রক্তনালি আঁকাবাঁকা হলে…
ভ্যারিকোস ভেইন
ভ্যারিকোস ভেইন হলো আঁকাবাঁকা শিরা। এটি রক্তনালির একটি রোগ। এতে পায়ের শিরাগুলো চামড়ার নিচে ফুলে ওঠে এবং বাইরে থেকে দেখতে আঁকাবাঁকা মনে হয়। প্রথম দিকে শুধু অস্বস্তি লাগলেও পরবর্তী সময়ে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। এই রোগে আক্রান্তরা চিকিৎসা না করালে কাজ নিয়ে বিদেশে যেতে পারেন না, কিছু কিছু চাকরিতে অযোগ্য বলে বিবেচিত হন।
ভ্যারিকোস ভেইন কী?
পায়ের শিরাগুলো দুই সারিতে থাকে। প্রথম সারি থাকে একটু ভেতরের দিকে এবং অন্য সারি থাকে ত্বকের ঠিক নিচেই। এই দুই সারির মাঝে সংযোগকারী আন্তঃশিরা থাকে। কোনো কারণে ভেতরের রক্তনালিতে চাপ বেড়ে গেলে তার প্রভাব আন্তঃশিরার মাধ্যমে বাইরের শিরার মধ্যেও সঞ্চারিত হয়। কোনো কারণে শিরার রক্ত নিয়ন্ত্রণকারী ভালভ ঠিকমতো কাজ না করলে কিংবা শিরার গাত্র দুর্বল হয়ে পড়লে রক্তনালিগুলো ফুলে ওঠে। এটাই ভ্যারিকোস ভেইন, যা সাধারণত পায়েই হয়।
উপসর্গ
♦ শুরুতে খুব একটা ব্যথা-বেদনা থাকে না; পা ভারী ভারী লাগে।
♦ পায়ের শিরা ঘন নীল হয়। দেখতে অনেকটা পাকানো দড়ির মতো হয়, যা বাইরে থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়।
♦ পায়ের পাতা ফুলতে শুরু করে, জ্বালা ভাব, মাসল ক্র্যাম্প ও পায়ের ক্লান্তি দেখা দেয়।
♦ যে অংশে শিরা ফুলে ওঠে সেখানে ইচিং হয়।
♦ পায়ের ত্বকের রং বদলে যায়, ত্বক শুকিয়ে পাতলা হয়ে যায়, ত্বক থেকে আঁশ ওঠে ও ফুলে যায়।
♦ যত দিন যায় সমস্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে। টানা দাঁড়িয়ে বা বসে থাকলে পায়ে ব্যথা শুরু হয়, ব্যথা বাড়ে।
♦ কাফ মাসলসহ পায়ের ফুলে ওঠা শিরার ব্যথা ক্রমেই বাড়তে থাকে।
কাদের বেশি হয়?
যাঁদের জন্মগতভাবে শিরার ভালভগুলো দুর্বল কিংবা শিরার গাত্র দুর্বল, তাঁদের ক্ষেত্রে এই রোগ বেশি হয়। আবার যাঁরা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করেন, তাঁদেরও ভ্যারিকোস ভেইন হওয়ার ঝুঁকি আছে। এ ছাড়া গর্ভাবস্থা, পেটে বড় কোনো টিউমার অথবা শরীরে পানি জমলেও শিরার ওপর চাপ পড়ে। তখনো ভ্যারিকোস ভেইন হতে পারে। বাড়তি ওজনও এই অসুখের এক অন্যতম কারণ।
রোগ নির্ণয়
রোগীর পায়ের শিরা দেখেই এই রোগটি সম্পর্কে ধারণা করা যায়। তার পরও চিকিৎসার সুবিধার্থে ডুপলেক্স স্ক্যান (কম্পিউটার পরীক্ষা) করতে হয়। এই স্ক্যানারের সাহায্যে ত্বকের গভীরে অবস্থিত শিরাগুলোর গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়।
চিকিৎসা
প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু জীবনযাপন পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন এনে বর্ধিত শিরা সমস্যায় বেশ উপকার পাওয়া যায়। যেমন শোয়ার সময় পা উঁচু করে রাখা, হাঁটার সময় পায়ে বিশেষ ধরনের মোজা পরা ইত্যাদি। এতে কাজ না হলে চিকিৎসা নিতে হবে।
আগে দীর্ঘ সময় ধরে অপারেশন করা হতো। কিন্তু এখন লেজারের সাহায্যে কম খরচে কোনো ধরনের কাটাছেঁড়া ছাড়াই ভ্যারিকোস ভেইন বা আঁকাবাঁকা শিরার চিকিৎসা করা হচ্ছে। এতে সুস্থ হওয়ার হার বাড়ে, কষ্ট কম হয়, পায়ের সৌন্দর্য ঠিক রাখা যায়।
জটিলতা
চিকিৎসা না করালে এসব রোগী নানা জটিলতার শিকার হতে পারে। যেমন :
♦ আক্রান্ত স্থানের চারপাশ কালো হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
♦ ঘা বা আলসার হতে পারে।
♦ পায়ের চামড়া শক্ত হতে পারে।
♦ আক্রান্ত স্থান দিয়ে হঠাৎ রক্তপাত।
♦ রক্তনালি বন্ধ হওয়ার সমস্যা বা থ্রম্বোসিস হওয়া ইত্যাদির আশঙ্কা বাড়ে।
প্রতিরোধে করণীয়
ভ্যারিকোস ভেইন প্রতিরোধে তথা পায়ের সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কিছু করণীয় হলো :
♦ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা বা বেশিক্ষণ এক জায়গায় বসে থাকা বা কোনো কাজ করা নয়।
♦ শক্ত জুতা, হাইহিল নয়, ভালো সমান জুতা পরুন।
♦ আঁটসাঁট পোশাক বা মোজা পরবেন না।
♦ নিয়মিত ব্যায়াম করে পদযুগল ভালো রাখার চেষ্টা করুন।
♦ নিয়মিত হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটার অভ্যাস চালু রাখুন।
♦ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
♦ এমন খাবার খান, যাতে সোডিয়ামের পরিমাণ খুব বেশি নয়। দেহে লবণের পরিমাণ বেশি হলে পা ফুলে ওঠার সমস্যাসহ ব্যথা বাড়ে।
♦ পেঁয়াজ, রসুন, ক্যাপসিকাম, সাইট্রাস জাতীয় ফল বেশি খান। এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভিনয়েডস থাকে, যা রক্ত চলাচলের মান উন্নত করে বা রক্তপ্রবাহ সঠিকভাবে প্রবাহিত করে।