354512

সেদিন শুধুই কেঁদেছিলেন তাসনুভা (ভিডিও)

নিউজ ডেস্ক।।  সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কখনো প্রতিবন্ধীদের, কখনো ট্রান্সজেন্ডারদের বা কখনো অন্য কোনো ব্যক্তিকে সমাজে নানা বুলিংয়ের শিকার হতে হয়।

সমাজের এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এসব ব্যক্তিদের এগিয়ে চলার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। একসময় তারা ধারণাই হারিয়ে ফেলে যে, তার বা তাদের দ্বারা ভালো কিছু সম্ভব।

তবে কিছু ব্যতিক্রমী চরিত্র থাকে। যারা সকল বাধা উপড়ে ফেলে এগিয়ে চলে। লক্ষ্যে পৌঁছাতে ছুটতে থাকে অবিরাম। ফলে অনেক সময় তাদেরকে দারুণ সফল হতে দেখতে পাই।

এমন এক চরিত্র তাসনুভা আনান শিশির। ট্রান্সজেন্ডা হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই সীমাহীন বাধা আর মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। পরিবারও ছাড়তে হয়েছে তাকে। তবে নিজেকে এগিয়ে নেয়ার পথ হারাননি তিনি।

তাসনুভা নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে সমাজকর্ম বিভাগে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেন। একইসঙ্গে ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে পাবলিক হেলথ বিষয়ে আরও এক বছরের জন্য মাস্টার্স করেন।

তাসনুভা সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ পাঠক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে। দেশে প্রথমবারের মতো কোনো ট্রান্সজেন্ডার সংবাদ পাঠক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার এই খবর ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই তার চেষ্টা ও শ্রমের প্রশংসা করছেন। কিন্তু তার এই সফলতার পেছেন আছে অনেক কষ্ট আর সামাজিক প্রতিবন্ধকতা।

শারীরিক সীমাবদ্ধতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করার পর পারিবারিক, সামাজিকভাবে লাঞ্ছনার শিকার হয়ে অনেকটা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন তাসনুভা। কিন্তু এসব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে নিজেকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তিনি। যার কারণে আজ সফলতার দ্বারপ্রান্ত পৌঁছেছে তাসনুভা।

১৯৯১ সালের ১৬ জুন খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তাসনুভা। জন্মের পরেই আর চার-পাচঁটা ছেলে মেয়ের মতো বেড়ে উঠেনি তার শৈশবকাল। তখন থেকেই মানুষের হাস্য-রসিকতার শিকার হতে হয়েছে তাকে। এ কারণে অনেকটাই বিধ্বস্ত ছিলেন তিনি।

পড়াশোনা করতে গিয়েও অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরোতে হয়েছে তাসনুভাকে। স্কুলে গেলেই নানা মন্তব্য করত তাকে নিয়ে। এমনকি তাকে হ্যারেজমেন্টও করা হয়েছে অনেকবার। এ কারণে তার পড়ালেখায় বেশ ক্ষতি হয়েছিল বলে জানান তাসনুভা।

তাসনুভা বলেন, স্কুলে আর সবার মতো আমার বন্ধু ছিল না। টিফিনে সবার সাথে একসাথে বসে খেতে পারতাম না। একসাথে খেলতে পারতাম না। তখন আমি ভাবতাম কিভাবে আমার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য টাকা জোগাড় করব। কারণ সমাজে আমাকে কেউ সহজভাবে নিচ্ছিল না।

তাসনুভা বলেন, আমার সারা জীবনের স্বপ্ন ছিল, আমি একটু ভালো জায়গায় পড়ব, ভালো কিছু করব। আমার মনে হয় সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পথে। আমি যখন মেইলটা দেখলাম যে ভর্তিপ্রক্রিয়া হয়ে গেছে। এবং যখন ফাইনাল মেইলটা পেলাম আমি সিলেক্টেড। তখন আমি শুধুই কেঁদেছিলাম।

তাসনুভা চান অন্য ট্রান্সজেন্ডাররা যোগ্যতা অর্জন করুক। ভালো পেশা বেছে নিক। অন্য ট্রান্সবোনদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তাসনুভা বলেন, তদের সবার কাছে আমার একটাই অনুরোধ; যোগ্য হওয়াটা সবচেয়ে বেশি দরকার। তাই তারা যেন আপনার জেন্ডারটা না দেখে গুণটা দেখেন, সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া। সবাই যোগ্যতা দেখেন। কারণ, যোগ্য ব্যক্তিকে কখনো দমিয়ে রাখা যায় না। তাই যার যতটুকু মেধা আছে, জ্ঞান আছে; ততটুকু কাজে লাগিয়ে যোগ্যতা অর্জন করা বেশি জরুরি। উৎস: সময়নিউজ।

ad

পাঠকের মতামত