353270

আজ টিকা প্রয়োগ শুরু 

নিউজ ডেস্ক।। করোনা ভাইরাসের মহামারী প্রতিরোধে সারাদেশে আজ রবিবার অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত টিকার প্রয়োগ শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে টিকা গ্রহণের জন্য তিন লাখ ২৮ হাজার জন নাম নিবন্ধন করেছেন। তবে টিকা কবে নিতে পারবেন সেই এসএমএস আগেরদিন পাওয়ার কথা থাকলেও গতকাল রাত পর্যন্ত তা পাননি অনেকেই। টিকার জন্য অ্যাপসও এখনো চালু করা হয়নি।

পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম মাসে ৩৫ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হবে। প্রথম ডোজের ৪ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। আগে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তখন প্রথম ডোজের ৮ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, টিকাদান কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ৭ হাজার ৩৪৪টি টিম করা হয়ছে। প্রতিটি টিমে দুজন নার্স বা পরিবার পরিকল্পনা কর্মীর সঙ্গে ৪ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। টিকা প্রয়োগে সারাদেশে এক হাজার ৫টি হাসপাতালে দুই হাজার ৪০০ টিম কাজ করবে। প্রতিটি টিম সর্বোচ্চ ১৫০ জনকে টিকা দিতে পারবে। তবে গতকাল শনিবার পর্যন্ত সব কেন্দ্র প্রস্তুত হয়নি। নিবন্ধনেও চলছে ধীরগতিতে। ২৭ জানুয়ারি নিবন্ধন শুরু হলেও গতকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন তিন লাখ ২৮ হাজার ১৩ জন।

নিবন্ধন নিয়েও জটিলতা কাটেনি। চালু হয়নি অ্যাপস। গত ২৭ জানুয়ারি এটি চালু হওয়ার কথা ছিল।

এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি জানানো হয় আইসিটি বিভাগ থেকে যখন অ্যাপস হস্তাস্তর করা হবে তখনই চালু হবে। গণমাধ্যমকর্মীদের অনেকেও নিবন্ধন করতে পারছেন না।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা তিন কোটি ডোজ টিকার মধ্যে প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ টিকা ২৫ জানুয়ারি দেশে এসে পৌঁছায়। এর আগে ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশকে ২০ লাখ ডোজ টিকা উপহার দেয় ভারত। সব মিলিয়ে এখন সরকারের কাছে ৭০ লাখ ডোজ টিকা মজুদ আছে। ইতোমধ্যে দেশের ৬৪টি জেলা ইপিআই সেন্টারে এবং ৪৮৩টি উপজেলা ইপিআই সেন্টারে টিকা পাঠানো হয়েছে।

টিকার বিতরণ ও প্রয়োগ সংক্রান্ত সার্বিক প্রস্তুতি তুলে ধরতে গতকাল বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এতে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, রবিবার (আজ) সকাল ১০টায় সারাদেশে একযোগে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে। প্রথমদিন টিকাদান কার্যক্রম সকাল ১০টায় শুরু হলেও অন্যান্য দিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চলবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সব জেলা-উপজেলায় ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।

অধ্যাপক খুরশীদ আলম বলেন, আমাদের প্রতিটি কেন্দ্র ঠিক আছে। আশা করি কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই টিকাদান শুরু করতে পারব। কিছু কিছু ছোট কেন্দ্রে বিশেষ করে মাতৃসদন, শিশুমঙ্গল কেন্দ্রগুলোতে আমাদের প্রস্তুতির ঘাটতি রয়েছে। এগুলো রাতের মধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে যাবে। এরপরও কোনো সমস্যা থাকলে সেটি সমাধানের চেষ্টা করব।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে নির্দেশনা ছিল প্রথম ডোজ দেওয়ার চার সপ্তাহ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে। এখন আমাদের অবস্থা অনুযায়ী পরিকল্পনা সাজাতে হচ্ছে- আমরা আপতত ঠিক করেছি দ্বিতীয় ডোজ ৪ সপ্তাহ পরই দেব।

যারা আজ টিকা নেবেন তারা এখনো এসএমএস পাননি, সেক্ষেত্রে তারা কীভাবে টিকা নেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসএমএস পাঠানোর পাসওয়াড আমরা গতকাল পেয়েছি। আশা করছি আজ (শনিবার) রাতের মধ্যে সবাই এসএমএস পেয়ে যাবেন।

রাতে এসএমএস পেলে সকালে টিকা নেওয়া সম্ভব হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাল নিতে না পারলে পরের দিন, না হয় তার পরদিন নেবেন। টিকার কার্যক্রম চলমান। আজ যারা টিকা পাবেন না তারা কাল-পরশু নেবেন। এটি নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ৩৫ লাখ টিকা দিতে কতদিন লাগবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথম ধাপের টিকা দিতে কতদিন লাগবে এই মুুহূর্তে বলতে পারছি না। এখন পর্যন্ত নিবন্ধন আছে ৩ লাখ ২৮ হাজার। এর পর কী পরিমাণ নিবন্ধন হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমাদের টিকা প্রয়োগে প্রথম দফা বা দ্বিতীয় দফা থাকবে না। প্রথম ডোজ দেওয়ার ৪ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। এটি চলমান প্রক্রিয়া, যতদিন টিকা থাকবে ততদিন আমরা দিতে থাকব।

অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ১৮ বছরের নিচে, অন্তঃসত্ত্বা নারী, শিশুকে বুকের দুধ পান করান এমন মা এই মুহূর্তে টিকা নিতে পারবেন না। যাদের অনেক জ¦র আছে তারা, গুরুতর মাত্রায় ইনফেকশন আছে তারা ৪ সপ্তাহের মধ্যে টিকা নিতে পারবেন না। এ ছাড়া যারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন তারাও টিকা নিতে পারবেন না। যাদের ড্রাগসে অ্যালার্জি আছে তারাও টিকা পাবেন না।

টিকাদানের পরিকল্পনায় পরিবর্তন বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, আমরা টিকা নিয়ে কাজ করছি। এই টিকার যখন ট্রায়াল হয় প্রথম ডোজ দেওয়ার ৪ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়। এ ছাড়া পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত যতগুলো টিকা ট্রায়াল হয়েছে তার সবগুলো প্রথম ডোজ দেওয়ার ২১ থেকে থেকে ২৮ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে। আমরা সেই অনুযায়ী পরিকল্পনায় পরিবর্তন করে ৮ সপ্তাহের পরিবর্তে ৪ সপ্তাহে করার পরিকল্পনা নিয়েছি। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ও টেকনিক্যাল কমিটির সিদ্ধান্তমতে এটি করা হয়েছে।

অধ্যাপক ডা. ফ্লোরা বলেন, টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার ৪ সপ্তাহ পরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে ৮ সপ্তাহ পর দিলেও একই অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। আমাদের হাতে যেহেতু ৭০ লাখ টিকা আছে এগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতে এই পরিকল্পনা করা হয়েছে।

কারা কোথায় টিকা নেবেন : স্বাস্থ্যমন্ত্রী, দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে টিকা নেবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে টিকা নেবেন। কেবিনেট সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট কেন্দ্রে, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া নিমসে টিকা নেবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শিক্ষক আজ সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকা নেবেন।

 

ad

পাঠকের মতামত