343701

চলে গেলেন ময়মনসিংহের সর্বজন শ্রদ্ধেয় রতন স্যার

জেলা প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু মুকুল ফৌজের প্রতিষ্ঠাতা, মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের রেক্টর, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব আমীর আহাম্মদ চৌধুরী রতন (৭৭) স্যার আর নেই। সবাইকে কাঁদিয়ে অন্তিম শয়ানে চির বিদায় নিয়েছেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) দিবাগত রাত সোয়া ১১টায় রাজধানীর বাংলাদেশ বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) বাদ জুম্মা নগরীর আঞ্জুমান ঈদগাহ ময়দানে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন।

জানাজায় উপস্থিত ছিলেন, গৃহায়ণ ও গণপূূর্ত মন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি, ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল এমপি, জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমিনুল হক শামীম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ও মরহুমের পুত্র অরূপ চৌধুরী। জানাজা শেষে মরদেহ দাফনের জন্য তার নিজ গ্রামের বাড়ি ফেনীতে নিয়ে যাওয়া হয়।

এর আগে গত ৮ অক্টোবর আমীর আহমেদ চৌধুরীকে বার্ধক্যজনিত কারণে তাকে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ১০ অক্টোবর বাংলাদেশ বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

জন্ম ও শিক্ষা জীবন-আমির আহমেদ চৌধু্রী রতন ১৯৪৩ সালের ৮ নভেম্বর ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নের হাসানপুর চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পরেই বেড়ে ওঠা ও পড়াশোনা ময়মনসিংহ শহরেই। শিশুকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তার ঠিকানা শহরের মহারাজা রোড।

১৯৫৬ সালে তিনি সিটি কলেজিয়েট স্কুল থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি পাস করেন। এরপর ১৯৫৮ সালে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৬০ সালে একই কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে মেধা তালিকায় নবম স্থান নিয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

একজন অভিবাবক ও শিক্ষকতা জীবন-৭৭ বছরের জীবনে তিনি ৫৬ বছর কাটিয়েছেন শিক্ষকতা করে। ১৯৬৪ সালের আগস্ট মাসে ময়মনসিংহের গৌরীপুর কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে তার শিক্ষকতা জীবন শুরু। গৌরীপুর কলেজে তিনি ছিলেন ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত।

১৯৮৩-র সেপ্টেম্বর থেকে তিনি যোগ দেন ময়মনসিংহের মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে। বর্তমানে তিনি মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের রেক্টর ছিলেন।

দুর্বল শিক্ষার্থীদের বিশেষ ক্লাস করানো, বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের খবর নেয়া, সহকর্মী ও অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক, স্কুলের পরিবেশ তদারকি ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত সময় কাটানো মানুষটির নাম আমীর আহাম্মদ চৌধুরী রতন। মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে যিনি এ শহরের সর্বমহলে শ্রদ্ধার পাত্র।

খেলাধুলা ও সমাজ সেবায় যত অবদান-শিক্ষকতার বাইরেও রতন স্যারের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রয়েছে সক্রিয় পদচারণ। তার উদ্যোগেই ১৯৫৯ সালে এ শহরে ময়মনসিংহ জেলা মুকুল ফৌজ প্রতিষ্ঠা হয়।

১৯৭০-এর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পর চট্টগ্রামের উপকূলে তিনি মুকুল ফৌজের ৪৭ জন কর্মী নিয়ে ত্রাণ কাজে অংশ নেন। এরপর ১৯৭৪, ১৯৮৮, ১৯৯৮-এ বন্যার সময় মকুল ফৌজ এবং মুকুল নিকেতনের ছাত্রদের নিয়ে বন্যার্ত সহায়তায় তার কার্যক্রম এখন মানুষ স্মরণ করে।

সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম হিসেবে মুকুল নিকেতন জেলা তো বটেই, দেশের হাতেগোণা বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম এটি। এ স্কুলে আবৃত্তি, নৃত্য, সংগীত, ক্রিকেট, ফুটবল, স্কাউটিং, গার্লস গাইড, বিতর্ক ইত্যাদি বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আর সব বিষয়েই দেখভাল করেন রতন স্যার। ১৯৮৪ সালে তিনি জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি পান।

একজন কাজের মানুষ-একজন কাজের মানুষের কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নেই। ময়মনসিংহের রতন স্যার জীবনের শেষ বয়সেও ছিলেন তেমনই কাজ পাগল একজন মানুষ। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়, বিকেল হয়, সন্ধ্যার পর রাতের আঁধার নেমে আসে। কিন্তু তিনি ব্যস্ত আছেন তার প্রিয় প্রতিষ্ঠান মুকুল নিকেতন আর এর শিক্ষার্থীদের নিয়েই।

রাজনৈতিক জীবন-আমির আহমেদ চৌধুরী রতন ১৯৯৬ সালে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও তিনি হেরে যান। এরপর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়াও তিনি ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, মেয়ে জামাতা, নাতি-নাতনি, আত্মীয়-স্বজনসহ দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য শিক্ষার্থী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার যোগ্য নেতৃত্ব, দক্ষতা ও পরিশ্রমের ফলেই ময়মনসিংহের মুকুল নিকেতন দেশসেরা বিদ্যালয়গুলোর একটি। সূত্রঃ জাগো নিউজ

ad

পাঠকের মতামত