346155

পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবনে নীতিগত অবস্থানও বদলেছেন জো বাইডেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জো বাইডেনের রাজনৈতিক জীবনের অর্ধশতক পূর্তির বছর ২০২০ সাল। স্বাভাবিকভাবেই এ বছর তিনি হোয়াইট হাউসের চাবি হাতে পেলে তা বাড়তি তাৎপর্য যুক্ত করবে। তবে প্রশ্ন হলো, যদি তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন দেশ কতটা কী পেতে পারে তাঁর কাছ থেকে এবং বাদবাকি বিশ্বও।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে দুই মেয়াদে ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব সামলানো বাইডেন অবশ্য এরই মধ্যে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, বর্তমান সং’ক’ট থেকে দেশকে উত্তরণের চাবিকাঠি তার অভিজ্ঞতা। জন্মস্থান ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের কিউ ক্যাসল কাউন্টিতে ১৯৭০ সালে কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে পা রাখেন বাইডেন।

মাত্র ৩০ বছর বয়সে সিনেটর হয়ে তিনি তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। এরপর টানা ৩৬ বছর সিনেটরের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এই দীর্ঘ সময়ে অর্থনীতি, আইন প্রণয়ন, অভিবাসন, যুদ্ধ ইত্যাদি প্রশ্নে তার নীতিগত অবস্থান পুরোপুরি বিত’র্কমুক্ত ছিল না। গর্ভপাতসহ কিছু ক্ষেত্রে নিজের অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরেও গেছেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ।

সিনেটের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান থাকার সময় বাইডেন ‘মুক্ত বাণিজ্যপন্থী’ হিসেবে পরিচিতি পান। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কয়েকটি দেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পক্ষে ভোট দেন। তাঁর সম্ভবত সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ২০০৯ সালের আমেরিকান রিকভারি অ্যান্ড রিইনভেস্টমেন্ট অ্যাক্ট। মহাম’ন্দা থেকে উত্তরণে এ আইনের অধীনে ৮০০ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়।

জলবায়ুর পরিবর্তন মো’কাবে’লায় দুই ট্রিলিয়ন ডলারের উদ্যোগের পেছনেও আছেন বাইডেন। এর মধ্যে নতুন ‘সবুজ’ কর্মসংস্থান তৈরির প্রতিশ্রুতি রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ঘণ্টাপ্রতি মজুরি ১৫ ডলার করার। সত্তরের দশকে কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের বাসে করে শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত স্কুলগুলোতে পৌঁছে দেওয়ার সরকারি পরিকল্পনার বিরো’ধিতা করেন বাইডেন। ওই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ছিল, যৌথ শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়া।

তার রানিং মেট কমলা হ্যারিস দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সময়ে এ নিয়ে তী’ব্র আ’ক্র’মণও করেন। ১৯৯৪ সালের ‘ক্রাইম ল’র খসড়া করেন বাইডেন, যা পরে ব্যাপক সমালো’চনার জন্ম দেয়। আইনটি প্রণয়নের ফলে সহিং’সতার হা’র কমলেও তা গায়ের রং দেখে প্রয়োগ হয় বলে জো’রালো অভিযো’গ ওঠে। প্রতিদ্ব’ন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে চূড়ান্ত প্রেসিডেনশিয়াল বিত’র্কের সময় অবশ্য বাইডেন স্বীকার করেন, এটা একটা ভুল ছিল।

বাইডেন ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যু’দ্ধের বিপক্ষে থাকলেও ২০০২ সালে ইরাক আ’ক্র’মণ সমর্থন করেন, তবে ইরাক যু’দ্ধের পর তার অবস্থানগত পরিবর্তন ঘটে। তিনি ইরাকে আমেরিকার সেনা বৃ’দ্ধির বিরো’ধিতা করেন এবং সেখান থেকে সেনা প্রত্যা’হারের আহ্বান জানান। তিনি আফগানিস্তান থেকে সামরিক উপস্থিতি কমানোর ব্যাপারে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকেও সমর্থন করেন। তবে পুরোপুরি আফগানিস্তান ছাড়ার বিপক্ষে তিনি।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থিতার লড়া’ইয়ে নামার ঘোষণা দেওয়ার পর বাইডেন ইয়েমেন যু’দ্ধে সৌদি আরবের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ব’ন্ধ করার পক্ষেও মত তুলে ধরেন। অভিবাসনের ক্ষেত্রে বাইডেন দুটি প্রস্তাব করেছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে অভিবাসী শিশুদের তাদের মা-বাবার কাছ থেকে আদালা করার বিষয়টিতে সমাপ্তি টানবেন তিনি এবং ডেফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস (ডিএসিএ) কর্মসূচি পুনর্বহাল করবেন।

ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) সংস্কারের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তিনি; যদিও দলের একটা অংশ এর বিলুপ্তি চায়। ১৯৭৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেছিলেন, ”গর্ভপাতের মতো ইস্যু যখন সামনে আসে…আমি ততটাই উদার যতটা এ ব্যাপারে আপনার দাদি।” ১৯৭৩ সালে এক মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট গর্ভপাতে নারীর অধিকারকে অন্তর্ভুক্ত করেন। তবে অঙ্গরাজ্যগুলো আদালতের এই সিদ্ধান্তের বিপরীতে অবস্থান নিতে পারবে, এমন সংশোধনীর পক্ষে ভোট দেন বাইডেন।

এমনকি গত বছরও ‘হাইড অ্যামেন্ডমেন্ট’-এর পক্ষে সমর্থনের কথা জানান তিনি। তবে প্রেসিডেনশিয়াল প্রাইমারির লড়া’ইয়ের সময় চাপের মুখে তিনি অবস্থান পরিবর্তন করেন। ১৯৯৬ সালে ডিফেন্স অব ম্যারিজ অ্যাক্টের পক্ষে ভোট দেন বাইডেন। এই আইনে একজন পুরুষের সঙ্গে নারীর একত্র হওয়াকেই বিয়ের সংজ্ঞাভুক্ত করা হয়েছে। এক লিঙ্গের দুজনের বিয়েকে অস্বীকৃতি জানায় এটি এবং তাদের সমান সুবিধা ভোগেরও বিপক্ষে। তবে বাইডেন পরে এ অবস্থান থেকে সরে এসে পুরুষ-পুরুষ বা নারী-নারী বিয়ের পক্ষে মত দিয়েছেন। সূত্র : আলজাজিরা, এএফপি, রেডিট।

ad

পাঠকের মতামত