340168

রিয়েল লাইফ হিরো আঁখির স্বপ্ন বাস্তব হতে চলেছে

জাতিসংঘের রিয়েল লাইফ হিরো হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত খুলনার রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামের আঁখির স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হতে চলেছে। একটা ছোট গার্মেন্ট কারখানা করার মতো যন্ত্রাংশ পেয়েছে সে। তার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এসেছেন খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী। গার্মেন্ট স্থাপনের জন্য জমির ব্যবস্থাও করা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

শনিবার রূপসা উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আঁখির স্বপ্ন পূরণের জন্য পোশাক কারখানার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আঁখির হাতে তুলে দেন সংসদ সদস্য। যন্ত্রাংশগুলোর মধ্যে রয়েছে ৮টি বিদ্যুৎচালিত অত্যাধুনিক সেলাই মেশিন (জাকি), ৫টি পা চালিত বাটার ফ্লাই সেলাই মেশিনসহ প্রায় ১৫ লাখ টাকা মূল্যমানের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ।

সংসদ সদস্য জানান, এসব যন্ত্রাংশ দিয়ে আঁখি যাতে একটি পোশাক কারখানা শুরু করতে পারেন তার জন্য সরকারি জমি বরাদ্দের প্রক্রিয়া চলছে। জমি পেলেই তিনি সেখানে ঘর বানিয়ে আঁখির জন্য পোশাক কারখানা তৈরি করে দেবেন। আঁখি যাতে এ অত্যাধুনিক সেলাই মেশিনগুলো ব্যবহার করতে পারেন এজন্য তাকে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করবেন।

জাতিসংঘের রিয়েল লাইফ হিরো হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর আঁখি খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী এবং তার সহধর্মিণী সারমিন সালামকে তার স্বপ্নের কথা জানিয়েছিলেন। আঁখি তাদেরকে বলেছিলেন তিনি একটি গার্মেন্টস কারখানা গড়ে তুলতে চান, যে কারখানায় তার মতো অসহায় যুবতীরা কাজ করবে। তার এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেন তারা।

চলতি বছরের মার্চ মাসের দিকে করোনাভাইরাস যখন সারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে তখন দেশে মাস্কের সঙ্কট দেখা দেয়, বাজারে চড়া দামে মাস্ক বিক্রি হতে থাকে। ওই সময় কিশোরী আঁখি তার সেলাই মেশিন দিয়ে মাস্ক তৈরি করা শুরু করে এবং কম দামে এলাকার লোকজনের কাছে বিক্রি করে। সহায় সম্বলহীন অনেক মানুষকে সে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করে মাস্ক ব্যবহারে সচেতনতা গড়ে তোলে।

তার এ উদ্যোগ ওয়ার্ল্ড ভিশন নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়, যা জাতিসংঘের নজরে আসে। ফলে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয় সংস্থা (ইউএনওসিএইচএ) গত ১৯ আগস্ট বিশ্ব মানবিক দিবস উপলক্ষে আঁখিকে ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

ভূমিহীন ভাসমান আঁখির বাবা মাসুদ মোল্লা (৪৭) চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করতেন। সেখানে কর্মরত অবস্থায় তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন এবং শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন। আঁখির মা আনোয়ারা বেগমও (৪০) চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করেন, কিন্তু তার একার রোজগারে সংসার চালান অসম্ভব হয়ে ওঠে।

আঁখি তখন মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে। সে মাকে সাহায্য করার জন্য তার বড় বোনের সঙ্গে একটা চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজে যোগ দেয়। এতে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। দু’বছর আগে ওয়ার্ল্ড ভিশন পরিচালিত জীবনের জন্য প্রকল্প আঁখিকে চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা থেকে উদ্ধার করে স্কুলে ভর্তি করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু আঁখির বয়স বেশি হওয়ায় কোনো স্কুলে তাকে ভর্তি করানো যায়নি।

ওয়ার্ল্ড ভিশন পরিচালিত জীবনের জন্য প্রকল্পের মাধ্যমে তাকে সেলাই প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং প্রশিক্ষণ শেষে আঁখি যাতে তার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তার জন্য ওই প্রকল্প থেকে তাকে একটি সেলাই মেশিন ও কিছু থান কাপড় দেয়া হয়। আঁখি ঘরে বসেই এলাকার লোকজনের পোশাক সেলাই করে তাদের চার সদস্যের পরিবারের দায়িত্ব নেয়।

ad

পাঠকের মতামত