351142

বাজেট: ব্যয় কমিয়ে নয়, আয়ের বিকল্প পথের পরিকল্পনা থাকবে

নিউজ ডেস্ক।। টানা কয়েক বছর গতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে বাংলাদেশ। একটানা প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশের ওপরে। পাশাপাশি স্থিতিশীল মূল্যস্ফীতি, নিম্ন সরকারি ঋণপ্রবাহ এবং বাইরের অভিঘাতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে বাংলাদেশ।

বৈশ্বিক মহামারী করোনায় প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাহত হয়। ফলে আগের ধারা থেকে বেরিয়ে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট দেয় সরকার।

বৈশ্বিক মহামারীর আকার আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটেও বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়ে নয়, বরং আয়ের বিকল্প পথের পরিকল্পনা থাকবে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট হবে সোয়া ৬ লাখ কোটি টাকার।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার জন্য সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে। এর প্রভাব আগামী অর্থবছরের বাজেটেও থাকবে। করোনায় বিপর্যস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নতুন বাজেটে স্বস্তিদায়ক কর-ভ্যাট নীতি অবলম্বন করা হবে। নাগরিকদের ওপর করের বোঝা চাপানো হবে না। বড় অঙ্কের বাজেট ঘাটতি মেটানো ও ব্যয় সামাল দিতে বিদেশি সহায়তা ও ঋণ গ্রহণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।

বিশ্লেষকদের মতে, গতানুগতিক ধারা থেকে বের হতে না পারলে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে আসবে না। স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে না এলে অর্থনীতিও সচল হবে না। করোনা সংক্রমণ রোধ করতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য সরকার সবাইকে বিনামূল্যে টিকা সরবরাহের চিন্তা করছে। স্বাস্থ্যসেবা দুই ভাগে বিভক্ত। গণস্বাস্থ্য সেবা এবং ব্যক্তিক স্বাস্থ্যসেবা। উভয়ের উন্নয়নে বরাদ্দ রাখা হবে।

আগামী অর্থবছরের বাজেট হবে সোয়া ৬ লাখ কোটি টাকার। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি দ্রুত চাঙ্গা করতে নানা উদ্যোগ থাকবে বাজেটে। ইতোমধ্যে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রাথমিক ধারণা তৈরি করা হয়েছে। প্রথম ভাগেই শুরু হবে বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া। নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে বৈঠক হতে পারে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বাজেটের আকার সোয়া ৬ লাখ কোটি টাকা প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়। বাজেটে যেসব বিষয় প্রাধান্য পাবে এর মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল দ্রুত বাস্তবায়ন, করোনাসহ রোগবালাই মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া, দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা ইত্যাদি।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে করোনা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ১০ খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। প্রাণঘাতী করোনা থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতকে। আবার বিনিয়োগ, উৎপাদন, কর্মসংস্থান, মানবসম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও খাদ্যনিরাপত্তা জোরদারের মতো কর্মসূচিকে অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়েছে নতুন বাজেটে। জনসম্পৃক্ত ও জনস্বার্থে নেওয়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বেশি বরাদ্দ পাওয়া খাতগুলো হচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, সড়ক পরিবহন, মহাসড়ক বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়। চলতি বাজেটে মোট বাজেটের প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ২ লাখ ৬৫ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে ১০ খাতে। আগামী বাজেটেও এসব খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়ে বাজেট বাস্তবায়ন করা হবে।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চলছে। করোনার কারণে শতভাগ বাজেট বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সাধারণত ছয় মাস আগে থেকে বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়। আগামী বাজেটে কোন বিষয়গুলোয় সর্বোচ্চ জোর দেওয়া হবে, সেই লক্ষ্য নির্ধারণে কাজ শুরু করা হয়েছে। সম্প্রতি করোনা মোকাবিলায় প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন নিয়ে অর্থ বিভাগ যে সিরিজ বৈঠক করছে, সেখানেও বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো নিয়ে প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা হয়। শিগগিরই অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরুর পাশাপাশি স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

বাজেট তৈরির সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা জানান, আগামী বাজেটে করোনা মোকাবিলা ও অর্থনীতি দ্রুত গতিশীল করাই মূল লক্ষ্য থাকবে। নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি বাজেট বাস্তবায়নে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান এবার আরও বেশি নজর থাকবে।

সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক গ্রুপ এবং আইএমএফের সঙ্গে আগামী বাজেট সহায়তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। চলতি বাজেটেও সংস্থা দুটির বড় সহায়তা পাচ্ছে বাংলাদেশ। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। তাই আগামী বাজেটে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে স্বাস্থ্য খাতে। এ ছাড়া খাদ্যনিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এসবেও প্রাধান্য দিতে হবে। অন্যদিকে বাজেটের অর্থায়নও গতানুগতিক ধারায় হবে না। কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায় হবে না, বিদেশি সহায়তা বেশি নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। উৎস: দৈনিক আমাদের সময়।

 

ad

পাঠকের মতামত