার। কিন্তু শিশুটি নেই। পরে হামিদুর রহমানকে খবর দেওয়া হয়। তাৎক্ষণিকভাবে নিখোঁজের বিষয়টি জানানো হয় স্থানীয় পুলিশকে। সারারাত কোথাও শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরের দিন সোমবার ভোরের দিকে বাড়ির পাশে একটি ডোবায় শিশুটির মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। পরে পুলিশ এসে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ওই সময় শিশুটির মা ফরিদা বেগম ও বাবা হামিদুর রহমানকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়। এক পর্যায়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে হামিদুর নিজের সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।

স্বজনরা জানান, হামিদুর রহমান পার্বতীপুর উপজেলায় একটি স্বর্ণের দোকানের কর্মচারী। তার প্রত্যাশা ছিল এবারের সন্তানটি হবে মেয়ে। কিন্তু ছেলের জন্ম হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন তিনি। জন্মের পর থেকে শিশুটিকে হত্যার পরিকল্পনা করে সে। ঘটনার দিন তিনি কর্মস্থল থেকে আগাম ছুটি নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন। পরে তিনি স্থানীয় লালদীঘি হাটে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। কিন্তু তিনি হাটে না গিয়ে বাড়ির এক কোনে লুকিয়ে ছিলেন। স্ত্রী ফরিদা বেগম শিশুটিকে ঘরে রেখে বাইরে যায়। ওই সময় ঘুমন্ত শিশুটিকে ঘর থেকে এনে হত্যার পর ডোবায় ফেলে হাটে চলে যায় তিনি। এর কিছুক্ষণ পর ফরিদা ঘরে গিয়ে সন্তানকে না পেয়ে হামিদুরকে খবর দেন। কিছুক্ষণ পর এসে হামিদুর স্ত্রীকে বলেন, হয়তো জীন বা ভূতে শিশুটি নিয়ে গেছে। পরে ফেরত দিয়ে যাবে।

সন্তান হারিয়ে ফরিদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আগের তিন ছেলে জন্ম হলেও আমি পরে ছেলেটি বদল করতে রাজি হইনি। কিন্তু আমার স্বামী চতুর্থ ছেলেকে যে গোপনে হত্যার পরিকল্পনা করবে তা আমার ধারনাই ছিল না।’

বদরগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান জানান, মেয়ে সন্তানের আশায় পর পর চারটি ছেলের জন্ম হওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিল শিশুটির বাবা হামিদুর। সিজারের সময় রংপুর মেডিক্যালে অপর এক প্রসূতি মায়ের সঙ্গে হামিদুর সন্তান বদলের মৌখিক চুক্তি করেন। ওই মহিলার আগের তিন জমজ কন্যার পর চতুর্থটিও মেয়ে জন্ম হয়। পরে তিনি তার কন্যা সন্তানটি বদল করতে চায়নি। এতে মনে মনে ক্ষুব্ধ ছিল হামিদুর। আদালতে সে সন্তান হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।

 

ad

পাঠকের মতামত