
সবুজ নয়, ধানক্ষেত ভরে উঠেছে বেগুনী রঙে
ধান ক্ষেতের কথা ভাবলেই চোখের পর্দায় ধরা দেয় দিগন্তজোড়া সবুজের সমারোহ। ঝির ঝিরে বাতাসে সবুজের ঢেউ খেলানো সে দৃশ্যে মুগ্ধ হন সবাই। তবে এবার সে চিরাচরিত নিয়মকে পেছনে ঠেলে ক্ষেত ভরে উঠেছে বেগুনি রঙের পাতায়। প্রথম দর্শনে যে কেউ অবাক হতে বাধ্য! মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে হয়েছে এমন ধানের আবাদ।
প্রথমবারের মতো বেগুনী পাতার ধান চাষ করেছেন উপজেলার আশিদ্রোণ ইউনিয়নের তিতপুর গ্রামের কৃষক মো. ছালেহ আহমদ। ফলে ব্যাপক সাড়া পড়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।
ছালেহ আহমদ গণমাধ্যমকে জানান, মৌলভীবাজারে মামাতো ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে বেগুনী রংয়ের ধান চাষ করতে দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। সেই থেকে বেগুনী রংয়ের ধানের প্রতি আগ্রহ জাগে। পরে মামাতো ভাইয়ের মাধ্যমে তিনি এ জাতের বীজ সংগ্রহ করে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার সহযোগীতা নিয়ে এই ধান চাষ করেছেন। এ জাতের ধানের নাম দিয়েছেন সুবর্না এরি ধান। তিনি জানান জমিতে বীজ রোপনের পর খুব বেশি পরিচর্যা করতে হয়নি। সারও লেগেছে কম।
তিনি জানান, যদি ফলন ভালো হয় তবে আগামীতে আরো বেশি জমিতে এই ধানের চাষ করবেন তিনি। আর কৃষি বিভাগ বলছে, এই ধানের আয়ুষ্কাল একটু কম। যদি ফলন আশানুরূপ হয় তবে সৌখিন কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হবে এই জাতের ধান। আশে পাশের অনেক মানুষ আসছেন তাদের ধান ক্ষেত দেখতে। ফলন বেশী পাওয়ার আশা করছেন তিনি। দ্রুত ফলন দেওয়ায় এই জাতের ধানে রোগ বা পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হয় না। গাছ শক্ত হওয়ায় ঝড়-বৃষ্টিতেও হেলে পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে। সৌখিন কৃষকরা এই জাতের ধান চাষ করতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নতুন চাষ শুরু হওয়া এ ধানের নাম পার্পল লিফরাইস। দেশে সর্বপ্রথম এ জাতের ধানের আবাদ শুরু হয়েছিল গাইবান্ধায়। সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এ ধান। ধানের গায়ের রং সোনালি ও চালের রং বেগুনি। উফশী জাতের এ ধানে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ অনেকটাই কম হয়। রোপণ থেকে ধান পাকতে সময় লাগে ১৪৫-১৫৫ দিন।
অন্য জাতের ধানের চেয়ে এ ধানের গোছা প্রতি কুশির পরিমাণ বেশি থাকায় একর প্রতি ফলন ও বেশ ভালো। একর প্রতি ফলন ৫৫ থেকে ৬০ মণ হয়ে থাকে। অন্য সব ধানের তুলনায় এ ধান মোটা, তবে পুষ্টিগুণ অনেক। এ চালের ভাত খেতেও সুস্বাদু।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মুনালিসা সুইটি গণমাধ্যমকে জানান, বেগুনি রঙের এই ধান বিদেশি নয়। এটা আমাদের দেশি জাতের ধান। আগে অন্যান্য জেলায় চাষ হয়েছে, এবার প্রথমবারের মতো শ্রীমঙ্গলে চাষ হচ্ছে। একজন চাষী পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেছেন। ফলন ভালো হলে উৎপাদিত ধানগুলো বীজ আকারে রাখা হবে। ধানক্ষেতটি নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এখন এর ফলন কী রকম হবে, তা জানতে ধান কাটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে এই ধান বোরো মৌসুমের জাত।