348735

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষেই বাংলাদেশের সমর্থন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক মুসলিম দেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিলেও ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও দ্বি-রাষ্ট্র তত্ত্বের প্রতি আবারও সংহতি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। রোববার ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি বিষয়ক জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক দিবসে একটি বার্তা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত বার্তায় ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়। খবর বিবিসি বাংলার।

দীর্ঘদিন ধরে চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের সংকট নিরসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে আলাদা দুটি দেশ। স্বাধীনতার পর থেকেই ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও দ্বি-রাষ্ট্র তত্ত্বের প্রতি সংহতি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। কিন্তু সম্প্রতি প্রেক্ষাপট অনেকটাই বদলে গেছে।

মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি মুসলিম দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এমনকি সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক গোপন সৌদি আরব সফর এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠকও অনেক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

কেউ কেউ মনে করেন, ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের একটি প্রক্রিয়া চলছে, যার মধ্যস্ততা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ গতকাল এই দিবসটিতে আলাদা বার্তা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাতে বলেছেন, পূর্ব জেরুজালেম-আল কুদস আল শারিফকে রাজধানী রেখে দ্বি-রাষ্ট্র তত্ত্বের আঙ্গিকে ১৯৬৭ সালের সীমানাভিত্তিক একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে আমরা আমাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছি।

শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ নিজে যেহেতু স্বাধীনতার জন্য অনেক সংগ্রাম করেছে তাই স্বাধিকারের প্রশ্নে বিশ্বের যেকোনো জাতির সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা রয়েছে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ভয়াবহ গণহত্যার কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার যে অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের রয়েছে, তা থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনি জনগণ যেভাবে অন্যায় ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সোচ্চার।

প্রধানমন্ত্রী তার বার্তায় রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছেন, একই ধরনের চেতনা দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমারে সহিংসতার হাত থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। তিনি রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে স্থায়ী সমাধানের আহবান জানিয়েছেন। ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের প্রশ্নে তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেছেন।

ইসরায়েলি সেনাদের তিনি ‘দখলদার’ বলে উল্লেখ করে তিনি অবিলম্বে ফিলিস্তিনিদের ঘর-বাড়ি ধ্বংস বন্ধ এবং অধ্যুষিত এলাকায় ইসরায়েলিদের বসতি স্থাপন বন্ধ করার আহবান জানান। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ ফিলিস্তিনিদের জনগণের প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছে। এমনকি এ কারণে ইসরায়েল ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর স্বীকৃতি দিতে চাইলেও তা গ্রহণ করেনি বাংলাদেশ। কিন্তু বিশ্বের বেশকয়েকটি আরব দেশ সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকছে।

আগস্ট মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এরপর বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুরোপুরি স্বাভাবিক করার ঘোষণা দিয়েছে। এমনকি সৌদি আরবও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকে এগুচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান গোপনে বৈঠক করেছেন- এই খবরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। নানা ধরনের আর্থিক সহায়তা ও লাখ লাখ অভিবাসী শ্রমিকদের আয়ের উৎস মধ্যপ্রাচ্যের এসব দেশ, বিশেষ করে সৌদি আরব। এমন পটভূমিতে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশগুলোর অবস্থানের বিপরীতে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বাংলাদেশের এই অবস্থান একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

ad

পাঠকের মতামত