352224

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার গ্রহণ করলেন যেসব তারকা

বিনোদন ডেস্ক।। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বসেছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ৪৪তম আসর। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয় এই অনুষ্ঠান।

প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন অনুষ্ঠানের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

এ বছর চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদান রাখায় যুগ্মভাবে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেতা মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা) ও অভিনেত্রী কোহিনুর আক্তার সুচন্দা। পুরস্কারপ্রাপ্তির মঞ্চে উপস্থিত হয়ে সম্মাননা গ্রহণ করেন চিত্রনায়ক সোহেল রানা। আর অভিনেত্রী কোহিনুর আক্তার সুচন্দা উপস্থিত না থাকলেও তার পক্ষে পুরষ্কার গ্রহণ করেছেন তার মেয়ে।

এ সময় সোহেল রানা বলেন, ‘জীবনের প্রথম পুরস্কার নিয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে। আজও ভেবেছিলাম, প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কারটি নেবো। যে কারণে ৬ মাস পর বাসার বাইরে বের হয়েছি। এসে শুনলাম, ওনার হাত থেকে পুরস্কার নিতে পারছি না, তবুও উনি আমার সামনে আছেন, ওনাকে সালাম জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা যারা পেয়েছেন তাদের সবাই কিন্তু আজ বেঁচে নেই। এই আজীবন সম্মাননার সঙ্গে আমাদেরকে কি ভিআইপি বলে ঘোষণা দেওয়া যায় না? যতদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকবে তারা, অনন্ত এটুকু প্রশান্তি নিয়ে চলে যেতে পারবে। আর যারা প্রতি বছর পুরস্কার পাচ্ছে তাদেরকে চার বছরের জন্য না হলেও অনন্ত দু’বছরের জন্য সিআইপি (কালচারাল ইমপর্টেন্ট পারসন) ঘোষণা করার জন্য আপনার কাছে আবেদন করছি।’

সম্মাননাটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি উৎসর্গ করে এই কিংবদন্তি অভিনেতা বলেন, ‘আজ থেকে প্রায় ৪৯ বছর আগে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সিনেমা ‘ওরা ১১জন’ আমি প্রডিউস করেছিলাম। হয়তো বঙ্গবন্ধু আমাকে স্নেহ করতেন, তাই তিনি সিনেমাটি দেখেছিলেন। সেসময় যখন আমি ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে যখন যাই, তখন বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেন, “ভালোই তো বানাইছস, যা এখানে থেকে যা।” আমি সেই গুরুবাক্যকে চিরধার্য্য মনে করে চলচ্চিত্র জগতেই থেকে গেলাম। এরপর দ্বিতীয় সিনেমা করলাম মাসুদ রানা এবং এরপর থেকে আমার ইতিহাস…। বঙ্গবন্ধু যদি সেদিন না বলতেন, তুই চলচ্চিত্রে থেকে যা। তাহলে আজকে সারা বাংলাদেশসহ পৃথিবীর মানুষ আমাকে চিনতেন না। তাই আজকের এই দিনে আমি বাঙালি জাতির পিতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, আমার শিক্ষা গুরু, আমার রাজনৈতিক গুরু, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে তার পায়ের কাছে সম্মাননাটি উৎসর্গ করলাম।’

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের এই মঞ্চে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্য সচিব খাজা মিয়াসহ চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতি অঙ্গনের নবীন-প্রবীণ শিল্পী-অভিনেতা ও নির্মাতারা।

দুপুর ১২টায় শেষ হয় পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। ১৫ মিনিট বিরতির পর প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাদিয়া জাহান মৌয়ের নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠান উপভোগ করছেন।

২০১৯ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্য থেকে ২৫টি ক্যাটাগরিতে ছয়টি যুগ্মসহ মোট ৩১ জনকে জাতীয় পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ বছর ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৯’ পেয়েছেন যারা- আজীবন সম্মাননা (যুগ্ম): বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেতা মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা) ও অভিনেত্রী কোহিনুর আক্তার সুচন্দা। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র (যুগ্ম): ন ডরাই ও ফাগুন হাওয়ায়।

শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র: নারী জীবন। শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র: যা ছিল অন্ধকারে। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক: তানিম রহমান অংশু (ন ডরাই)।

শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্রে: তারিক আনাম খান (আবার বসন্ত)। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী প্রধান চরিত্রে: সুনেরাহ বিনতে কামাল (ন ডরাই)। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্রে: এম ফজলুর রহমান বাবু (ফাগুন হাওয়ায়)। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্রে: নারগিস আক্তার (হোসনে আরা) (মায়া দ্য লস্ট মাদার)।

শ্রেষ্ঠ অভিনেতা/অভিনেত্রী খল চরিত্রে: জাহিদ হাসান (সাপলুডু)। শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী (যুগ্ম): নাইমুর রহমান আপন (কালো মেঘের ভেলা) ও আফরীন আক্তার (যদি একদিন)।

শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক: মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ইমন (মায়া দ্য লস্ট মাদার)। শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক: হাবিবুর রহমান (মনের মতো মানুষ পাইলাম না)। শ্রেষ্ঠ গায়ক: মৃনাল কান্তি দাস (তুমি চাইয়া দেখো…) (শাটল ট্রেন)। শ্রেষ্ঠ গায়িকা (যুগ্ম): মমতাজ বেগম (বাড়ির ওই পূর্বধারে…) (মায়া দ্য লস্ট মাদার) ও ফাতিমা-তুয-যাহরা ঐশী (মায়া, মায়া রে…) (মায়া দ্য লস্ট মাদার)। শ্রেষ্ঠ গীতিকার (যুগ্ম): নির্মলেন্দু গুণ (ইস্টিশনে জন্ম আমার…) (কালো মেঘের ভেলা) ও ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী (কবি কামাল চৌধুরী) (চল হে বন্ধু চল…) (মায়া দ্য লস্ট মাদার)। শ্রেষ্ঠ সুরকার (যুগ্ম): প্লাবন কোরেশী (আব্দুল কাদির) (বাড়ির ওই পূর্বধারে…) ও সৈয়দ মো. তানভীর তারেক (আমার মায়ের আঁচল…) (মায়া দ্য লস্ট মাদার)। শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার: মাসুদ পথিক (মাসুদ রানা) (মায়া দ্য লস্ট মাদার)। শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার: মাহবুব উর রহমান (ন ডরাই)।

শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা: জাকির হোসেন রাজু (মনের মতো মানুষ পাইলাম না)। শ্রেষ্ঠ সম্পাদক: জুনায়েদ আহমদ হালিম (মায়া দ্য লস্ট মাদার)। শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক (যুগ্ম): মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বাসু ও মো. ফরিদ আহমেদ (মনের মতো মানুষ পাইলাম না)। শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক: সুমন কুমার সরকার (ন ডরাই)। শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক: রিপন নাথ (ন ডরাই)। শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা: খোন্দকার সাজিয়া আফরিন (ফাগুন হাওয়ায়)। শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান: মো. রাজু (মায়া দ্য লস্ট মাদার)।

 

ad

পাঠকের মতামত