353177

এক জাকিরের সংসার ভেঙে যেতে ধরেছিল আমার কারণে: পলাশ

বিনোদন ডেস্ক।। জিয়াউল হক পলাশ। এই নামকে প্রচ্ছন্ন করে কাবিলা নামটিই তাঁর প্রকট হয়েছে। ধারাবাহিক নাটক ব্যাচেলর পয়েন্টের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন পলাশ। সম্প্রতি নোয়াখালীতে গিয়ে ব্যাচেলর পয়েন্টের কয়েকটি পর্বের দৃশ্য ধারণ করা হয়। সেখানেই বোঝা যায় পলাশের তৃণমূল পর্যায়ে কী পরিমাণ জনপ্রিয়তা।

ব্যাচেলর পয়েন্ট যেমন জনপ্রিয়, তেমনই এর নেতিবাচক কিছু বিষয়েরও মুখোমুখি হতে হয়। যেমন বজড়া বাজারের জাকিরা। একটা ইমাজিনেশন যে এমনভাবে বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে পারে, তা যেন কিছুতেই বিশ্বাস হতে চাইছিল না পলাশের। কিন্তু এমনটাই ঘটেছে।

পলাশের মুখ থেকেই শোনা যাক, ‘বজড়া বাজারের জাকিরা রোকেয়ায় ডিস্টার্ব করে, এটা শুধু নাটকের প্রয়োজনে অবতারণা হয়েছে। জাকিরাকে এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে আমার সংলাপে যেন সত্যিই জাকিরা রোকেয়া নামের আমার প্রেমিকার পেছনে ক্রমাগত লেগেই থাকে। কিন্তু আমি যে খবর শুনলাম, তাতে আমার বিস্ময় লেভেল বোঝানোই মুশকিল। সত্যিই নাকি বজড়া বাজারে জাকির নামের একজন রয়েছে। ব্যাচেলর পয়েন্টে ক্রমাগত জাকিরের প্রতি তীব্র অভিযোগ, সে-ই জাকিরের সংসারে ভাঙন সৃষ্টি করে। তার স্ত্রী মনে করেন, জাকির চরিত্রে সমস্যা রয়েছে। ব্যাচেলর পয়েন্টের সব ঘটনা বিশ্বাস করে সংসারই ভেঙে যেতে ধরল। আমি নোয়াখালী গিয়ে তাদের সংসার ঠিক করে এলাম। বোঝাতে পেরেছি যে নাটকের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। এমন কাকতালীয় ঘটনা কিভাবে ঘটে?’

ব্যাচেলর পয়েন্ট-এর যে জনপ্রিয়তা, আর তার মধ্যে কাবিলা চরিত্রটি অত্যধিক জনপ্রিয়। এতে করে পলাশের মধ্যে অহমিকাবোধ তৈরি হবে এটাই স্বাভাবিক- কিন্তু তিনি এটা মানতে নারাজ। বললেন, ‘আমার আজকের যে জনপ্রিয়তা- তা তো হওয়ার কথা ছিল না। হুট করেই হয়েছে। এ জন্য আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে দারুণভাবে কৃতজ্ঞ। তাই বলে আমার মধ্যে বিন্দুমাত্র অহংকারবোধ তৈরি হবে- এটা আমি চাই না। আমি ছোটবেলা থেকে ঢাকার নাখালপাড়ায় বড় হয়েছি। এই পাড়ায় এখনো আছি। এখানের মানুষজন জানে আমার কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না; এখনো স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করি, কারণ কেউ যদি আমার সঙ্গে ৩০০ সেলফিও তুলতে আসে, আমি ‘প্যারা’ বোধ করি না।

এমন বসন্তের দিনেই জিয়াউল হক পলাশের জন্ম। জন্মদিন ব্যস্ততায় কাটছে। তার মাঝেই ইথারে মনে করলেন নিজের শৈশব। হতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটার। স্কুল-কলেজে ক্রিকেটার হওয়ার দৌড়ে ছিলেন। সেখান থেকে ছিটকে গিয়েছেন। কিন্তু প্রকৃতি সেটা পুষিয়ে দিয়েছে অন্যভাবে। পলাশ স্মৃতি রোমন্থন করে বললেন, ‘আসলে আমাকে নানাভাবে নানা মানুষ প্রভাবিত করেছে। আমি ক্রিকেটার হতে চেয়েছি, স্কুল-কলেজে ক্রিকেট ভালো খেলতাম। কিন্তু দেখেন, আমি অভিনয়ে চলে এলাম।’

পলাশকে প্রভাবিত করা মানুষদের মধ্যে রয়েছেন অঞ্জন দত্ত জুনায়েদ ইভান। স্কুল-কলেজজীবনে প্রচুর গান শুনতাম অঞ্জন দত্তের। ‘তাঁর প্রতিটি গান যেন একটি গল্প আর আমরা যারা তার গানের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি, তারাই বুঝি অঞ্জন দত্তের কী দুর্নিবার টান। জীবনে আমার একজনের সঙ্গেই ছবি তোলার ইচ্ছা ছিল। সেই ইচ্ছা আল্লাহ আমার পূরণ করেছেন। ঢাকায় অঞ্জন দত্ত এসেছিলেন, আমি রেজিস্ট্রেশন করে তার সঙ্গে দেখা করেছি। ১৩ পৃষ্ঠার একটি চিঠি তার হাতে তুলে দিয়েছি। আমি জানি না তিনি সেটা পড়েছেন কি না।’ একটানা বলে গেলেন পলাশ।

জুনায়েদ ইভান আজকের পলাশ হওয়ার পেছনে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছেন। একবাক্যে স্বীকার করে পলাশ বললেন, “আমার জীবনে এই একজন মানুষের আজকের পলাশ হয়ে ওঠার পেছনে অনেক বড় ভূমিকা ছিল। আমি তাঁর লেখা, কথা, গান সব অনুভব করতাম হৃদয় দিয়ে। যার কারণে আমার চেতনা ধীরে ধীরে প্রস্তুত হয়েছে তাকে ঘিরে। আমার ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছাটা অপূর্ণ রয়ে গেছে; কিন্তু আমি নির্মাতা হিসেবে জুনায়েদ ইভান ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করেছি- এটা আমার জীবনের পরম প্রাপ্তি। ‘নিজের জন্য’ নামের একটি গানের মিউজিক ভিডিও করার জন্য আমরা পাহাড়ে। ইভান ভাই কিভাবে হেঁটে যাবেন আমি দেখিয়ে দিলাম। একজন মানুষ পাহাড়ি পথে হেঁটে যাবেন, হুট করে পেছনে তাকাবেন- কেউ নেই। আমি অভিনয় করে বিষয়টা ইভান ভাইকে দেখালাম। তিনি অবাক হয়ে বললেন, ‌’পলাশ, এটাই তো আমি।’ আমার জীবনে প্রাপ্য জিনিসগুলোর মধ্যে ওই মুহূর্তটা মূল্যবান।”

জিয়াউল হক পলাশের শৈশবের গল্পগুলো অন্য রকম। কেমন? যখন সবাই ট্রেন্ডের হিমেশ রেশামিয়া শুনছে, তখন পলাশ শুনছেন মহিনের ঘোড়াগুলি। সবাই যখন পার্টি, তুমুল আড্ডায়- পলাশ তখন নতুন একটা উপন্যাস নিয়ে বসে গেছেন। পলাশ বলেন, ‘মারজুক ভাইয়ের সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক। কেন জানেন? আমি যে বিষয় নিয়ে গল্প করতে পছন্দ করি, মারজুক ভাই সেই বিষয়ের আধার। উনি অনেক জানা মানুষ, আর আমিও প্রচুর বই পড়ি, বলতে পারেন আমি একজন বইপোকা। যার ফলে পড়াশোনা বিষয়ে মারজুক ভাইয়ের সঙ্গে আমার সবখানেই জমে যায়। শুটিংয়ের ফাঁকে সময় পেলেই মারজুক ভাইয়ের সঙ্গে আড্ডা শুরু হয়ে যায়। আর মারজুক ভাইও আমাকে খুব ভালোবাসেন। ঋতুপর্ণ ঘোষের একটা বই কিনব। বিষয়টা নিয়ে মারজুক ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। দুদিন পর মারজুক ভাই আমাকে বইটা গিফট করলেন। সারপ্রাইজড হয়েছি, আমি এত আনন্দিত হয়েছি যে বলে বোঝাতে পারব না। মারজুক ভাই এভাবেই সারপ্রাইজড করতে জানেন।’

গল্প শুরু হয়েছিল ব্যাচেলর পয়েন্ট দিয়ে। শেষটা ব্যাচেলর পয়েন্ট দিয়েই শেষ করা উচিত। নোয়াখালীর মানুষকে হেয় করে ব্যাচেলর পয়েন্টে তুলে ধরা হচ্ছে- পলাশকে এই মর্মে অভিযুক্ত করে প্রশ্ন করা হয় নেটিজেনদের পক্ষ থেকে। কেননা ফেসবুকের দু-একটি গ্রুপে এ নিয়ে লেখা হয়েছে। পলাশ বিষয়টি মানতে নারাজ। বললেন, ‘এখানে তো বরিশালের শুভও রয়েছে, কাশিমপুরের পাশা ভাই রয়েছে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চরিত্র আসছে, চলে যাচ্ছে- তাহলে কি সবাই নিজ নিজ জেলার বদনাম করছে? আদতে তা নয়, এটা নিছক বিনোদন। এটাকে অন্যভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ভালোমন্দ মিলিয়ে আমাদের সমাজ, আমাদের দেশ।’

 

ad

পাঠকের মতামত