340477

গ্রামেই ফিরলেন সেই নারায়ণ পরিবার, তবে মেয়ের লা’শ নিয়ে

ব’খাটের ভ’য়ে একাধিকবার বাসা পাল্টেছিলেন নারায়ণ রায়ের পরিবার। শেষ পর্যন্ত কোন উপায় না দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এই নি’ষ্ঠুর শহরে আর নয়। মেয়ের জীবন রক্ষার্থে গ্রামেই থিতু হবেন। সেই মেয়ে শেষমেষ বাবার সঙ্গে গ্রামেই ফিরেছে। তবে জী’বিত নয়, লা’শ হয়ে। দুদিনেও আ’সামিদের কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় এক রকম ভ’য়ে আ’তঙ্কে রয়েছে পরিবারটি।

গত রোববার রাতে সাভারে ব’খাটের উপর্যুপরি ছু’রিকাঘা’তে নিহ’ত হয় নীলা রায় নামের ওই ছাত্রী। সে স্থানীয় এসেড স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

জানা গেছে, রোববার রাতে হঠাৎ শ্বা’সকষ্ট শুরু হলে বড় ভাই অলক রায়কে সঙ্গে করে রিকশায় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয় নীলা রায়। পথিমধ্যেই তাদের পথরোধ করে দাঁড়ায় ব’খাটে মিজানুর রহমান। বড় ভাইয়ের সামনেই টানা-হেঁচড়া করে ছিনিয়ে নেয় নীলাকে। পরে তাকে জো’র করে তুলে নিয়ে যায় দক্ষিণপাড়ায় নিজেদের পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে। সেখানেই উপর্যুপরি ছু’রিকা’ঘাতে ক্ষ’তবি’ক্ষত করে পালিয়ে যায় ওই ব’খাটে। পরে র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় নীলাকে উদ্ধার করে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃ’ত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় মা’মলা দায়ের করা হলেও এখনো গ্রে’প্তার হয়নি আ’সামিদের কেউ। জানতে চাইলে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার জানান, ‘আ’সা’মিদের গ্রে’প্তারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। পুলিশ ও ডিবির বিভিন্ন ইউনিট মাঠে নেমেছে। আশা করি, ভালো একটি খবর শিগগির দিতে পারব।’

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, আ’সামিরা যেখানেই আছে খুব সন্তর্পণে রয়েছে। তারা নিজেদের মোবাইল ডিভাইসগুলো থেকে দূরত্ব বজায় রাখায় তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে বেগ পেতে হচ্ছে। আ’সামিদের অবস্থান শনাক্ত করতে পুলিশের অ’পরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি ছাড়াও র‍্যাবও নিজেদের মতো করে কাজ করছে।

ব’খাটে মিজানুর রহমান স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের ছেলে। সে স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষার্থী। স্থানীয়রা বলছেন, মিজান একবার টেস্টে ফেল করলেও এবার দ্বিতীয়বারের মতো এইচএসসি পরিক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে, সোমবার যখন নীলার লা’শ ম’য়নাত’দন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ম’র্গে নেওয়া হয় তখন তার বাড়িতে চলছিল আহাজারি। পড়ার টেবিলে গুছিয়ে থাকা বই। ঘরজুড়ে স্মৃতি। টেবিলের বই নেড়েচেড়েই আদরের একমাত্র মেয়ের স্মৃতি হাতড়ে ফিরছিলেন মুক্তারানী।

মেয়ের বই জড়িয়ে বিলাপ করতে করতে মুক্তারানী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই মিজান আমার মেয়ের পিছু নিয়েছিল। আমি বুঝিয়েছি, বাবা তুমি বড়লোকের ছেলে। আমরা গরীব। ভাড়া থাকি। তার ওপর আমরা হিন্দু। কিছুতেই কিছু শোনেনি। একপর্যায়ে আমরা মিজানের বাবা-মাকে জানিয়েছি। বলেছি, আপনারা ছেলেকে সামলান। হু’মকি দিয়ে বলতো, থানায় জানালে, আমার স্বামী ও ছেলের লা’শ ফেলবে। ভ’য়ে মুখ বুজে থাকতাম। আমাদের কষ্টে কেউ এগিয়ে আসেনি- আমার মেয়েটাকে মে’রেই ছাড়লো।’

নীলার বাবা নারায়ণ রায় মেট্রোরেল প্রকল্পের সামান্য বেতনের কর্মচারী। শেষ কৃত্যের জন্যে মেয়েকে নিয়ে শ্ম’শানের উদ্দেশে যখন তিনি রওনা হন তখন তার দু’চোখ ঝাঁপসা। অব্যক্ত কষ্ট আর যন্ত্রণায় যেন ভে’ঙ্গে আসছে তার পৃথিবী। ডুকরে কেঁদে উঠে তিনি বলেন, ‘আমি তো মেয়ের জন্যই গ্রামে ফিরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ফিরলাম ঠিকই। তবে মেয়ের লা’শ নিয়ে। আমার বেঁচে থাকার আর শক্তি নাই।’

সূত্রঃ দৈনিক আমাদের সময়

ad

পাঠকের মতামত