347815

ইমরান খানের ‘পুতুল সরকার’ পতনের জন্য পাকিস্তানে বি’ক্ষোভ

পাকিস্তানে সরকারের বি’রুদ্ধে বি’ক্ষোভ জারি রেখে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখছে বিরোধী দলগুলো। তাদের অভিযোগ, ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীর সহায়তায় নির্বাচনে জালিয়াতি করে ক্ষমতায় এসেছেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে পাকিস্তানে জনসমাগম আয়োজন করার ব্যাপারে সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও আজ রোববার পেশাওয়ারে হাজার হাজার বি’ক্ষোভকারীর অংশগ্রহণে বি’ক্ষোভ কর্মসূচি পালন হওয়ার কথা রয়েছে।

এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, বিরোধী দলের নেতাদের বি’রুদ্ধে চলা দুর্নীতির মামলার কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য এই প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

রাজনীতির সঙ্গে নিজেদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছে পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সেনাবাহিনী। আর ইমরান খানও তার নির্বাচনে বিজয়ের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পর্ক থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ২০২৩ সালের আগে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন হবে না।

বি’ক্ষোভের পেছনে কারা?

১৬ অক্টোবর থেকে পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) একের পর এক বি’ক্ষোভ আয়োজন করেছে। দক্ষিণপন্থী ধর্মীয় দল থেকে শুরু করে কিছুটা বামপন্থী চিন্তাধারার দল, এমনকি ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী দলের সদস্যরাও এই দলের সঙ্গে যুক্ত।

দেশটির চারটি রাজ্যের তিনটিতেই – পাঞ্জাব, সিন্ধু ও বালোচিস্তান – বড় ধরনের র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর খাইবার পাখতুনওয়ালা রাজ্যে রোববারই প্রথমবারের মতো সরকার বিরোধী র‍্যালি হতে যাচ্ছে।

বিরোধী দলগুলো বলছে, তারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব না করা এই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়। সরকারের বি’রুদ্ধে বিচার ব্যবস্থার ওপর প্রভাব তৈরি করা এবং অর্থনীতির অব্যবস্থাপনার অভিযোগও তুলেছে তারা।

র‍্যালিগুলো থেকে কী বোঝা যাচ্ছে?

কর্তৃপক্ষের পথরোধ করা এবং কিছু গ্রেপ্তারের মতো ঘটনা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত গুজরানওয়ালা, করাচি আর কোয়েটায় র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯ অক্টোবর করাচিতে র‍্যালির পর নওয়াজ শরিফের জামাতা সফদর আওয়ানকে তার হোটেল রুম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে সরকার এবং সেনাবাহিনী যথেষ্ট বিব্রত হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, গ্রেপ্তারের সময় তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে হোটেল কক্ষে ঘুমাচ্ছিলেন।

তার কিছুক্ষণ পর জানা যায় যে, হোটেলে অভিযান চালানোর আগে সিন্ধু প্রদেশের পুলিশ প্রধানকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার অফিসে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক আওয়ানের গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়।

ওই ঘটনার ধারাবাহিকতায় সিন্ধু প্রদেশের সকল শীর্ষস্থানীয় পুলিশ অফিসাররা বি’ক্ষোভ চলাকালীন ছুটির দরখাস্ত করে। তবে পরে দেশটির সেনাপ্রধান সিন্ধু প্রদেশের পুলিশ প্রধানকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিলে পুলিশ কর্মকর্তারা ছুটির দরখাস্ত প্রত্যাহার করে নেয়।

এরপর সেনাপ্রধান গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন সেনা এবং আইএসআই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিলেও তাদের বি’রুদ্ধে কোনো ধরনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বি’ক্ষোভ র‍্যালির কিছু বক্তব্য সেন্সর করার জন্য মিডিয়ার ওপরও চাপ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

র‍্যালি চলাকালীন জাতীয়তাবাদী নেতা মহসিন দাওয়ার বা রাজনীতিতে ফিরে আসা পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ লন্ডন থেকে ভিডিওতে বক্তব্য দেওয়া শুরু করলেই টিভি চ্যানেলগুলো লাইভ কাভারেজ বন্ধ করে দিতো। এই নেতারা সেনাবাহিনীর বিরু’দ্ধে অভিযোগ তুলে আসছেন গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং পর্দার আড়াল থেকে ইমরান খানের সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করার।

নির্বাচনে কী আসলেই জালিয়াতি হয়েছিল?

ইমরান খান দাবি করেছিলেন, নওয়াজ শরীফের পিএমএল-এন পার্টি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ জারদারির দলের ব্যাপক দুর্নীতিতে বিরক্ত হয়ে সাধারণ মানুষ তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। কিন্তু স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০১৮ সালের নির্বাচন পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কময় নির্বাচন ছিল।

নির্বাচন পূর্ববর্তী জরিপে নওয়াজ শরীফের পিএমএল-এন’এর পরিষ্কার জনপ্রিয়তা থাকলেও ইমরান খানের পিটিআই সামান্য ব্যবধানে জয় পায়। ভোটের দিন, জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলের সেবা সন্দেহজনকভাবে নষ্ট হয়ে যায়, যার ফলে সব আসন থেকে অনলাইনে ভোট গণনা এবং পাঠানোর সম্ভাবনা বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ ইমরান খানের সরকারের শুরুটাই হয়েছিল অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়ে।

এখন কী হতে পারে?

সম্প্রতি চলমান বি’ক্ষোভের কী পরিণতি হবে তা কেউই ধারণা করতে পারছে না। কিন্তু সবাই জানে যে দ্বন্দ্বটা রাজনীতিবিদ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তার বিরোধীরা খুবই কম প্রভাবশালী হিসেবে মনে করেন। বিরোধী র‍্যালিগুলো শুধু ইমরান খানের বৈধতারই প্রশ্ন তোলেননি, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

পাকিস্তানে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস অনেক পুরনো। শেষবার ২০০৮ সালে জনরোষের মুখে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতাচ্যুত হন।

ad

পাঠকের মতামত