346808

রহস্যময় আসাদুদ্দিন ওয়েসি; মুসলিমদের নেতা হলেও ভোটের মাঠে সুবিধা করে দেন বিজেপির

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের গত এক দশকের রাজনীতিতে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির নাম শোনেনি এমন লোকের সংখ্যা খুব কম। ভারতের মুসলিমদের স্বার্থরক্ষায় যিনি বেশ সোচ্চার বলে জানা যায়। তেলেঙ্গানার হায়দ্রাবাদ থেকে উঠে আসা এ রাজনীতিক বর্তমানে দেশটির লোকসভায় একজন নির্বাচিত সদস্য। কিন্তু মুসলিমদের নেতা বলে সবার কাছে পরিচিত হলেও তার ভূমিকা নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সুবিধা হয়, এমন রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন অথচ বিজেপি হিন্দুত্ববাদী নীতিতে বিশ্বাসী বলে তারা নিজেরাই দাবে করে। তার দল সারা ভারত মজলিশে ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (এআইএমইএম) বা সংক্ষেপে মিম পার্টি নামেই পরিচিত। কিন্তু মুসলিমদের একজন প্রভাবশালী কণ্ঠস্বর বলে যার কথা শোনা যায় তার বিরুদ্ধে বিজেপির সঙ্গে যোগসাজোশের অভিযোগ কেন আনা হচ্ছে- এমন রহস্য তৈরি হয়েছে।

ভারতের প্রধান বিরোধীদল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসসহ বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি বিরোধী দলগুলোর অভিযোগের এক সুর। সবাই মিলে আসাদউদ্দিন ওয়াইসিকে বলছে, তিনি বিজেপির রাজনৈতিক সুবিধা করে দেওয়ার মিশনে নেমেছেন। সদ্য সমাপ্ত বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বর্ষীয়ান রাজনীতিক লালু প্রসাদ যাদবের প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি), ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও অন্যান্য বামপন্থী দলগুলো জোটগতভাবে লড়াই করেছে।

কংগ্রেসের সমমনা এসব দল বিহারের নির্বাচনের পর ওয়াইসির বিরুদ্ধে আবারো সরব হয়েছেন। তাদের অভিযোগ, বিহারে আসাদউদ্দিন ওয়াইসি নির্বাচনে আলাদা লড়াই করার ফলে বিজেপির সুবিধা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, সংখ্যালঘু মুসলিম অধ্যুষিত বিধানসভা আসনে মিম পার্টির প্রার্থী থাকায় তারা ভোট কেটে নিয়েছে এবং এর ফলে ওইসব আসনে বিজেপি এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জেডিইউ জোটের প্রর্থীর জয়ের পথ পরিষ্কার হয়েছে।

এর মধ্য দিয়ে বিহারে ইতিহাসের সবচেয়ে ভাল ফলাফল করেছে বিজেপি। বিশ্লেষকরা বলছে, যদি মিম পার্টির প্রার্থী না থাকতো তবে সেখানে আরজেডি-বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থীরা জয়লাভ করতো। এর বাইরে, আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দল বিহারে ৫টি আসনে জয়ও পেয়েছে। এছাড়া এ রকম বেশ কিছু আসন রয়েছে যেখানে সত্যিকার অর্থেই বিজেপি জোটের সুবিধা হয়েছে। এদিকে, ভারতের আরেক গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সদ্য সমাপ্ত লোকসভায় ৪২ টির মধ্যে ১৮টি আসনে জয় পেয়েছে যা এ রাজ্যে বিজেপির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাফল্য।

এখন আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনে, বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেসকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করবে বলে দাবি করা হচ্ছে দলটির পক্ষ থেকে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গেও একই রকমভাবে নির্বাচনের লড়ার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। তার ঘোষণা দেওয়ায় চিন্তার ভাজ পড়েছে এ রাজ্যের বিজেপি বিরোধী সিপিআইএম, কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মিম পার্টি পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে একক লড়াই করলে সংখ্যালঘু মুসলিম ভোটের একটি বড় অংশ তাদের দিকে যাবে।

আর এর মধ্য দিয়ে বিজেপির সুবিধা হয়ে যাবে কারণ মুসলিম ভোটগুলোর একটি বড় অংশ বিজেপিবিরোধী শরিকরা ভাগাভাগি করে নেয় বলে প্রচলন রয়েছে। আশঙ্কা আরও জোরালো হয় কারণ পশ্চিমবঙ্গে ২৯৪টি আসনের মধ্যে এমন আসন রয়েছে ৯৮টি যেখানে মুসলিম ভোটের ওপর নির্ভর করে ফলাফল নির্ধারিত হয়। রাজ্যের মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ। কাজেই এখানে মিমের রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

আসাদউদ্দিন ওয়াইসি ভারতে বেশ জনপ্রিয় হয়েছেন মুসলিমদের দুর্দশার কথা বলে। ভারতীয় সাধারণ মুসলমানদের মধ্যেও আস্থাভাজন নেতা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছেন তিনি। কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বিলোপের ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি। ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের কাগজ লোকসভায় দাড়িয়ে দু টুকরো করেছিলেন তিনি। কিন্তু তার রাজনৈতিক ভূমিকার কারণে বিজেপির সুবিধা হওয়া নিয়ে সরগরম ভারতের রাজনীতি।

তবে, ওয়াইসি এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। তার দলের পশ্চিমবঙ্গের কো অর্ডিনেটর সৈয়দ জামিরুল হাসান বলেন, বিহারে আরজেডি-বাম-কংগ্রেস জোটের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করতে চেয়েছিলাম আমরা কিন্তু সুযোগ দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গেও তৃণমূলের সহযোগীতা চেয়েছিল মিম পার্টি কিন্তু তার অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যাপাধ্যায় মিম কর্মীদের গ্রেপ্তার করে তার জবাব দিয়েছেন। এছাড়া তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, তিনি চান না বিজেপি কোথাও আসুক। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

ad

পাঠকের মতামত