344149

বাবা-মা ও ভাই-বোনকে খুঁজছে মারিয়া

প্রিয় বাবা-মা, ভাই-বোন হারিয়ে চিরতরে এতিম হয়েছে পাঁচ মাসের শি’শু মা’রিয়া। প্রতিদিন অগনিত মানুষ তাকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় করে। মায়াভরা চোখে সবার দিকে শুধু তাকিয়ে থাকে। দেখে যেন মনে হয় উৎসুক দৃষ্টিতে তাদের মাঝে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের খুঁজছে।

যারা তাকে বড় সাধ করে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছিলো প্রিয় সেই বাবা মা’ও আজ চিরদিনের অন্ধকারে। খেলনা ঘুরিয়ে আনন্দময় সময় পার করা সেই ১১ বছরের বড় ভাই মাহি ও তাসলিম নামের ১০ বছরের বোনটিও সারাজীবনের মায়াকাটিয়ে পরপারে।

নরপিশাচ ঘা’তকের ধারালো আ’স্ত্রের আ’ঘাতে শি’শু মা’রিয়ার প্রিয় মানুষদের আদুরে সান্নিধ্য আজ অ’তীত। মায়ের কোল, ঘরের বারান্দা বাড়ির উঠানও যেন অ’পরিচিত। মা’রিয়ার শি’শু মনের অসহ্য যন্ত্র’নায় সে কুঁকড়ে গেছে। চারিদিকে শত মানুষের সান্নিধ্যেও মমতাময়ী মায়ের পরম স্নেহের হাতের স্প’র্শ না পেয়ে মাঝে মাঝে কেঁদে উঠছে সে।

সাতক্ষীরা জে’লা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামালের নির্দেশে মা’রিয়াকে স্থানীয় মাহিলা ইউপি মেম্বার নাছিমা বেগমের হেফাজতে রাখা হয়েছে। সোমবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে এমনই দৃশ্য দেখা যায়।গত বৃহস্পতিবার ভোররাতে শি’শু মা’রিয়ার বাবা মো: শাহীনুর রহমান (৩৯) তার মা সাবিনা খাতুন(৩৩),

বড়ভাই সিয়াম হোসেন মাহী (১১) ও বোন তাসলিম সুলতানা (১০) কে দৃর্বত্তরা গলা কে’টে হ’ত্যা করে। হ’ত্যাকারীদের থেকে অলৌকিকভাবে প্রা’ণে বেঁচে যায় সে (মা’রিয়া)। হেলাতলা ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, শি’শু মা’রিয়ার দাদি শাহিদা বেগমের সম্প্রতি তার দুই চোখ অ’পারেশন হয়েছে। এরই মধ্যে ছে’লে বউমা ও পোতা পুতনিকে খু’নিরা হ’ত্যা করেছে।

তার স্বামী অনেক আগেই মা’রা গেছেন। একসাথে পরিবারের সব সদস্যকে হারিয়ে তিনি পাগলপ্রায়। এ অবস্থায় শি’শুটিকে কার কাছে রাখা হবে এ চিন্তা থেকেই জে’লা প্রশাসক এমন সিদ্ধান্ত দেন। মা’রিয়ার ফুফু জানান, শি’শুটির নানী ময়না খাতুন জামাই মে’য়েসহ নাতী নাতনীর মৃ’ত্যুর খবর শুনে তিনি সজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন।

রাতে মা’মলা দায়েরের জন্য তাকে থা’নায় যেতে হয়। মেঝ ভাই আশরাফুল মালয়েশিয়া প্রবাসী, ছোট ভাইকে স’ন্দেভাজন আসামী হিসাবে ইতোমধ্যে পু’লিশ রি’মান্ডে নিয়েছে। এ অবস্থায় শি’শুটিকে দেখার কেউ ছিলো না। ভাই, ভাইপো সহ চার জনকে হারিয়ে আমা’রও মা’থা ঠিক নেই, তাই মাহিলা মেম্বারের কাছে মা’রিয়াকে রাখার কথা বলি।

এখন দিনের বেশীরভাগ সময় আমাদের কাছে থাকছে মা’রিয়া। ওকে সান্তনা দেয়ার কেউ নেই। লোকজনের ভিড়ে সে হঠাৎ কেঁদে উঠছে। থামানো যাচ্ছে না। চারিপাশে তাকিয়ে কি যেন খুঁজছে। আবার কাঁদছে।

হেলাতলা ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য নাছিমা খাতুন জানান, ঘটনা শোনার পর শি’শুটিকে তিনি উ’দ্ধার করে তার র’ক্তেভেজা শরীর মুছে দেন। ঘনাস্থল পরিদর্শনে এসে জে’লা প্রশাসক পরিবারের আপন কাউকে না পেয়ে শি’শুটিকে আমা’র হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

প্রথম দিন শি’শু মা’রিয়া ভলোই ছিলো। রাত বাড়ার সাথে সে প্রচুর কা’ন্না করে। জেগে থাকে প্রায় সারা রাত। মা’রিয়া মায়ের দুধ পান করত। এখন থেকে তাকে গরুর দুধ ও সুজি খাওয়ানো হচ্ছে। সদা চঞ্চল এ শি’শুটি মাঝে মধ্যে কাঁদছে।

তবেযত দিন মা’রিয়া আমা’র কাছে থাকবে আমি তাকে সর্বদাই মাতৃস্নেহে লালন-পালন করবো। তাকে সব সময় আনন্দ বিনোদনের মধ্যে রাখার চেষ্টা করছি। মা’রিয়ার স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা হচ্ছে, আদর যত্নে কোন ত্রুটি করা হচ্ছে না।

কলারোয়া উপজলো নির্বাহী র্কম’র্কতা মৌসুমী জেরিন কান্তা জানান, তিনি ডিসি স্যারের নির্দেশে শি’শুটিকে দেখার জন্য ঘটনাস্থলে যান। তার নতুন পোশাক, খেলনা ও শি’শুখাদ্যসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নিয়মিত খোজ খবর নেয়া হচ্ছে।

সৌভাগ্যক্রমে খু’নিদের হাত থেেক বেঁচে যাওয়া পাঁচ মাসের শি’শু মা’রিয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন সাতক্ষীরার জে’লা প্রশাসক (ডিসি) এস.এম মোস্তফা কামাল। বৃহস্পতবিার দুপুরে ঘটনাস্থল কলারোয়ার খলশী প্রামের নি’হতের বাড়ি পরর্দিশন করেন। এসময় তিনি শি’শু মা’রিয়ার সকল দায়িত্বভা’র গ্রহণ করেন।

সাতক্ষীরা জে’লা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলনে, নি’র্মম ও নৃ’শংসভাবে হ’ত্যার শিকার হয়েছেন এক পরিবারের চারজন। তবে খু’নিরা পাঁচ মাসের শি’শুকে হ’ত্যা করেনি।

সৌভাগ্যক্রমে সে বেঁচে যায়। মায়ের গ’লাকা’টা লা’শের পাশে কাঁদছিলো শি’শু মা’রিয়া। আত্মীয়-স্বজনও শোকে মুহ্যমান।

এ অবস্থায় আমি শি’শুটির দায়িত্ব নিয়েছি। আপাতত দেখভাল করার জন্য স্থানীয় নারী ইউপি সদস্যকে দায়ত্বি দিয়েছি। শি’শুটির কোনো স্বজন দাবি করলে আইনগতভাবে সমাধান করা হবে।

ad

পাঠকের মতামত