352058

ভাতিজি ধর্ষণের শিকার, মেম্বারপ্রার্থী চাচার ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা

নিউজ ডেস্ক।। ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের বিভাগদী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর আপন চাচা আগামী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে স্থানীয় মেম্বার প্রার্থী। তাই বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে মীমাংসা করার চেষ্টা করছেন তিনি। এতে ফুঁসে উঠেছে গ্রামবাসী।

গ্রামবাসীরা বলছেন, ন্যাক্কারজনক এ ঘটনার বিচার বা মামলা না হলে ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর পরিবারকে সামাজিকভাবে বয়কট করা হবে। এমন পরিস্থিতিতে ওই ছাত্রী ও তার মা বাড়িতে তালা মেরে উধাও হয়ে গেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর বাড়ি সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নে। তার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের আমোরদী গ্রামের আবু দাউদ দুলালের ছেলে সোহাগ হোসেনের (১৮) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) রাতে মোবাইলে ছাত্রীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আমোরদী গ্রামের একটি বাগানের ভেতর নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন।

বিষয়টি পরিবারের সদস্যরা জানার পর শুক্রবার সকালে ওই ছাত্রীকে নিয়ে তার মা সালথা থানায় মামলা করতে আসেন। কিন্তু ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর আপন চাচা ফোন করে তাদের থানা থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আনেন। বলেন, ‘মেয়েটাতো বিয়ে দিতে হবে। এখন মামলা-মোকাদ্দমায় জড়ালে মেয়েটার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।’ এই বলে ওই ছাত্রী ও তার মাকে সান্ত্বনা দিয়ে বাড়ি নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে তাদের আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ওই ছাত্রীর চাচা মেম্বার প্রার্থী। তাই ভাতিজির ধর্ষণের ঘটনায় মামলা করে এলাকায় পরিবেশ খারাপ করতে চাচ্ছে না। চাচার ধারণা, ভাতিজির এই ঘটনা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে বদনাম হবে। এতে তার নির্বাচনেরও ক্ষতি হবে। তাই তিনি গোপনে ধর্ষকের পারিবারের সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে মীমাংসা করার চেষ্টা করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ওই ছাত্রীর ধর্ষণের বিষয়টি এলাকার সবাই জেনে গেছে। বিষয়টি ধর্ষিতার চাচা গোপন করতে চাচ্ছেন। এটা আমাদের এলাকার ইজ্জতের ব্যাপার। এ ঘটনার বিচার বা মামলা না হলে আমরা এলাকাবাসী ওই পরিবারকে বয়কট করব। পাশাপাশি আগামী ঈদে ঈদগাহ মাঠে তাদের নামাজ পড়তে দেব না।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই ছাত্রীর চাচা বলেন, ‘আমরা বিষয়টি পরে শুনেছি। ভাতিজি ধর্ষণের শিকার হয়েছে, ঘটনা সত্য। তবে আমার ভাই জেলা সদরের একটি দফতরের বড় কর্মকর্তা। তিনি এ ঘটনায় মামলা না করার পরামর্শ দিয়েছেন এবং আমার ওই ভাতিজি ও ভাবিকে তার বাসায় নিয়ে রেখেছেন। আসলে বদনাম হবে বলে আমরা বিষয়টি নিয়ে আইনি সহায়তা নেইনি।’

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ বলেন, ‘ওই ছাত্রীর ধর্ষণের ঘটনা জানার পর সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে এসআই আব্দুল্লাহ আজিজকে পাঠানো হয়। ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর পরিবার কোনো অভিযোগ করবে না বলে জানিয়ে দেয়। তারা অভিযোগ না করলে আমরা কী করতে পারি? অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী সালথা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল্লাহ আজিজ বলেন, ‘আমি ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। তখন ছাত্রী ও তার মা বাড়িতে ছিলেন না। ওই ছাত্রীর বাবাও দেশের বাইরে থাকেন। চাচাদের এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই বলে জানিয়েছেন। তবে এলাকার লোকজন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।’ উৎস: জাগোনিউজ২৪

 

ad

পাঠকের মতামত