
শিশু-বৃদ্ধ দেখলেও ছিল গু’লির নির্দেশ, একাই ৩০ জনকে হ’ত্যা!
রোহিঙ্গা নি’র্যাতনের নানা চিত্র বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক বহু গণমাধ্যম নি’র্যাতিত রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে। মিয়ানমার সরকার স্বীকার না করলেও, রোহিঙ্গাদের বর্ণনায় স্পষ্ট হয়েছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রকাশ্য হস্তক্ষেপেই ঘটেছে গ’ণহ’ত্যা।
তবে মিয়ানমারের সেনা কর্তৃপক্ষ বা হ’ত্যায’জ্ঞে অংশ নেয়া কারো মুখ থেকে ঘটনার বর্ণনা ইতিপূর্বে পাওয়া যায়নি। এবার সেই বর্ণনাও পাওয়া গিয়েছি।
মিয়ানমার থেকে দুই সেনাসদস্য পালিয়ে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। এই দুই সেনাসদস্য সরাসরি হ’ত্যাকা’ণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন বলে নিজেরা দাবি করেছেন। তারা হলেন, ৩০ বছরের জাও নাইং তুন এবং ৩৩ বছরের মিও উইন তুন
মিয়ানমারের সেনাসদস্য জো নাইং তুন বলেন, তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশনা ছিল: ‘শিশু বা প্রাপ্তবয়স্ক-যাকেই দেখবে, মেরে ফেলবে।’ এ ক্ষেত্রে শিশু থেকে বৃদ্ধ—কেউ যেন বাদ না যায়, সে কথাও বলা হয়েছিল তাঁদের। এমনকি কোনো শব্দ পেলে সেদিকেও গু’লির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্ক টাইমস এবং কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন-সিবিসি ও একটি মানবাধিকার সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে। মিও উইন তুন বলেছেন, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রাখাইনের একটি রোহিঙ্গা গ্রামে তিনি অভিযানে গিয়েছিলেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ ছিল, ‘যা দেখবে, যা শুনবে—সবকিছুতেই গু’লি কর।’
উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এই নির্দেশ তিনি পালন করেছিলেন। ওই সময় ৩০ জন রোহিঙ্গা মুসলিমকে হ’ত্যায় তিনি অংশ নিয়েছিলেন এবং হ’ত্যার পর সামরিক ঘাঁটির কাছাকাছি এক গণকবরে মাটিচাপা দেওয়া হয়।
ঠিক একই সময়ে পাশের আরেকটি উপশহরে জো নাইং তুন নামের আরেক সেনাসদস্য একই কাজ করছিলেন। তিনিও পেয়েছিলেন একই ধরনের নির্দেশনা। জো নাইং তুন বলেন, তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশনা ছিল: ‘শিশু বা প্রাপ্তবয়স্ক-যাকেই দেখবে, মে’রে ফেলবে।’
জো নাইং তুন আদালতকে আরও জানিয়েছেন, ‘আমরা সেদিন প্রায় ২০টি গ্রাম ছারখার করেছিলাম। হ’ত্যার পর লাশ’গুলো গ’ণকবরে পুঁ’তে ফেলা হয়।’ তবে, কীভাবে এবং কার তত্ত্বাবধায়নে তারা হেগে পৌঁছালো-বিষয়গুলো নিশ্চিতভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
এই দুই সেনা সদস্য আরকান আর্মির হাতে বন্দি হয়েছিলেন বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ বিষয়ে খিন থু খা নামের আরাকান আর্মির এক মুখপাত্র বলেন, দুই ব্যক্তিকে সেনা বাহিনী থেকে বাদ দেয়া হয়, তাদের যুদ্ধবন্দি হিসেবে আ’টক করা হয়নি। তবে তারা এখন কোথায় আছে তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
২০১৭ সালে একটি পুলিশ চৌকিতে হা’মলার জেরে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর গ’ণহ’ত্যা চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে দেশটির সেনাবাহিনীর বি’রুদ্ধে। সেই সময় বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন লাখ লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারাধীন।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কর্তৃক হ’ত্যা, ধ’র্ষণ, বাড়িঘরে অ’গ্নিকা’ণ্ডের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিক থেকে পরবর্তী কয়েক মাস ধরে প্রায় দশ লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে ৭০’র দশক থেকে শুরু করে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা নানা সময়ে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
তবে সবচেয়ে বড় ঢল ছিল ২০১৭ সালে। কক্সবাজারের উখিয়াতে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির বিশ্বের সবচাইতে বড় শরণার্থী শিবির। উখিয়াতে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা স্থানীয় জনগোষ্ঠীকেও ছাড়িয়ে গেছে।