347897

ভুটানের ভেতর চীনের অত্যাধুনিক গ্রাম! ভারতে তোলপাড়

ভুটানের আন্তর্জাতিক সীমানার অন্তত আড়াই কিলোমিটার ভেতরে চীন একটি অত্যাধুনিক গ্রাম বানিয়ে ফেলেছে এবং চীনা নাগরিকরা সেখানে স্থায়ীভাবে বাস করছেন – এই দাবিকে ঘিরে ভারতে তোলপাড় পড়ে গেছে।

চীনা রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ মাধ্যমের একজন সিনিয়র সাংবাদিক ওই কথিত গ্রামের কয়েকটি ছবি টুইটারে পোস্ট করার পর থেকেই এ নিয়ে জল্পনার শুরু, যদিও তিনি পরে সেই টুইট মুছে দিয়েছেন।

ভারতে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূতও ইতোমধ্যে দাবি করেছেন, তাদের দেশের ভেতরে চীনের কোনো গ্রাম নেই – কিন্তু আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরাও অনেকেই বলছেন যে গ্রামটির ছবি দেখা গেছে সেটি আসলে ভুটানেই।

শেন শিওয়েই চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম সিজিটিএনের সিনিয়র একজন সাংবাদিক। তার একটি টুইট থেকেই এই গোটা কাহিনির সূত্রপাত।

দিনতিনেক আগে নিজের টুইটার হ্যান্ডল থেকে তিনি একটি আধুনিক পার্বত্য গ্রামের কয়েকটি ছবি পোস্ট করে লেখেন : “নবনির্মিত প্যাংডা গ্রামে এখন আমাদের স্থায়ী বাসিন্দারা থাকছেন।”

“ইয়াডং কাউন্টি থেকে ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে যে উপত্যকা, এই গ্রামটি সেখানেই।”সঙ্গে তিনি গ্রামের লোকেশনের একটি মানচিত্রও সংযুক্ত করে দেন, যা থেকে বোঝা যায় গ্রামটি আসলে ভুটানের সীমানার বেশ ভেতরে।

আর ছবিগুলোতে দেখা যায়, সুইজারল্যান্ডের শ্যালের মতো আধুনিক স্থাপত্যে পাহাড়ে ঘেরা নদীচরে একটি আধুনিক গ্রাম গড়ে তোলা হয়েছে।

পরে তিনি টুইটটি ডিলিট করে দিলেও ভারতে পর্যবেক্ষকরা অনেকেই মনে করছেন – যেহেতু ভুটানের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতির দায়িত্ব ভারতের, তাই এই পোস্টের মাধ্যমে আসলে চীন ভারতকেই একটা বার্তা দিতে চেয়েছে যে তারা ভুটানের ভেতরেও স্থায়ী বসতি তৈরি করতে সক্ষম।

দিল্লি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এবিষয়ে নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি – এমনি কী ভারতের সাবেক কূটনীতিবিদরাও বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন।

ভুটানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করে আসা অন্তত দুজন সাবেক ভারতীয় কূটনীতিবিদ বলেছেন, এ বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে চান না।

সাবেক রাষ্ট্রদূত পবন ভার্মার কথায়, “আমি প্রায় সাত বছর আগে ভুটান ছেড়েছি, ফলে সেখানে গ্রাউন্ড রিয়্যালিটি কী, চীন কিছু করছে কি না সত্যিই আমার জানা নেই!”

থিম্পুতে ভারতের আরেক সাবেক রাষ্ট্রদূত সালমান হায়দারও সরাসরি জানাচ্ছেন, তার এ বিষয়ে কিছুই বলার নেই।এরকম একটি গ্রাম তৈরি হওয়ার খবর যে ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলেছে, তা কিন্তু স্পষ্ট।

দিল্লিতে ভুটানের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল ভি নামগিয়েল অবশ্য এর মধ্যেই এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, তাদের দেশের সার্বভৌম সীমানার মধ্যে চীনের কোনও গ্রাম নেই।

সে দেশের ‘দ্য ভুটানিজ’ পত্রিকার সম্পাদক তেনজিং লামসাং-ও টুইট করে জানিয়েছেন, চীন সীমান্তে সামান্য কোনও রাস্তা তৈরির চেষ্টা হলেও ভুটানের সেনারা তা সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট করে থাকে।

“কিন্তু এক্ষেত্রে একটা আস্ত গ্রাম বানানোর কথা বলা হচ্ছে, অথচ সেনারা কিছু রিপোর্টই করেনি”, বলছেন মি লামসাং।ভুটানের পক্ষ থেকে বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করা হচ্ছে ঠিকই – কিন্তু দিল্লিতে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ব্রহ্মা চেলানি মনে করছেন গোটা বিষয়টাতে অবশ্যই ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার উপাদান আছে।

ড: চেলানির কথায়, “চীনারা ভুটানের ভূখন্ডের ভেতর এমন একটা জায়গায় এনক্রোচ করেছে বা ঢুকে পড়েছে, যে জায়গাটা ভারতের জন্য স্ট্র্যাটেজিকভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ।”

“ভুটানের জন্য জায়গাটা হয়তো তত গুরুত্বপূর্ণ নয়, ফলে তারা বার্তা দিতে চাইছে ভারতকেই।””এর আগে নেপালেও সীমান্তের অন্তত পাঁচটি জেলায় ঢুকে পড়ে চীন গ্রাম বানিয়েছে, সেখানে মেইনল্যান্ড থেকে হান চাইনিজদের এনে বসানোর চেষ্টা করেছে।”

“লাদাখ, নেপালের পর এখন ভুটানেও যেটা তারা করছে – সেটা হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে চীনের এক বৃহত্তর পরিকল্পনারই অংশ, যেখানে তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ও সীমানা সম্প্রসারিত করতে চায়”, বলছিলেন ব্রহ্মা চেলানি।

তিন বছর আগে ভারত-নেপাল-ভুটান, এই তিন দেশের সীমানায় যে ডোকলাম উপত্যকায় ভারত ও চীনের সেনারা বেশ কয়েক মাস ধরে মুখোমুখি অবস্থানে ছিল – কথিত এই প্যাংডা গ্রামটি সেখান থেকে মাত্র নয় কিলোমিটার দূরে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ক্যানবেরার একটি থিঙ্কট্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত, স্যাটেলাইট ইমেজারির বিশেষজ্ঞ নাথান রুসার একাধিক উপগ্রহ চিত্র পোস্ট করে দাবি করছেন – এই এলাকাটি শুধু ডোকলামের কাছেই নয়, ভুটানের স্বীকৃত ভূখন্ডের অন্তত আড়াই কিলোমিটার ভেতরে।

সূত্র : বিবিসি

ad

পাঠকের মতামত