350314

ট্রাম্প না বাইডেন: কী ঘটতে যাচ্ছে ৬ জানুয়ারি?

ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে সব অনিশ্চয়তা কাটিয়ে জো বাইডেনের শপথ ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায় নিশ্চিত হয়েছে। আসছে বছর ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন বাইডেন। তবে এখনো পরাজয় স্বীকার না করে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ অব্যাহত রেখেছেন ট্রাম্প।

বিবিসি বাংলা ও নিউ ইয়র্ক টাইমস কারণ হিসেবে বলছে, ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটের যে ফল জানা গেছে সেটা এখনো ‘আনুষ্ঠানিক’ ফলাফল নয়। এই ভোটের ফল পাঠানো হবে ওয়াশিংটন ডিসিতে এবং আগামী ছয় জানুয়ারি কংগ্রেসের এক যৌথ অধিবেশনে ভোট আনুষ্ঠানিকভাবে গণনা করা হবে। এরপরই আসবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। ছয় জানুয়ারিকে ট্রাম্পের ভোটের ফল উল্টে দেবার ক্ষেত্রে ‘শেষ সুযোগ’ হিসেবে দেখছেন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে ভোট চুরির অভিযোগে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের আদালতে করা মামলাগুলো একের পর এক খারিজ হয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাবেন তারা। যদিও আপিল শুনানির পর সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনী ফল উল্টে দিতে পারবে কিনা- তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

আর ‘শেষ সুযোগ’ কাজে লাগাতে মাঠে নেমেছেন কয়েকজন সিনেটর এবং কংগ্রেস সদস্য। তারা আরিজোনা পেনসিলভেনিয়া, নেভাডা, জর্জিয়া ও উইসকন্সিন- এই রাজ্যগুলোর ভোট বাতিল করার লক্ষ্যে লিখিত অভিযোগ জমা দেবেন, যেখানে কমপক্ষে একজন সিনেটরের স্বাক্ষর থাকবে বলেও বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

সিনেটররা বলছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার করা। যা ভোট জালিয়াতিকে খুব সহজে মেনে নিচ্ছে। এখন এই অবৈধ ভোটগুলো যদি বাদ দেওয়া হয় এবং আমেরিকান নাগরিকদের আইনসঙ্গত ভোটগুলোই শুধু গণনা করা হয় তাহলে ট্রাম্প জিতে যেতে পারেন। কারণ, আইনসঙ্গত ভোটগুলোর অধিকাংশই ট্রাম্প পেয়েছেন।’

নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টসহ যেকোন আদালতের বিচারকের চেয়ে বড় ভূমিকা আছে কংগ্রেস সদস্যদের । সেখানে সিনেটররা যা বলবে তাই চূড়ান্ত হবে। কিন্তু এরকম কোন প্রক্রিয়া হবে জটিল এবং দীর্ঘ।

এখানে, প্রতিটি অভিযোগ নিয়ে কংগ্রেসের উভয় কক্ষে দু’ঘন্টা করে বিতর্ক এবং ভোটাভুটি হতে হবে। কোন একটা রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট বাতিল করতে হলে ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ এবং রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটকে একমত হতে হবে। উনবিংশ শতাব্দীর পর কখনো এমনটা হয়নি বলেও ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের ভূমিকা এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তিনিই সাংবিধানিক দায়িত্ব অনুযায়ী ৫০টি অঙ্গরাজ্য থেকে পাঠানো ইলেক্টোরাল ভোটের খামগুলো খুলবেন এবং তার যোগফল ঘোষণা করবেন। ১৯৬০ সালে রিচার্ড নিক্সন এবং ২০০০ সালে এ্যাল গোরকে এভাবেই ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে তাদের নিজেদের পরাজয় এবং প্রতিদ্বন্দ্বীর বিজয়কে প্রত্যয়ন করতে হয়েছিল।

বিবিসি বাংলা তাদের ওই প্রতিবেদনে, পেন্স উভয় সংকটে পড়তে যাচ্ছেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, পেন্স নিজেই ২০২৪ সালে রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে চান। তার সামনে এখন সংকট, তিনি কি এ নির্বাচনের ফলাফলকে মেনে নিয়ে বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করে তার নিজের দলের ভোটারদের বিরাগভাজন হবার ঝুঁকি নেবেন? নাকি রিপাবলিকানদের বাধ্য করবেন ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে আমেরিকান নির্বাচনী ব্যবস্থাকে একটা সংকটের মধ্যে ফেলে দিতে? এজন্য ৬ জানুয়ারির দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এদিকে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির সাংবিধানিক আইনের অধ্যাপক এডওয়ার্ড বি. ফোলি নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলছেন, যত আপত্তি, মামলা বা অভিযোগই থাকুক না কেন, তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারবে না।

ad

পাঠকের মতামত