345813

করোনা রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি কমে অ্যাসপিরিনে

হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীদের চিকিতৎ‌সা করতে গিয়ে অ্যাসপিরিন ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছেন চিকিত্ৎ‌সকেরা। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা রিপোর্টে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। মেরিল্যান্ড স্কুল অফ মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, হার্টের অসুখ থেকে সুরক্ষিত রাখতে করোনা রোগীদের মধ্যে অনেককেই কম মাত্রায় অ্যাসপিরিন দেয়া হয়েছিল। দেখা গিয়েছে, ওই রোগীদের ক্ষেত্রে সংক্রমণ সংক্রান্ত জটিলতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য ভাবে কম ছিল।

শুধু রোগীর জটিলতা নয়, অ্যাসপিরিন যারা নেননি তাদের তুলনায় এ ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকিও অনেকাংশ কম ছিল। আরো বিশদে বললে, হাসপাতালে ভর্তি অ্যাসপিরিন নেয়া রোগীদের মধ্যে খুব কম জনকেই শেষ পর্যন্ত ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) স্থানান্তর করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। বা বলা যায়, তাদের মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটরে রাখতে হয়নি।

সেইসাথে গবেষকরা এ-ও দেখেছেন, অ্যাসপিরিন নেয়া রোগীদের মধ্যে সংক্রমণের মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে আসার হার তুলনামূলক ভাবে বেশি। অ্যানাস্থেসিয়া এবং অ্যানালজেসিয়া জার্নালে এই গবেষণার বিশদ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা দাবি করেন, সস্তার, সহজলভ্য এই ওষুধটি কিন্তু কোভিডের গুরুতর জটিলতা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করতে পারে।

মেরিল্যান্ড স্কুল অফ মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাস্থেসিওলজির সহকারী অধ্যাপক, এই গবেষণা দলের প্রধান জনাথন চৌ জানান, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। যদিও, নিশ্চিত হতে আরও ব্যাপক ভাবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রয়োজন রয়েছে বলে তাঁরা মনে করেন। চৌয়ের কথায়, ‘আমাদের আবিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত হলে, করোনায় মৃত্যুহার কমাতে অ্যাসপিরিনই বিশ্বের প্রথম সহজলভ্য ওষুধ হতে চলেছে।’

ডাক্তার চৌয়ের নেতৃত্বাধীন গবেষক দলটি ৪১২ কোভিড রোগীর মেডিক্যাল রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে এই গবেষণা চালিয়েছেন। আক্রান্ত রোগীদের বয়স গড়ে ৫৫। করোনার জটিলতার কারণে এই রোগীরা বিগত কয়েক মাস ধরে হাসপাতালে চিকিত্‍‌সাধীন রয়েছেন। এই আক্রান্তরা বাল্টিমোরের মেরিল্যান্ড মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালেই ভর্তি রয়েছেন। হার্টের সমস্যার কারণে এক চতুর্থাংশ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার আগের মুহূর্তে বা ভর্তির পরপরই কম ডোজের (৮১ মিলিগ্রাম) অ্যাসপিরিন দেয়া হয়েছিল।

মেডিক্যাল রেকর্ড বিশ্লেষণ করে গবেষকদের দাবি, অ্যাসপিরিন ব্যবহারে মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটরের ঝুঁকি ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে। আইসিইউতে ভর্তির ঝুঁকি কমে ৪৩ শতাংশ। গবেষণার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটি অ্যাসপিরিন ব্যবহারে কোভিড মৃত্যুর ঝুঁকি ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত কমে।

কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে হার্ট, ফুসফুস, রক্তনালী-সহ শরীরের একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা তৈরি হয়। রক্ত জমাট বাঁধার কারণেই হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, একাধিক অরগ্যান ফেলিয়োরের মতো ঘটনা ঘটে। যা শেষ পর্যন্ত কোভিড আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ডেকে আনে।

রক্ত জমাট বাঁধার কারণে অতীতে একবার যাঁদের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়ে গিয়েছে, ডাক্তাররা তাঁদের অ্যাসপিরিন প্রেসক্রাইব করেন। ভবিষ্যতে রক্ত জমাট বেঁধে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, তার জন্যই রোজ অ্যাসপিরিন নিতে বলা হয়। কিন্তু, অ্যাসপিরিনের নিয়মিত ব্যবহারে বড় ধরনের রক্তক্ষরণের ঝুঁকি থাকে। পেপটিক আলসারের মতো অসুখও দেখা দিতে পারে।

আর এক গবেষক মাইকেল মাজেফিরও মন করেন, কোভিড ধরা পড়ার পর থেকেই রোগীর রোজ অ্যাসপিরিন খাওয়া উচিত। তবে, যাঁদের ক্রনিক কিডনির অসুখ রয়েছে বা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ নিতে হয় বা অন্য ব্লাড থিনার নিতে হয়, তাঁরা অ্যাসপিরিন নিতে পারবেন না।

নয়া দিগন্ত

ad

পাঠকের মতামত