353986

নাসির-তামিমার যে শাস্তি হবে অভিযোগ প্রমাণ হলে

নিউজ ডেস্ক।। ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তামিমার আগের স্বামী মো. রাকিব হাসান। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এ মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে তাদের সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালতে রাকিব হাসান এ মামলা করেন।

মামলায় আগের বিয়ে গোপন রেখে নতুন বিয়ে করা, অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যাওয়া, ব্যাভিচার ও মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছে।

রাকিবের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, মামলায় তামিমা সুলতানা তাম্মিকে এক নম্বর ও ক্রিকেটার নাসির হোসেনকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪৯৪, ৪৯৭, ৪৯৮, ৫০০ এবং ৩৪ ধারায় এ মামলা করা হয়েছে।

যেসব ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে সেসব ধারাগুলোর সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। চলুন এসকল ধারাগুলোর বর্ণনা একনজরে দেখে নেওয়া যাক-

ধারা : ৪৯৪ (স্বামী বা স্ত্রীর জীবদ্দশায় পুনরায় বিবাহকরণ): কোনো ব্যক্তি যদি এক স্বামী বা এক স্ত্রী জীবিত থাকা সত্ত্বেও এমন কোনো পরিস্থতিতে বিবাহ করে, যে পরিস্থিতিতে স্বামী বা স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় সংঘটিত বলে অনুরূপ বিষয়টি অবৈধ হয়েছে, তবে উক্ত ব্যক্তি সাত বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবে

ধারা : ৪৯৭ (ব্যভিচার): কোনো ব্যক্তি যদি অপর কোনো ব্যক্তির স্ত্রী অথবা যাকে সে অন্য কোনো ব্যক্তির স্ত্রী বলে জানে বা তার অনুরূপ বিশ্বাস করার কারণ আছে এমন কোননো ব্যক্তির সঙ্গে উক্ত অন্য ব্যক্তির সম্মতি ও সমর্থন ছাড়া এইরূপ যৌনসঙ্গম করে যা নারী ধর্ষণের সামিল নয়, তবে সে ব্যক্তি ব্যভিচারের অপরাধের জন্য দোষী হবে এবং তাকে সাত বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থ দণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত করা যাবে। অনুরূপ ক্ষেত্রে স্ত্রী ব্যক্তিটি দুষ্কর্মের সহায়তাকারী হিসেবে দণ্ডিত হবে না।

ধারা : ৪৯৮ (কোনো বিবাহিতা নারীকে অপরাধমূলক উদ্দেশ্যে প্রলুব্ধকরণ বা অপহরণ বা আটককরণ): কোনো ব্যক্তি যদি যে নারী অপর পুরুষের সঙ্গে বিবাহিতা এবং তা সে জানে বা তার অনুরূপ বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে, এইরূপ নারীকে কোনো ব্যক্তির সঙ্গে অবৈধ যৌনসঙ্গম করার উদ্দেশ্যে বিবাহিত পুরুষের নিকট থেকে বা সে পুরুষের স্বপক্ষে অপর যে ব্যক্তি সে নারীর তত্ত্বাবধায়ক সে ব্যক্তির নিকট থেকে অপহরণ বা প্রলুব্ধ করে নিয়ে যায় বা অনুরূপ কোনো নারীকে উপযুক্ত উদ্দেশ্যে গোপন বা আটক করে, তবে সে ব্যক্তি দুই বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থ দণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।

ধারা : ৫০০ (মানহানির শাস্তি): কোনো ব্যক্তি যদি অন্য কোনো ব্যক্তির মানহানি করে, তবে উক্ত ব্যক্তি দুই বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থ দণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।

বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে নথি পর্যালোচনা শেষে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাদীর সঙ্গে ১ নম্বর আসামি তামিমা সুলতানার ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক ৩,০০,০০১ (তিন লক্ষ এক) টাকা দেনমোহর ধার্যে বিবাহ সম্পন্ন হয় এবং রেজিস্ট্রি হয়। বিয়ের পর থেকে বাদী ও ১ নম্বর আসামি স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করতে থাকেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের সংসারে বাদীর ঔরসে ১নং আসামির গর্ভে একজন কন্যা সন্তানের জন্ম হয়, যার নাম রাখা হয় তোবা হাসান, বয়স-৮ বছর। ১ নম্বর আসামি (তাম্মি) পেশায় একজন কেবিন ক্রু। তিনি সৌদি এয়ারলাইন্সে কর্মরত। চাকরির সুবাদে তিনি গত ১০ মার্চ সৌদিতে গিয়েছিলেন। করোনা মহামারির কারণে জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হলে সেখানেই অবস্থান করতে থাকেন।

এ সময়টা ফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বাদীর সঙ্গে তার যোগাযোগ হতো। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ১নং আসামির সঙ্গে ২নং আসামির কথিত বিবাহের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা বাদীর নজরে আসে। বাদী এ ধরনের ছবি দেখে হতবাক হয়ে যান। পরবর্তীতে পত্র পত্রিকায় এ বিষয়ে সংবাদ দেখে তিনি ঘটনার বিষয় সম্পূর্ণ নিশ্চিত হোন। এছাড়াও ১নং ও ২নং আসামির কথিত ‘গায়ে হলুদ’ ও ‘বিবাহ পরবর্তী সংবর্ধনা’ এই ধরনের অনুষ্ঠান যথাক্রমে গত ১৭ ও ২০ ফেব্রুয়ারি সম্পন্ন হয় যা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে। ১নং আসামি বাদীর সঙ্গে বিবাহের সম্পর্ক চলমান থাকাবস্থায় ২নং আসামির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। ২নং আসামি বাদীকে ফোন করে জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত এবং তার কাছে ১নং আসামি রয়েছে বলেও তিনি বাদীকে অবগত করেছেন। ১নং আসামি বাদীর সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক থাকাবস্থায় ২নং আসামিকে বিয়ে করে যা ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। ২নং আসামি ১নং আসামিকে প্রলুব্ধ করে নিজের কাছে নিয়ে গেছেন এবং ১নং আসামির সঙ্গে অবৈধ বিয়ের সম্পর্ক দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন যা নিকৃষ্ট ব্যভিচার।

আবেদনে আরও বলা হয়েছে, ১নং ও ২নং আসামির এরূপ অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে বাদী ও তার ৮ (আট) বছর বয়সী শিশু কন্যা মারাত্মকভাবে মানসিক বিপর্যস্ত হয়েছে। আসামিদের এমন কার্যকলাপে বাদীর চরমভাবে মানহানি হয়েছে যা বাদীর জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। ন্যায় বিচারের স্বার্থে আসামিদের বিরুদ্ধে উল্লিখিত ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধের অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় আদেশের আর্জি জানানো হয়েছে মামলায়।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি তামিমা সুলতানা তাম্মিকে বিয়ে করেন নাসির হোসেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর সঙ্গে তিনটি ছবি আপলোড করেন বহুদিন জাতীয় দলের বাইরে থাকা এ ক্রিকেটার। এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এ বিয়ের খবর।

তবে বিয়ের সপ্তাহ না পেরোতেই খবর আসে, অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করেছেন নাসির। এজন্য থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেন নিজেকে তাম্মির প্রথম স্বামী হিসেবে দাবি করা রাকিব হাসান। এরই মাঝে ক্রিকেটার নাসির হোসেনের একটি ফোন রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে শোনা যায়, ফোন করে এক ব্যক্তিকে জিডি করার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বলেছেন নাসির।

ad

পাঠকের মতামত