349720

‘ভাই আমাকে বাঁচান, আমিও পুলিশ সদস্য’

টিকিট চেকিংকে কেন্দ্র করে বাক-বিতণ্ডার জেরে রাজশাহীতে ট্রাফিক পুলিশের এক কনস্টেবলকে পিটিয়ে জখম করেছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্যরা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্য পাঁচজন আরএনবি সদস্যদের নামে রেলওয়ে থানায় মামলা করেছেন ।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহী রেলওয়ে থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। এতে আরএনবির চারজনসহ অজ্ঞাত আরও একজনকে আসামি করা হয়েছে। রাজশাহী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন-আরএনবির নায়েক কাইয়ুম আলী, সিপাহী শাহিন আলম, মিজানুর রহমান ও বেলাল হোসেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ। মারধরের শিকার পুলিশ সদস্যের নাম রিয়াজ হাসান (৩৫)। তিনি রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত।

এর আগে, গত বুধবার রাতে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে তিনি মারধরের শিকার হন। এরপর তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েই তিনি থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করেছেন।

ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে রেলওয়ে থানার ওসি শাহ কামাল জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাবান্ধা ট্রেনে চেপে কনস্টেবল রিয়াজের পাঁচজন আত্মীয় রাজশাহী আসেন। আত্মীয়দের নিতে রিয়াজ ও তার স্ত্রী স্টেশনে গিয়েছিলেন। আত্মীয়দের নিয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে ঘুরে আসার পথে আরএনবির সদস্যরা তাদের কাছে টিকিট দেখতে চান। তখন ৫ যাত্রীর টিকিট দেখানো হয়। কিন্তু কনস্টেবল ও তার স্ত্রীর টিকিট না থাকার কারণে তাদের ধরে টিকিট কালেক্টরের (টিসি) কাছে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন কনস্টেবল নিজের পরিচয় দিয়ে জানান, তিনি এবং তার স্ত্রী ট্রেনের যাত্রী ছিলেন না। তারা স্বজনদের নিতে এসেছিলেন। এ কথা শোনার পর টিসি তাদের ছেড়ে দেন।’

কিন্তু বিষয়টি নিয়ে নারাজ হন আরএনবি সদস্যরা। টিসির কক্ষ থেকে বের হওয়ার পরই আরএনবির সদস্যরা পুলিশের ওই কনস্টেবলকে গালি-গালাজ করেন। গাল-মন্দ নিয়ে পুনরায় টিসিকে অভিযোগ দিতে যান ওই পুলিশ সদস্য। অভিযোগটির বিষয়ে আরএনবি সদস্যরা জানতে পারেন। টিসির কক্ষ থেকে অভিযোগ দিয়ে বের হওয়ার পরপরই তাকে রাইফেলের বাট ও হাতের থাকা লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করেন তারা। সেখান থেকে তাকে আরও পেটানোর জন্য আরএনবি অফিসে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশকে দেখে নির্যাতনের শিকার পুলিশ তাদের বলেন, ‘ভাই আমাকে বাঁচান, আমিও পুলিশ সদস্য।’ এতে রেল পুলিশ দৌড়ে গিয়ে তাকে আরএনবির হাত থেকে উদ্ধার করেন। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল ।

ঘটনাটি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পরপরই পুলিশের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন। সেই সঙ্গে আরএনবির চিফ কমান্ডেন্টকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেন বলে জানায় পুলিশ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কিছু সমস্যার কথা বলে চিফ কমান্ডেন্ট আসতে রাজি হননি। পরবর্তীতে ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে পুলিশের পক্ষ থেকে ওই ৫ আরএনবি সদস্যদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক কন্সটেবল রিয়াজ একটি মামলা দায়ের করেন।

জিআরপি থানার ওসি বলেন, ‘আসামিরা পলাতক থাকায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি, তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তবে অজ্ঞাতনামা আরএনবি সদস্যকে চিহ্নিত করার জন্য সিসিটিভি ফুটেজের প্রয়োজন। রেল কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ পেলেই তাকেও শনাক্ত করা যাবে।’

এ বিষয়ে আরএনবির চিফ কমান্ডেন্ট মো. আশাবুল ইসলাম বলেন, ‘এমন ঘটনা অপ্রীতিকর। বিষয়টি শোনার পর জড়িতদের ডিউটি অফ করার নির্দেশ দিয়েছি এবং তাদের সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট দিতে বলেছি। এ বিষয়ে দুজন সহকারী কমান্ডেন্ট শাহ আলম মোল্লা (সদর) ও আতাউর রহমান পোকশীর সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি করেছি। ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের রিপোর্ট জমাদানের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিচার করা হবে।’

সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়

ad

পাঠকের মতামত